“ভিক্ষা দেওয়ার মতো অস্বাভাবিক পাপ যদি আজও পুণ্য হয়ে থাকে, জীবনধারণের অন্নে মানুষের দাবি জন্মাবে কীসে?”
ক) কে ভাবছে একথা? অথবা, বক্তাকে?
খ) তার এরূপ (‘ভিক্ষা দেওয়া’কে অস্বাভাবিক পাপ) ভাবার কারণ কী?
গ) এ প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
ক) বক্তা :
উদ্ধৃত অংশটি মানবদরদী কথাকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্প থেকে নেয়া হয়েছে। এই গল্পের বাস্তববাদী চরিত্র নিখিলের ভাবনায় উদ্ধৃত ভাবনাটি প্রকাশিত হয়েছে।
খ) এরূপ ভাবার কারণ :
নিখিল বাস্তববাদী মানুষ। যুক্তিবোধ তার চিন্তা-চেতনাকে প্রতিনিয়ত শাণিত করে তোলে। তাই কিছু করার আগে সে যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে এবং তথ্য দিয়ে যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
তার এই যুক্তিবাদী চিন্তা-চেতনাই তাকে ‘রিলিফ’ দেওয়ার বিষয়টিকে অযৌক্তিক প্রতিপন্ন করে। কারণ, এই ‘রিলিফ’ তার কাছে ভিক্ষা দেওয়ার সমতুল্য। প্রকৃতপক্ষে, ‘মধুর আধ্যাত্বিক নীতি’র মোড়কে ভিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে জীবনধারণের অন্নে মানুষের যে জন্মগত দাবি, তাকে কৌশলে অস্বীকার করা হয়। এই কারণে নিখিলের ভাবনায়, ‘সেটা অস্বাভাবিক পাপ’ এবং ‘অনিয়ম’। তাই তার এমন ভাবনা।
গ) উদ্ধৃতির তাৎপর্য :
নিখিলের বন্ধু মৃত্যুঞ্জয় অনাহারে মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে নিজেকে অপরাধী ভেবেছে। কিন্তু বাস্তববাদী নিখিল ভেবেছে, দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য ‘নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ’। কারণ অনাহারে মৃত্যুর পিছনে রয়েছে ভোগবাদ নামক সমাজের এক কাল-ব্যাধি, যাকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা রিলিফ দিয়ে সারানো যাবে না।
নিখিল উপলব্ধি করেছে একজন মানুষের অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকার ইচ্ছাকে স্বীকৃতি জানালে, জীবনধারণের অন্নে মানুষের যে জন্মগত দাবি, তাকে অস্বীকার করা হয়। আর মানুষ তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে এই অধিকারবোধ সম্পর্কে সে আর কোনদিনই সচেতন হতে পারবে না।
নিখিলের মতে, রিলিফ বা ভিক্ষা নয়, এর জন্য প্রয়োজন এই সমস্ত প্রান্তিক মানুষকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। এবং যাতে তারা সেই অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। প্রয়োজনে তাদেরকে ‘স্বার্থপর করে তোলা’ দরকার। আর এটা করতে পারলেই, নিখিলের কথায়, অন্ন থাকতে, না খেয়ে কেউ মরবে না।
-------- শেষ --------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন