সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

প্রবন্ধ রচনা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ভূমিকা:

মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে একজন মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী।

শিক্ষাজীবন :

মধুসূদন দত্ত শিক্ষা গ্রহণ পর্ব শুরু হয় মায়ের তত্ত্বাবধানে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায়। পরে সাত বছর বয়সে কলকাতা আসেন এবং খিদিরপুর স্কুলে দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন। 

এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী জীবনে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে। 

এই উদ্দেশ্যেই ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তখন থেকে তাঁর নামের পূর্বে ‘মাইকেল’ শব্দটি যুক্ত হয়। কিন্তু হিন্দু কলেজে খ্রিস্টানদের অধ্যয়ন নিষিদ্ধ থাকায় মধুসূদন কলেজ ত্যাগ করতে হন। তাই ১৮৪৪ সালে তিনি বিশপ্স কলেজে ভর্তি হন। এখানে তিনি ইংরেজি ছাড়াও গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখার সুযোগ পান।

কর্মজীবন :

শিক্ষক মধুসূদন :

এ সময় ধর্মান্তরের কারণে মধুসূদন তাঁর আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাঁর পিতাও এক সময় অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেন। অগত্যা মধুসূদন ভাগ্যান্বেষণে ১৮৪৮ সালে মাদ্রাজে যান। সেখানে প্রথমে মাদ্রাজ মেইল অরফ্যান অ্যাসাইলাম স্কুলে (১৮৪৮-১৮৫২) এবং পরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষকতা (১৮৫২-১৮৫৬) করেন।

কেরানি ও দোভাষী মধুসূদন :

এরমধ্যে মধুসূদনের পিতামাতা উভয়ের মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী হেনরিয়েটাকে নিয়ে ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা আসেন। সেখানে তিনি প্রথমে পুলিশ কোর্টের কেরানি এবং পরে দোভাষীর কাজ করেন। এ সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেও তিনি প্রচুর অর্থোপার্জন করেন।

আইন ব্যবসায়ী মধুসূদন :

১৮৬৬ সালে গ্রেজ-ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৮৬৭ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। কিন্তু অমিতব্যয়িতার কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অমিতব্যয়িতার ব্যাপারটি ছিল তাঁর স্বভাবগত। একই কারণে তিনি বিদেশে অবস্থানকালেও একবার বিপদগ্রস্ত হয়েছিলেন এবং বিদ্যাসাগরের আনুকূল্যে সেবার উদ্ধার পান। ১৮৭২ সালে মধুসূদন কিছুদিন পঞ্চকোটের রাজা নীলমণি সিংহ দেও-এর ম্যানেজার ছিলেন।

সাহিত্য কর্ম :

কবি হিসাবে মধুসূদন :

হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালেই মধুসূদনের প্রতিভার বিকাশ ঘটে।তখন তাঁর কবিতা জ্ঞানান্বেষণ, Bengal Spectator, Literary Gleamer, Calcutta Library Gazette, Literary Blossom, Comet প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। 

সাংবাদিক ও সম্পাদক মধুসূদন :

মাদ্রাজের থাকাকালীন তিনি সাংবাদিক ও কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি Eurasion (পরে Eastern Guardian), Madras Circulator and General Chronicle ও Hindu Chronicle পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং Madras Spectator-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন (১৮৪৮-১৮৫৬)। মাদ্রাজে অবস্থানকালেই Timothy Penpoem ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ The Captive Ladie (১৮৪৮) এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ Visions of the Past প্রকাশিত হয়। মাদ্রাজে বসেই তিনি হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান, তামিল ও তেলেগু ভাষা শিক্ষা করেন।

নাট্যকার মধুসূদন :

কলকাতায় ফিরে এলে তাঁর বন্ধুবান্ধবরা তাঁকে বাংলায় সাহিত্যচর্চা করতে অনুরোধ জানান এবং তিনি নিজেও ভেতর থেকে এরূপ একটি তাগিদ অনুভব করেন। রামনারায়ণ তর্করত্নের রত্নাবলী (১৮৫৮) নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব অনুভব করেন এবং বেলগাছিয়া থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। মহাভারতের দেবযানী-যযাতি কাহিনী অবলম্বনে ১৮৫৮ সালে পাশ্চাত্য রীতিতে রচনা করেন শর্মিষ্ঠা নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক এবং একই অর্থে মধুসূদনও বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাট্যকার।

প্রহসন রচনায় মধুসূদন :

পরের বছর মধুসূদন রচনা করেন দুটি প্রহসন: একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ। প্রথমটিতে তিনি ইংরেজি শিক্ষিত ইয়ং বেঙ্গলদের মাদকাসক্তি, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অনাচারকে কটাক্ষ করেন এবং দ্বিতীয়টিতে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের আচারসর্বস্ব ও নীতিভ্রষ্ট সমাজপতিদের গোপন লাম্পট্য তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রেও মধুসূদন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর প্রহসন দুটি কাহিনী, সংলাপ ও চরিত্রসৃষ্টির দিক থেকে আজও অতুলনীয়।

মধুসূদনের সাহিত্যকীর্তি :

মধুসূদনের কৃতিত্ব এখানেই যে, তিনি যাকিছু রচনা করেছেন তাতেই নতুনত্ব এনেছেন। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ বাংলা সাহিত্যে সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন। ১৮৬০ সালে তিনি গ্রিক পুরাণ থেকে কাহিনী নিয়ে রচনা করেন পদ্মাবতী নাটক। এ নাটকেই তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ইংরেজি কাব্যের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার বরেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার এটাই প্রথম এবং এর ফলে তিনি বাংলা কাব্যকে ছন্দের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। 

এই ছন্দে একই বছর তিনি রচনা করেন তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য। পরের বছর ১৮৬১ সালে রামায়ণের কাহিনী নিয়ে একই ছন্দে তিনি রচনা করেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি মেঘনাথবধ কাব্য। এটি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক মহাকাব্য। এই কাব্যের মাধ্যমেই তিনি মহাকবির মর্যাদা লাভ করেন এবং তাঁর নব আবিষ্কৃত অমিত্রাক্ষর ছন্দও বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। 

সাহিত্য ক্ষেত্রে নবজাগরণ:

রামায়ণে বর্ণিত অধর্মাচারী, অত্যাচারী ও পাপী রাবণকে একজন দেশপ্রেমিক, বীর যোদ্ধা ও বিশাল শক্তির আধাররূপে চিত্রিত করে মধুসূদন উনিশ শতকের বাঙালির নবজাগরণের শ্রেষ্ঠ কবির মর্যাদা লাভ করেন।

মধুসূদনের কাব্যে এক ধরনের নারীবিদ্রোহের সুর লক্ষ করা যায়। তাঁর কাব্যের নায়িকাদের মধ্য দিয়ে যেন যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, অবহেলিত, আত্ম সুখ-দুঃখ প্রকাশে অনভ্যস্ত ও ভীত ভারতীয় নারীরা হঠাৎ আত্মসচেতন হয়ে জেগে ওঠে। তাঁর বীরাঙ্গনা (১৮৬২), কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১) ও ব্রজাঙ্গনা (১৮৬১) গীতিকাব্যের নায়িকাদের দিকে তাকালে এ কথার সত্যতা উপলব্ধি করা যাবে। বাংলা সাহিত্যে মধুসূদনের আগে আর কারও রচনায় প্রত্যক্ষ করা যায় না।

এ পর্বে মধুসূদন দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং কিছুদিন হিন্দু প্যাট্রিয়ট (১৮৬২) পত্রিকা সম্পাদনা করেন। 

মধুসূদনের বিদেশ যাত্রা :

সনেট বা  চতুর্দশপদী মধুসূদন :

১৮৬২ সালের ৯জুন মধুসূদন ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে বিলেত যান। সেখান থেকে ১৮৬৩ সালে তিনি প্যারিস হয়ে ভার্সাই নগরীতে যান। ভার্সাইতে অবস্থানকালে তাঁর জীবনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। 
১) এখানে বসেই তিনি ইতালীয় কবি পেত্রার্কের অনুকরণে বাংলায় সনেট লিখতে শুরু করেন। বাংলা ভাষায় এটিও এক বিস্ময়কর নতুন সৃষ্টি। এর আগে বাংলা ভাষায় সনেটের প্রচলন ছিল না। 

২) দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ভার্সাই নগরীতে থেকেই তিনি যেন মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে নতুনভাবে এবং একান্ত আপনভাবে দেখতে ও বুঝতে পারেন, যার চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর ‘বঙ্গভাষা’, ‘কপোতাক্ষ নদ’ ইত্যাদি সনেটে। তাঁর এই সনেটগুলি ১৮৬৬ সালে চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী নামে প্রকাশিত হয়।


জীবনের এই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েও মধুসূদন কাব্যচর্চা অব্যাহত রাখেন। হোমারের ইলিয়াড অবলম্বনে ১৮৭১ সালে তিনি রচনা করেন হেক্টরবধ। তাঁর শেষ রচনা মায়াকানন (১৮৭৩) নাটক। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত তাঁর ১২টি গ্রন্থ এবং ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থ রয়েছে।

শেষ জীবন :

মধুসূদন দত্তের শেষজীবন অত্যন্ত দুঃখ-দারিদ্রে্যর মধ্যে কেটেছে। ঋণের দায়, অর্থাভাব, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা ইত্যাদি কারণে তাঁর জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। অবশেষে, ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বাংলার এই মহা কবি কপর্দকহীন অবস্থায় জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার :

মধুসূদন দত্ত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের যুগপ্রবর্তক কবি। তিনি তাঁর কাব্যের বিষয় সংগ্রহ করেছিলেন প্রধানত সংস্কৃত কাব্য থেকে, কিন্তু পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ অনুযায়ী সমকালীন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালির জীবনদর্শন ও রুচির উপযোগী করে তিনি তা কাব্যে রূপায়িত করেন এবং তার মধ্য দিয়েই বাংলা সাহিত্যে এক নবযুগের সূচনা হয়। [উনিশ শতকের বাঙালি নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ মধুসূদন তাঁর অনন্যসাধারণ প্রতিভার দ্বারা বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তি আবিষ্কার করে এই ভাষা ও সাহিত্যের যে উৎকর্ষ সাধন করেন।] ফলে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘মধুকবি’ নামে পরিচিত।


মন্তব্যসমূহ

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি - সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর

কবিতা 'মহুয়ার দেশ' - কবি সমর সেন

কবিতা : মহুয়ার দেশ কবিতা : 'মহুয়ার দেশ কবি : সমর সেন ১ মাঝে মাঝে সন্ধার জলস্রোতে পলাশ সূর্য দেয় এঁকে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ, আর আগুন লাগে জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায়। সেই উজ্জ্বল স্তব্ধতায় ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে শীতের দুঃস্বপ্নের মতো। অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ, সমস্তক্ষণ সেখানে পথের দুধারে ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য, আর দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে। আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল নামুক মহুয়ার গন্ধ।                                             ২                                             এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে                                    ...

প্রবন্ধ : ভগিনী নিবেদিতা

ভগিনী নিবেদিতা ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে ভগিনী নিবেদিতার নাম। পৈত্রিক সূত্রে তিনি ছিলেন স্কচ। আধুনিক ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী ও ধর্মনেতা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভারতবর্ষে আসেন। ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা নেন। ভারতে সমাজ সেবা ও নারী শিক্ষার প্রসারেও নিবেদিতার ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জন্ম ও বংশ পরিচয় : ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল ছিলেন ধর্মযাজক। মায়ের নাম মেরি ইসাবেলা। মাত্র দশ বছর বয়সে মার্গারেটের বাবা মারা যান। তারপর তাঁর দাদামশাই তথা আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী হ্যামিলটন তাঁকে লালনপালন করেন। শিক্ষাজীবন : মার্গারেট লন্ডনের চার্চ বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর হ্যালিফ্যাক্স কলেজে তিনি ও তাঁর বোন মেরি পড়াশোনা করেছিলেন। কর্মজীবন : ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে, সতেরো বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে মার্গারেট শিক্ষিকার পেশা গ্রহণ করেন। দু’বছরের জন্যে কেসউইকের একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ান। এরপরে একে ...

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি । প্রশ্ন ও উত্তর

বাংলা বই - দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চমাধ্যমিক 'বাংলা বই'য়ে👨তোমাকে স্বাগত 💁 তোমার প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরটি পেতে ওপরের মেনু বারের বিষয় মেনুতে ক্লিক করো । গল্পের প্রশ্ন চাইলে ‘ গল্পের  প্রশ্ন’  ট্যাবে , কবিতার প্রশ্ন চাইলে ‘ কবিতার প্রশ্ন’ ট্যাবে ক্লিক করো ।  এভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ের  ট্যাবে  ক্লিক করে প্রশ্নের পাতায় যাও। সেখানে দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রশ্ন ও উত্তর খোঁজ। অথবা নিচের প্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক করো। সকলের জন্য শুভকামনা রইল। বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো। ১)  দ্বাদশ শ্রেণির গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ২)  দ্বাদশ শ্রেণির কবিতা 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৩)  দ্বাদশ শ্রেণির নাটক 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৪)  আন্তরজাতিক কবিতা ও ভারতীয় গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৫)  দ্বাদশ শ্রেণির পূর্নাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ  👉  প্রশ্ন ও উত্তর ৬)  দ্বাদশ শ্রেণির শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৭)  দ্বাদশ শ্রেণির ভাষা বিভাগ 👉   প্রশ্ন ও উত্তর   ৮)  দ্বাদ...

নানা রঙের দিন নাটকের মঞ্চ সজ্জার বিবরণ ও নাটকটির নামকরণের সার্থকতা

‘নানা রঙের দিন’ নাটকের সূচনায় মঞ্চসজ্জার যে বর্ণনা আছে তা নিজের ভাষায় লেখো। নাটকটির নামকরণ কতখানি সার্থক তা আলোচনা করো। — ২০২০ নানা রঙের দিন নাটকের মঞ্চ সজ্জার বিবরণ ও নাটকটির নামকরণের সার্থকতা ভূমিকা : রুশ নাট্যকর অন্তন চেখভের ‘সোয়ান সং’ একাঙ্ক নাটক অবলম্বনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেন ‘নানা রঙের দিন’ নামক একটি নাটক। এই নাটকের শুরুতে নাটকটির অভিনয়ের জন্য একটি মঞ্চ সাজ্যার বিবরণ পাওয়া যায়। মঞ্চ সজ্জার বিবরণ : এই নাটক অভিনয়ের জন্য যে মঞ্চসজ্জার বিবরণ পাওয়া যায় তার পরিসর অত্যন্ত সীমাবদ্ধ ও ক্ষুদ্র। পেশাদারী থিয়েটারের ফাঁকা মঞ্চের পিছনের দিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একটি মাত্র দৃশ্যপট। যেখানে রয়েছে রাতে অভিনীত নাটকের জিনিসপত্র আর যন্ত্রপাতি, মঞ্চের মাঝে রয়েছে একটি উল্টানোর টুল, আর চারিদিকে রাত্রির গাঢ় অন্ধকার। আর রয়েছে একটি মোমবাতি হাতে হাসিমুখে রজনীকান্ত নামক চরিত্রের মঞ্চে উপস্থিতি। নামকরণের সার্থকতা : প্রশ্নের এই অংশের উত্তরের জন্য নিচের প্রশ্নটির উত্তর দেখাও। এবং সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করো। 👁️‍🗨️  ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটির নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো ।

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান্ — অতুল প্রসাদ সেন  ভূমিকা : জাতীয় সংহতি হল একটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি সাধারণ পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা। এর অর্থ হল, আমাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও, আমরা এই সত্যকে স্বীকার করি যে, আমরা সবাই এক। এটি কেবল একটি জাতীয় অনুভূতি নয়, এটা সেই চেতনা যা সমস্ত উপভাষা ও বিশ্বাসের মানুষকে একই প্রচেষ্টায় একত্রিত করে। জাতীয় একীকরণের সংজ্ঞা: ডাঃ এস. রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, national integration cannot be made by bricks and mortar, mould and hammer, but it quietly grows in people’s minds through education.1️⃣ এইচ এ গণি সংজ্ঞায়িত করেছেন, “National integration is a socio-psychological and educational process through which a feeling of unity and harmony develops in the hearts of the people and a sense of common citizenship or feeling of loyalty to the nation is fostered among them”2️⃣ এককথায়, জাতীয় সংহতির ধারণার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্...

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার : ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক ছোটগল্প হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটি কতটা সার্থক হয়েছে আলোচনা করো। ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক 👉 ভূমিকা : ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্ত সহজ সরল, ........ অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। কথাগুলো বলেছিলেন বাংলা ছোটগল্পের সার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিতার ছন্দে বলা এই অংশতেই রয়েছে সার্থক ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যে র যথাযথ বিবরণ। এডগার অ্যালান পো -এর মতে, যে গল্প অর্ধ থেকে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে। ছোটগল্পে জীবনের সামগ্রিক দিকটি উপন্যাসের মতো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত না হয়ে, তার খণ্ডাংশ নিয়ে পরিবেশিত হয়। এজন্য ছোটগল্প যথাসম্ভব বাহুল্যবর্জিত, রসঘন ও নিবিড় হয়ে থাকে। সংগত কারণেই এতে চরিত্রের সংখ্যা হয় খুবই সীমিত। ছোটগল্পের প্রারম্ভ ও প্রাক্কাল সাধারণত এবং খানিকটা নাটকীয়ভাবেই শুরু হয়। 👉   ছোটগল্পের বৈশ...

নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ

নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ  নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্প অবলম্বনে নিখিল চরিত্রের বিশ্লেষণ করো। নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ সূচনা : মার্কসবাদী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে নিখিল একজন সহযোগী চরিত্র। সম্পর্কে কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু। কথকের বর্ণনায় সে একজন ‘রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু অলস প্রকৃতির লোক’। বন্ধু বৎসল মানুষ : তবে নিখিল অত্যন্ত বন্ধুবৎসল মানুষ। তাই সে মৃত্যুঞ্জয়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে তার ভাবনায় অসঙ্গতি কোথায়। শুধু তাই নয়, নানাভাবে সে মৃত্যুঞ্জয় ও তার পরিবারের পাশে থাকে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আন্তরিক ও মানবিক : নিখিল আবেগ অনুভূতিহীন মানুষ নয়। নিরন্ন মানুষের অসহায় মৃত্যু এবং কিছু না করতে পারার যন্ত্রণায় যখন মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করে ওঠে, তখন নিখিলের মনটাও খারাপ হয়ে যায়। মানুষের প্রতি আন্তরিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের কারণেই সে প্রতি মাসে তিন জায়গায় নিয়মিত অর্থ সাহায্যও পাঠায়। যুক্তিবাদী চিন্তা: তবে নিখিল অত্যন্ত যুক্তিবাদী। সে জানে, রিলিফ মানে আসলে একজন...

মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ

মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় এর চরিত্র আলোচনা কর মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ 👉 ভূমিকা : সমাজ সচেতন কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ছোটগল্প ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’। ১৯৪৩ সালের ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তিনি রচনা করেছেন এই গল্প। গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দিয়ে এঁকেছেন একের পর এক দৃশ্যপট। এই দৃশ্যপটগুলো বিশ্লেষণ করলেই ধরা পড়ে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ। 👉  মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র 👉 মানব দরদী মন : শহর কলকাতায় অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎই একদিন মৃত্যুঞ্জয় ‘অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য’ প্রত্যক্ষ করে। মানুষের এই মৃত্যুবরণ তার দরদি মনের গভীরে তৈরি করে অপূরণীয় ক্ষত। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। 👉 পরোপকারী ইচ্ছা শক্তি : এদিকে, কীভাবে এই মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা যাবে, সেই ভাবনায় তার হৃদয়মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে, খাওয়া-ঘুম ছুটে যায়। সিদ্ধান্ত নেয়, নিজের সর্বস্ব দিয়ে এই মৃত্যুর বিরুদ্ধে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। 👉 আবেগপ্রবণ : মৃত্যুঞ্জয়ের মন...

রচনা : মৃণাল সেন

প্রবন্ধ রচনা : মৃণাল সেন ভূমিকা : মৃণাল সেন ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে এক বন্ধনীতে উচ্চারিত হতো তার নামও। জন্ম ও শিক্ষাজীবন :  মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম । এখানেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। এর পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাথমিক কর্ম :  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি সাংবাদিকতা, ওষুধ বিপণনকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন। চল্লিশের দশকে মৃণাল সেন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসেবেও কাজ শুরু করেন। রাজনৈতিক দর্শন :  আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী মৃণাল সেন দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসেবে ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য হন। ছবি পরিচালনা : বাংলা, ওড়ইয়আ, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র পরিচালনা করে তিনি বহুভাষিক চিত্র পরিচালক হিসেবে খ্যাতি...