নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ
নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ |
'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্প অবলম্বনে নিখিল চরিত্রের বিশ্লেষণ করো।
সূচনা :
মার্কসবাদী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে নিখিল একজন সহযোগী চরিত্র। সম্পর্কে কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু। কথকের বর্ণনায় সে একজন ‘রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু অলস প্রকৃতির লোক’।
বন্ধু বৎসল মানুষ :
তবে নিখিল অত্যন্ত বন্ধুবৎসল মানুষ। তাই সে মৃত্যুঞ্জয়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে তার ভাবনায় অসঙ্গতি কোথায়। শুধু তাই নয়, নানাভাবে সে মৃত্যুঞ্জয় ও তার পরিবারের পাশে থাকে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
আন্তরিক ও মানবিক :
নিখিল আবেগ অনুভূতিহীন মানুষ নয়। নিরন্ন মানুষের অসহায় মৃত্যু এবং কিছু না করতে পারার যন্ত্রণায় যখন মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করে ওঠে, তখন নিখিলের মনটাও খারাপ হয়ে যায়। মানুষের প্রতি আন্তরিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের কারণেই সে প্রতি মাসে তিন জায়গায় নিয়মিত অর্থ সাহায্যও পাঠায়।
যুক্তিবাদী চিন্তা:
তবে নিখিল অত্যন্ত যুক্তিবাদী। সে জানে, রিলিফ মানে আসলে একজনের বদলে আরেকজনকে খাওয়ানো। এতে মূল সমস্যার সমাধান হয় না। তার যুক্তিবাদী চিন্তা ভিক্ষা দেওয়াকে অস্বাভাবিক পাপ বলে মনে করে। জীবনধারণের অন্নে মানুষের যে দাবি, তা এতে ন্যায্যতা পায় না। মধুর আধ্যাত্বিক নীতির মোড়কে রিলিফের নামে যা করা হয়, নিখিলের ব্যাখ্যায়, তা আসলে অনিয়ম।
বাস্তববাদী মন :
নিখিল স্পষ্টই বোঝে এবং মানেও যে, এই সময় ভুরিভোজনটা অন্যায় ঠিক কিন্তু না খেয়ে মরাটাও উচিত নয়। এ কারণেই সে বেঁচে থাকতে যতটুকু দরকার, সেটুকুই খায়।
সমাজ বিপ্লবে বিশ্বাস :
নিখিল বিশ্বাস করে দশ জনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ। মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে নিখিলের এই ভাবনা ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’। নিখিলের ব্যাখ্যা হল, এই স্বার্থপরতা যদি নিরন্ন মানুষগুলোকে শেখানো যেত, তবে অন্ন থাকতে এই বাংলায় কেউ না খেয়ে মরত না। মজুতদারের কাছ থেকে সে অন্ন তারা বের করে আনত; নিখিলের কথায়, ‘সে অন্ন হাজার মাইল দূরেই থাক, আর একত্রিশটা তালা লাগানো কোন গুদামেই থাক’।
উপসংহার :
সুতরাং নিখিল একজন বাস্তববাদী ও হৃদয়বান মানুষ। বন্ধু বৎসল্য তার সহজাত। সমাজ বদলের ‘প্রাচীন ও সবচেয়ে পচা ঐতিহ্য ও আদর্শবাদে’ নয়, নতুন ভাবনায় সে জারিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন