মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ
‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় এর চরিত্র আলোচনা কর
মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ |
👉 ভূমিকা :
সমাজ সচেতন কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ছোটগল্প ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’। ১৯৪৩ সালের ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তিনি রচনা করেছেন এই গল্প। গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দিয়ে এঁকেছেন একের পর এক দৃশ্যপট। এই দৃশ্যপটগুলো বিশ্লেষণ করলেই ধরা পড়ে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ।
👉 মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র
👉 মানব দরদী মন :
শহর কলকাতায় অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎই একদিন মৃত্যুঞ্জয় ‘অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য’ প্রত্যক্ষ করে। মানুষের এই মৃত্যুবরণ তার দরদি মনের গভীরে তৈরি করে অপূরণীয় ক্ষত। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে।
👉 পরোপকারী ইচ্ছা শক্তি :
এদিকে, কীভাবে এই মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা যাবে, সেই ভাবনায় তার হৃদয়মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে, খাওয়া-ঘুম ছুটে যায়। সিদ্ধান্ত নেয়, নিজের সর্বস্ব দিয়ে এই মৃত্যুর বিরুদ্ধে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
👉 আবেগপ্রবণ :
মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হতে থাকে, এই মৃত্যুর জন্য সেও দায়ী। কেননা, অসহায় এই মানুষগুলোর জন্য তারও কিছু করণীয় রয়েছে, যা সে কখনোই করেনি। ফলে তার আবেগি মনের মধ্যে তৈরি হয় এক ধরণের অপরাধবোধ।
👉 কর্তব্যবোধের অধিকারী :
এই অপরাধবোধই মৃত্যুঞ্জয়কে প্ররোচিত করে এই সিদ্ধান্ত নিতে যে, নিজের সর্বস্ব দিয়ে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো তার কর্তব্য। কর্তব্যবোধের এই তাগিদ থেকেই সে প্রথমে একবেলা খাওয়া বন্ধ করে, পরে একসময় মাস মাইনের পুরো টাকাটাই রিলিফ ফান্ডে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
👉 বৈষয়িক ভাবনায় দুর্বলতা :
এই সিদ্ধান্তের ফলেই তৈরি হয় পরিবারের প্রতি তার গভীর উদাসীনতার দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে তারমধ্যে রয়েছে নিরন্ন মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করার প্রবল ইচ্ছা। মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের এই বৈপরীত্য প্রমাণ করে তার বৈষয়িক ভাবনায় দুর্বলতার কথা।
👉 মানসিক শক্তির অভাব :
এক সময়, মরুভূমির বুকে এক ফোটা বৃষ্টির মত তার সমস্ত আত্মত্যাগ মূল্যহীন হয়ে ওঠে। তার মধ্যে চেপে বসে ব্যর্থতার গ্লানি। এরই পরিণতিতে মৃত্যুঞ্জয় একসময় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এবং অন্নহীন মানুষের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
👉 উপসংহার :
আসলে মৃত্যুঞ্জয় একজন আবেগপ্রবণ ও অনুভূতিশীল মানবদরদী মানুষ। মানুষের মৃত্যু তাকে ব্যথিত করে, জীবন করে উল্লাসিত। শ্রেণিহীন ও শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজের পূজারী মৃত্যুঞ্জয়ের ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’ - ছিল তার জীবন দর্শন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন