সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ

নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান,
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান্

— অতুল প্রসাদ সেন 

ভূমিকা :

জাতীয় সংহতি হল একটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি সাধারণ পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা। এর অর্থ হল, আমাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও, আমরা এই সত্যকে স্বীকার করি যে, আমরা সবাই এক। এটি কেবল একটি জাতীয় অনুভূতি নয়, এটা সেই চেতনা যা সমস্ত উপভাষা ও বিশ্বাসের মানুষকে একই প্রচেষ্টায় একত্রিত করে।

জাতীয় একীকরণের সংজ্ঞা:

  • ডাঃ এস. রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, national integration cannot be made by bricks and mortar, mould and hammer, but it quietly grows in people’s minds through education.1️⃣
  • এইচ এ গণি সংজ্ঞায়িত করেছেন, “National integration is a socio-psychological and educational process through which a feeling of unity and harmony develops in the hearts of the people and a sense of common citizenship or feeling of loyalty to the nation is fostered among them”2️⃣
এককথায়, জাতীয় সংহতির ধারণার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক মাত্রা এবং তাদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক।

বিচ্ছিন্নতাবাদ :

বিচ্ছিন্নতাবাদ হল বৃহত্তর গোষ্ঠী থেকে সাংস্কৃতিক, জাতিগত, উপজাতিগত, ধর্মীয়, সরকারী বা লৈঙ্গিক বিচ্ছিন্নতার জন্য ক্ষুদ্রতর বা উপেক্ষিত গোষ্ঠীর সমর্থিত জনমত। বিচ্ছিন্নতাবাদ বলতে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকে বোঝায়। স্বায়ত্তশাসন চাওয়া গোষ্ঠীগুলো সাধারণত বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়।

জাতীয় সংহতির লক্ষ্য :

ভারতের মতো একটি দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা এবং বর্ণের মানুষ রয়েছে। তাই জাতীয় সংহতির লক্ষ্য :
  1. কেবল তাদের একত্রে আবদ্ধ করা নয় বরং তাদের বেঁচে থাকার এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি ভাল পরিবেশ তৈরি করা ।
  2. দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে  সহায়তা করা।
  3. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি লালন এবং বর্ণবাদ, আঞ্চলিকতা ও ভাষাগত পার্থক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
  4. জাতির প্রতি আনুগত্যের অনুভূতি উন্নত করা এবং জরুরী পরিস্থিতিতে জনগণকে একত্রিত হওয়ার মানসিকতা বাড়ানো।
  5. জাতীয় অখণ্ডতা সমাজের সকল শ্রেণির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা, যা তাদেরকে আর্থিকভাবে স্বাধীন করে তোলে।
  6. এর মাধ্যমে, রাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্থনৈতিক একীকরণকে উন্নীত করার।
প্রকৃত অর্থে ঐক্যবদ্ধ জাতির মেরুদন্ড ভাঙতে পারে না কোনো বিদেশি শক্তি। 

জাতীয় সংহতির গুরুত্ব :

জাতীয় সংহতি একটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি নিম্নলিখিত উপায়ে দেশকে সাহায্য করে:

1) সামাজিক সম্প্রীতি প্রচার করে :

জাতীয় সংহতির কারণে, দেশে মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়, যার ফলে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, শান্তি ও সহনশীলতা বাড়ে।

2) জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে :

এটি একটি ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্ম বা চিন্তাধারার মানুষকে একত্রিত করে এবং দেশকে একক সত্তায় পরিণত করে, যার ফলে দেশকে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে।

3) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ায় :

এভাবে দেশ শক্তিশালী হলে অভ্যন্তরীণ সমস্যা কমে যায়, তাই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়। দেশ সমৃদ্ধ হয়।

4) জাতির প্রতি আনুগত্য প্রচার করে :

জাতীয় সংহতি দেশের প্রতি নাগরিকের আনুগত্যকে সমর্থন করে। এটি মানুষকে তাদের ক্ষুদ্র সমস্যাগুলি ভুলে দেশের অগ্রগতির জন্য হাত মেলাতে এবং দাঁড়াতে সহায়তা করে।

জাতীয় সংহতির বাধা (বিচ্ছিন্নতাবাদের কারণ):

1. জাতিবাদ :

ভারতে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের জনসংখ্যার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। উপযুক্ত বর্ণ বা ধর্মের অনুসারীরা নিজেদেরকে অন্য ধর্ম বা বর্ণে বিশ্বাসীদের থেকে উচ্চতর মনে করে। এসব পক্ষপাতিত্ব এতই কুৎসিত ও সংকীর্ণ যে মানুষ জাতীয় স্বার্থের কথা ভাবতেও অক্ষম।

2. সাম্প্রদায়িকতা :

আমাদের দেশের মানুষ বিভিন্ন ধর্ম অনুসরণ করে। কখনও কখনও  এদের পরস্পর বিরোধী ক্ষুদ্র স্বার্থ পারস্পরিক শত্রুতা এবং ঘৃণার অনুভূতি তৈরি করে, যা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের দিকে পরিচালিত করে। এতে জাতীয় ঐক্য ক্ষুণ্ণ হয়।

3) ভাষাগত সমস্যা :

ভাষার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান ঝোঁক রয়েছে পৃথিবীব্যাপী। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হলে রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা বাড়ায়।

4. রাজনৈতিক দলগুলি :

গণতন্ত্রে দেশের সংহতি রক্ষায় জনমত ও রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক দল আছে যারা জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠী এবং অঞ্চলের ভিত্তিতে ভোটের পেছনে ছুটছে, জনসাধারণ ও জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে।

5. অর্থনৈতিক বৈষম্য :

আমাদের দেশে ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য রয়েছে। দেশের কিছু মানুষ ধনী, আবার অধিকাংশই দরিদ্র। জাতীয় সংহতি ও একীকরণের ক্ষেত্রে এই অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্য একটি বড় সমস্যা।

এই সব বিষয়গুলো সঠিক ও যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করতে না পারলে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

বিচ্ছিন্নতাবাদ দূর করার উপায় :

এককথায় বিচ্ছিন্নতাবাদে উৎসাহিত করে এমন এলিমেন্টগুলকে জাতীয় জীবন থেকে তুলে ফেলা দরকার। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, দেশ থেকে অর্থনৈতিক বৈষম্য মুছে ফেলা। তাই শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং সকল মৌলিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার সমান প্রবেশাধিকার দিয়ে দেশের নাগরিকদের মধ্যে অখণ্ডতার বোধ জাগিয়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।

জাতীয় সংহতিতে শিক্ষার ভূমিকা কী?

শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধারণা পরিবর্তন করে। দেশের ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশে স্কুল প্রশিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রায়শই বিভিন্ন কলেজে আরও শিক্ষা অর্জনের জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়। ফলে তরুণ মন তাদের এলাকা, বর্ণ এবং ধর্মের বাইরে চিন্তা করতে সক্ষম হয়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, এবং ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সারা দেশে অল্প সময়ের মধ্যেই একটি প্যান-ভারতীয় মানসিকতা অর্জন করতে সাহায্য করে, যেকোনো সাংস্কৃতিক বা জাতিগত সীমানা অতিক্রম করে। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেছেন, "সবার জন্য উপলব্ধ সঠিক শিক্ষাই আমাদের বেশিরভাগ রোগের প্রাথমিক সমাধান।. দুর্ভাগ্যবশত, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের ছাত্র-ছাত্রী তালিকাভুক্তির হার খুবই কম। 3️⃣ 

উপসংহার:

ভারত হল বিশাল ভৌগলিক বৈচিত্র্যের দেশ, যেখানে বহু ধর্ম, বর্ণ, উপজাতি এবং সম্প্রদায়ের বসবাস। তাই সহনশীলতা এখানে শক্তি, আর ধর্মনিরপেক্ষতা আমার আত্মা মানতে হবে। আশার কথা, সহনশীলতা এবং অন্যের মতামত ও চিন্তার প্রতি শ্রদ্ধার একটি গর্বিত উত্তরাধিকার রয়েছে আমাদের। তাই সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের জনগণকে নিতে হবে এবং দেশকে শান্তিপূর্ণ করার চেষ্টা করতে হবে। অবশেষে সংবিধান ও প্রতিষ্ঠানের অখণ্ডতা বজায় রাখা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং গণমাধ্যমের দায়িত্ব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচার সপ্তাহ (নভেম্বর ২৫-২৯) জাতীয় অখণ্ডতা প্রচারের জন্য প্রতি বছর পালন করতে হবে।
----------xx---------

🧿 মনে রাখার মত প্রয়োজনীয় তথ্য :

1️⃣ “জাতীয় সংহতি ইট চুন বালি ও জল মিশাইয়া , ছাঁচ এবং হাতুড়ি দ্বারা করা যায় না, তবে এটি শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মনে শান্তভাবে বৃদ্ধি পায়।”
2️⃣ "জাতীয় সংহতি হল একটি সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক এবং শিক্ষাগত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জনগণের হৃদয়ে ঐক্য ও সম্প্রীতির অনুভূতি গড়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যে সাধারণ নাগরিকত্ব বা জাতির প্রতি আনুগত্যের অনুভূতি গড়ে ওঠে"।
3️⃣ আমাদের জনসংখ্যার মাত্র ১২-১৩ শতাংশের উচ্চ শিক্ষার অ্যাক্সেস রয়েছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এটি প্রায় ৮৭ শতাংশ, ইউরোপে, এটি তার চেয়ে বেশি। ৫০ শতাংশ, এবং চীনে, এটি প্রায় ২৫ শতাংশ।

🔴 মহান আদর্শবাদী এবং লেখক মাইরন ওয়েইনার বলেছেন, “National integration implies the avoidance of divisive movements that will balance the presence of attitudes in the nation and society that distinguish national and public interest from parochial interest”.

"জাতীয় সংহতি বলতে বিভক্ত আন্দোলন পরিহার করা বোঝায় যা জাতি ও সমাজে এমন মনোভাবের উপস্থিতির ভারসাম্য বজায় রাখে যা জাতীয় ও জনস্বার্থকে সংকীর্ণ স্বার্থ থেকে আলাদা করে"।

🔴 মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী এবং শ্রমিক শ্রেণীর অবদান
এটি মনে রাখা অত্যাবশ্যক যে এই শ্রেণীর কোনটিই একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যবিত্ত হল একটি অত্যন্ত ভ্রাম্যমাণ সমাজ যা ব্যবসা, স্কুল বা চাকরির সুযোগের জন্য নিয়মিতভাবে রাজ্য জুড়ে চলে। অনেক সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক উত্সের লোকেরা দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, পুনে এবং কলকাতা সহ অন্যান্য শহরে বসতি স্থাপন করেছে এবং এই শহরগুলিকে তাদের বাড়ি বানিয়েছে। মধ্যবিত্তের এই অংশটি সহজেই ভারতের ধারণার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। শুধুমাত্র মুম্বাইতেই, একজন সারা ভারত থেকে ব্যক্তিদের দেখতে পারেন, তাদের অনেকেই সেখানে এসেছেন আরও ভালো সম্ভাবনার সন্ধানে। যদিও ছোট শহর থেকে বড় শহরে স্থানান্তরিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে একটিকে "বহিরাগত" হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়৷ অন্যদিকে তাদের থাকার এবং বাধাগুলি অতিক্রম করার ইচ্ছা, ভারতের ধারণার প্রতি তাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে৷ একই কথা বলা যেতে পারে শ্রমিক শ্রেণী সম্পর্কে। একইভাবে, বুদ্ধিজীবীরা, তাদের উদার চরিত্রের দ্বারা, নিজেদের জাত, শ্রেণী, ধর্ম বা অবস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না। তারা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যবোধের ধারণার বিরোধিতা করে এবং পরিবর্তে মানুষ ও মানবতার সহযোগিতামূলক উন্নতির জন্য কাজ করে। অধিকার ও ঐক্যের চেতনার উত্থানের পর থেকে, জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম বা অবস্থান নির্বিশেষে জনগণের সৃজনশীল অভিব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সমগ্র বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় কথা বলেছে এমন বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে। এটি একীভূত ভারতের মধ্যে বিভিন্ন অভিব্যক্তির জন্য জায়গা তৈরি করে।

মন্তব্যসমূহ

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি - সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

প্রবন্ধ রচনা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে একজন মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। শিক্ষাজীবন : মধুসূদন দত্ত শিক্ষা গ্রহণ পর্ব শুরু হয় মায়ের তত্ত্বাবধানে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায়। পরে সাত বছর বয়সে কলকাতা আসেন এবং খিদিরপুর স্কুলে দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।  এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী জীবনে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে।  এই উদ্দেশ্যেই ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি খ্রিস্ট...

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি । প্রশ্ন ও উত্তর

বাংলা বই - দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চমাধ্যমিক 'বাংলা বই'য়ে👨তোমাকে স্বাগত 💁 তোমার প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরটি পেতে ওপরের মেনু বারের বিষয় মেনুতে ক্লিক করো । গল্পের প্রশ্ন চাইলে ‘ গল্পের  প্রশ্ন’  ট্যাবে , কবিতার প্রশ্ন চাইলে ‘ কবিতার প্রশ্ন’ ট্যাবে ক্লিক করো ।  এভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ের  ট্যাবে  ক্লিক করে প্রশ্নের পাতায় যাও। সেখানে দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রশ্ন ও উত্তর খোঁজ। অথবা নিচের প্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক করো। সকলের জন্য শুভকামনা রইল। বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো। ১)  দ্বাদশ শ্রেণির গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ২)  দ্বাদশ শ্রেণির কবিতা 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৩)  দ্বাদশ শ্রেণির নাটক 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৪)  আন্তরজাতিক কবিতা ও ভারতীয় গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৫)  দ্বাদশ শ্রেণির পূর্নাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ  👉  প্রশ্ন ও উত্তর ৬)  দ্বাদশ শ্রেণির শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৭)  দ্বাদশ শ্রেণির ভাষা বিভাগ 👉   প্রশ্ন ও উত্তর   ৮)  দ্বাদ...

বাংলার ঋতুরঙ্গ বা বাংলা ঋতু বৈচিত্র্য

 বাংলার ঋতুরঙ্গ বা ঋতু বৈচিত্র্য বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। — জীবনানন্দ দাস ভূমিকা : ঋতুবৈচিত্র্যের বর্ণিল উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিপূর্ণ। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই বাংলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর বৈচিত্র্যময় ঋতুরূপ। ভিন্ন ভিন্ন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে পর্যায়ক্রমে ছয়টি ঋতু ঘুরে ফিরে আসে এই বাংলায়। প্রতিটি ঋতুই স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে অপরূপা। বাংলা প্রকৃতির এই অপরূপ রূপে মুগ্ধ হয়ে জীবনানন্দ দাশ একে ‘ রূপসী বাংলা ’ বলে অভিহিত করেছেন। ঋতু বৈচিত্রের কারণ : বাংলাদেশ  কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়াতে তাই নিরক্ষীয় প্রভাব দেখা যায়। এখানেই রয়েছে বাংলার ঋতু বৈচিত্রের মূল চাবিকাঠি।  নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত এখানে হালকা শীত অনুভূত হয়। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল চলে। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। ছয় ঋতুর ‘রূপসী বাংলা’ : বাংলার এই ছটি ঋতু যেন বিনি সুতোয় গাঁথা মালার মতো। এই মেলায় পর পর গাঁথা আছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও ঋতুরাজ বসন্ত। প্রতি ...

কবিতা 'মহুয়ার দেশ' - কবি সমর সেন

কবিতা : মহুয়ার দেশ কবিতা : 'মহুয়ার দেশ কবি : সমর সেন ১ মাঝে মাঝে সন্ধার জলস্রোতে পলাশ সূর্য দেয় এঁকে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ, আর আগুন লাগে জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায়। সেই উজ্জ্বল স্তব্ধতায় ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে শীতের দুঃস্বপ্নের মতো। অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ, সমস্তক্ষণ সেখানে পথের দুধারে ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য, আর দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে। আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল নামুক মহুয়ার গন্ধ।                                             ২                                             এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে                                    ...

রচনা : মৃণাল সেন

প্রবন্ধ রচনা : মৃণাল সেন ভূমিকা : মৃণাল সেন ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে এক বন্ধনীতে উচ্চারিত হতো তার নামও। জন্ম ও শিক্ষাজীবন :  মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম । এখানেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। এর পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাথমিক কর্ম :  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি সাংবাদিকতা, ওষুধ বিপণনকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন। চল্লিশের দশকে মৃণাল সেন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসেবেও কাজ শুরু করেন। রাজনৈতিক দর্শন :  আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী মৃণাল সেন দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসেবে ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য হন। ছবি পরিচালনা : বাংলা, ওড়ইয়আ, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র পরিচালনা করে তিনি বহুভাষিক চিত্র পরিচালক হিসেবে খ্যাতি...

প্রবন্ধ : ভগিনী নিবেদিতা

ভগিনী নিবেদিতা ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে ভগিনী নিবেদিতার নাম। পৈত্রিক সূত্রে তিনি ছিলেন স্কচ। আধুনিক ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী ও ধর্মনেতা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভারতবর্ষে আসেন। ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা নেন। ভারতে সমাজ সেবা ও নারী শিক্ষার প্রসারেও নিবেদিতার ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জন্ম ও বংশ পরিচয় : ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল ছিলেন ধর্মযাজক। মায়ের নাম মেরি ইসাবেলা। মাত্র দশ বছর বয়সে মার্গারেটের বাবা মারা যান। তারপর তাঁর দাদামশাই তথা আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী হ্যামিলটন তাঁকে লালনপালন করেন। শিক্ষাজীবন : মার্গারেট লন্ডনের চার্চ বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর হ্যালিফ্যাক্স কলেজে তিনি ও তাঁর বোন মেরি পড়াশোনা করেছিলেন। কর্মজীবন : ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে, সতেরো বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে মার্গারেট শিক্ষিকার পেশা গ্রহণ করেন। দু’বছরের জন্যে কেসউইকের একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ান। এরপরে একে ...

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার : ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক ছোটগল্প হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটি কতটা সার্থক হয়েছে আলোচনা করো। ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক 👉 ভূমিকা : ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্ত সহজ সরল, ........ অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। কথাগুলো বলেছিলেন বাংলা ছোটগল্পের সার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিতার ছন্দে বলা এই অংশতেই রয়েছে সার্থক ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যে র যথাযথ বিবরণ। এডগার অ্যালান পো -এর মতে, যে গল্প অর্ধ থেকে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে। ছোটগল্পে জীবনের সামগ্রিক দিকটি উপন্যাসের মতো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত না হয়ে, তার খণ্ডাংশ নিয়ে পরিবেশিত হয়। এজন্য ছোটগল্প যথাসম্ভব বাহুল্যবর্জিত, রসঘন ও নিবিড় হয়ে থাকে। সংগত কারণেই এতে চরিত্রের সংখ্যা হয় খুবই সীমিত। ছোটগল্পের প্রারম্ভ ও প্রাক্কাল সাধারণত এবং খানিকটা নাটকীয়ভাবেই শুরু হয়। 👉   ছোটগল্পের বৈশ...

নানা রঙের দিন’ নাটকে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র

‘নানা রঙের দিন’ নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো। নানা রঙের দিন’ নাটকে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র অথবা, ‘ নানা রঙের দিন’ নাটকে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের যে নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্বের ছবি ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো। ভূমিকা : রুশ নাট্যকর অন্তন চেখভে র ‘ সোয়ান সং’ একাঙ্ক নাটক অবলম্বনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেন ‘ নানা রঙের দিন ’ নাটকটি। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় একজন আটষট্টি বছরের প্রবীণ অভিনেতা। নাটকটিতে দর্শকশণ্য অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে কখনো একা, আবার কখনো প্রম্পটার কালীনাথ সেনের সঙ্গে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রজনীকান্ত যে কথাবার্তা বলেছেন তা থেকেই তার চরিত্রের দুটি দিক উন্মোচিত হয়েছে। একটি ব্যক্তির রজনীকান্ত, অন্যটি অভিনেতা রজনীকান্ত। ব্যক্তি রজনীকান্তের চরিত্র : ১) অভিনয় ছিল নেশার বস্ত : ব্যক্তির রজনীকান্ত পারিবারিক সূত্রে রাঢ়বাংলার একজন ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। যৌবন বেলায় অভিনয় ছিল তার নেশার বিষয়। এই নেশার টানেই তিনি পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ২) ব্যক্তিগত জীবন উপেক্ষিত : এই অভিনয়ের টানে তিনি তার ব্যক্তিগত জীব...

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে / এখন যদি না-থাকি

৩) “ক্রন্দনরতা জননীর পাশে / এখন যদি না-থাকি” ক্রন্দনরতা জননীর পাশে / এখন যদি না-থাকি “ক্রন্দনরতা জননীর পাশে / এখন যদি না-থাকি” ক) ‘এখন’ বলতে কোন সময়ের কথা বোঝানো হয়েছে? খ) সেই সময় জননী ক্রন্দনরতা কেন? গ) কবি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে চেয়েছেন কেন? ক) ‘এখন’ বলতে কোন সময়ের কথা বোঝানো হয়েছে? কবি মৃদুল দাশগুপ্তের লেখা ‘ ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ’ নামক কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় তিনি দেখিয়েছেন, রাজনৈতিক হানাহানিতে সমাজে নেমে আসছে গভীর অবক্ষয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের যে মানবিক সম্পর্ক তা মুছে যাচ্ছে। সমাজ হিংসা ও প্রতিহিংসার ভয়ংকর রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। মানুষ ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সম্প্রীতিবোধ-সহ সমস্ত মানবীয় মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে। বর্তমান শতকের প্রথম দশকে শিল্পের জন্য জমি অধিকরণকে কেন্দ্র করে এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এই বাংলায়। কবি মৃদুল দাশগুপ্ত এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সময়কালকে ‘ এখন’ বলে উল্লেখ করেছেন খ) সেই সময় জননী ক্রন্দনরতা কেন? কবি লক্ষ্য করেন, এই সময়ে, সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে এবং সেই ...