সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

“জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয়”

 “জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয়”

    ক) কার এই উপলব্ধি?

    খ) তিনি কিভাবে জেনেছিলেন ‘এ জগত স্বপ্ন নয়’?

    গ) তাঁর এই উপলব্ধির তাৎপর্য লেখ। 

    অথবা,

    ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই ভাবনার তাৎপর্য লেখো।

    ক) কবির উপলব্ধি :

    বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষ লেখা’ কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা, পাঠ্যপুস্তকে ‘রূপনারানের কূলে’ নামে পরিচিত। এই কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতিতে ব্যক্ত উপলব্ধিটি আসলে কবির নিজের।

    খ) উপলব্ধি কীভাবে :

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে কবি নতুন করে আবিষ্কার করেছেন নিজেকে এবং এই বিশ্বজগতকে। উপলব্ধি করেছেন, এই জগৎ ও জীবন শুধুই স্বপ্নময় নয়, বরং নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তাদের বিকাশ ঘটে চলেছে অনন্তকাল ধরে। তাঁর কথায়,
    রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
    আপনার রূপ,
    চিনিলাম আপনারে
    আঘাতে আঘাতে
    বেদনায় বেদনায়;
    কবির উপলব্ধি হল, এটাই প্রকৃত সত্য এবং তা খুবই কঠিন।

    সুতরাং, জীবনের শেষ পর্বে এসে দেশ ও বিদেশের অসংখ্য অর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে পৃথিবী যেভাবে এগোচ্ছে, তা লক্ষ্য করেই কবির এই উপলব্ধি।

    গ) এই উপলব্ধির তাৎপর্য :

    জগৎ ও জীবন নিয়ে অনন্ত জিজ্ঞাসায় ক্লান্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন-মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ভেবেছেন জীবনভর। প্রাথমিক পর্বে তাঁর মনে হয়েছিল, এই জগত ও জীবন আসলে স্বপ্নময়। প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধে মোহিত হয়ে জন্ম নিয়েছিল তাঁর এই ভাবনা।

    কিন্তু জীবনের শেষ পর্বে এসে কবি আবিষ্কার করলেন, জীবনের এক কঠিন সত্যকে। এই সত্য জীবনের যথাযথ তাৎপর্য বুঝতে শেখায়। তাঁর লেখা ‘মানুষের ধর্ম’ প্রবন্ধে রয়েছে সেই সত্যের পথনির্দেশ,
    তাই বিরাটকে বলি রুদ্র, তিনি মুক্তির দিকে আকর্ষণ করেন দুঃখের পথে।
    অর্থাৎ, কবির ভাবনায়, এ জীবন স্বপ্নের রঙে রঙিন নয়, দুঃখের বা রক্তের অক্ষরে রাঙানো এক বেদনাঘন চিত্রপট। কবি তাই লিখলেন
    রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
    আপনার রূপ
    শুধু আবিষ্কার নয়, কবি অন্তর দিয়ে ভালোবেসে ফেললেন সেই কঠিন সত্যকে। কারণ, তাঁর কথায়,
    সে কখনো করে না বঞ্চনা
    এইভাবে জগৎ ও জীবনের ধ্রুব সত্যকে উপলব্ধি করার পর কবির অন্তরে তা আর স্বপ্নময় থাকেনি। তিনি বুঝেছেন, আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা করে যাওয়াই জীবন। আর এই তপস্যাই জীবনকে এক দারুণ সত্যের মুখোমুখি করে দেয়। তার কথায়, তা হল :
    জেগে উঠিলাম,
    জানিলাম এ জগত
    স্বপ্ন নয়।
    তাই কবির সিদ্ধান্ত, স্বপ্ন বিলাসিতায় নয়, দুঃখের তরঙ্গ মুখরতার মধ্যেই এই জগৎ ও জীবনের সত্যকে খুঁজে পাওয়া যায়।

    মন্তব্যসমূহ

    বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি - সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর

    বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি । প্রশ্ন ও উত্তর

    বাংলা বই - দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চমাধ্যমিক 'বাংলা বই'য়ে👨তোমাকে স্বাগত 💁 তোমার প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরটি পেতে ওপরের মেনু বারের বিষয় মেনুতে ক্লিক করো । গল্পের প্রশ্ন চাইলে ‘ গল্পের  প্রশ্ন’  ট্যাবে , কবিতার প্রশ্ন চাইলে ‘ কবিতার প্রশ্ন’ ট্যাবে ক্লিক করো ।  এভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ের  ট্যাবে  ক্লিক করে প্রশ্নের পাতায় যাও। সেখানে দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রশ্ন ও উত্তর খোঁজ। অথবা নিচের প্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক করো। সকলের জন্য শুভকামনা রইল। বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো। ১)  দ্বাদশ শ্রেণির গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ২)  দ্বাদশ শ্রেণির কবিতা 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৩)  দ্বাদশ শ্রেণির নাটক 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৪)  আন্তরজাতিক কবিতা ও ভারতীয় গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৫)  দ্বাদশ শ্রেণির পূর্নাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ  👉  প্রশ্ন ও উত্তর ৬)  দ্বাদশ শ্রেণির শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৭)  দ্বাদশ শ্রেণির ভাষা বিভাগ 👉   প্রশ্ন ও উত্তর   ৮)  দ্বাদশ শ্রেণির প্রবন্ধ  👉   প্রবন্ধের তালিকা ৯)  দ্বাদশ শ্রেণির প্রুফ সংশোধন  👉   নমুনা প্রশ্ন ও উত্তর ১

    দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের কবিতা

    দিল্লী, তুমি এমন হলে কেন? দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের কবিতা  শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের কবিতা Poems of Bahadur Shah Zafar II রেশমখানি অঙ্গে ধরে তব ধাঁধিয়েছিলে আমার দুটি চোখ, আধফোটা ফুল হৃদয়কমলতলে এই ঋতুরাজ তোমার সঙ্গী হোক। প্রাণের সাথে চলে প্রাণের খেলা তেমনি ছিলে ঘ্রাণের মত মোর সময় হলে সবার যেতে হয়- তুমিও গেলে ভেঙে সুখের দোর। অধর ছুঁয়ে অধর কথা বলে হৃদয় জানে ব্যথার গোপন সুর পাছে তোমার ভালবাসায় পড়ি তোমায় ছেড়ে যাচ্ছি বহু দূর আশার আলো নিভছে চিরতরে মনকে আমি বোঝাই নাকো আর ধুলোয় ছিলাম, ধুলোয় ফিরে যাব আমায় আজ কারই বা দরকার? দিল্লী তুমি আমার দেবপুরী আদর যেন বইত হাওয়ার ভেলা এখন তুমি জ্বলতে থাকা চিতা জমতে থাকা কান্না, অবহেলা। রাস্তা জুড়ে শবের স্তুপ জমে চোখের জল শুকিয়ে গেছে যেন মৃতেরা সব নেই তো কোনখানে দিল্লী, তুমি এমন হলে কেন? ছিন্ন হৃদয়, ছিন্ন মাংস-হাড় মনন জ্বলে দীর্ঘ সব শ্বাসে রক্তপুরী, সব হারাদের দেশ আমার চোখ সজল হয়ে আসে। চিরটাকাল সঙ্গে কে আর থাকে? সবার ভাগ্যে সব ভাল কি সয়? মনে ভাবি পরম নবীর বাণী সকল কিছু ভালোর জন্য হয়। অনুবাদ করেছেন কৌশিক মজুমদার

    ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ

    ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান্ — অতুল প্রসাদ সেন  ভূমিকা : জাতীয় সংহতি হল একটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি সাধারণ পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা। এর অর্থ হল, আমাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও, আমরা এই সত্যকে স্বীকার করি যে, আমরা সবাই এক। এটি কেবল একটি জাতীয় অনুভূতি নয়, এটা সেই চেতনা যা সমস্ত উপভাষা ও বিশ্বাসের মানুষকে একই প্রচেষ্টায় একত্রিত করে। জাতীয় একীকরণের সংজ্ঞা: ডাঃ এস. রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, national integration cannot be made by bricks and mortar, mould and hammer, but it quietly grows in people’s minds through education.1️⃣ এইচ এ গণি সংজ্ঞায়িত করেছেন, “National integration is a socio-psychological and educational process through which a feeling of unity and harmony develops in the hearts of the people and a sense of common citizenship or feeling of loyalty to the nation is fostered among them”2️⃣ এককথায়, জাতীয় সংহতির ধারণার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক

    নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ

    নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ  নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্প অবলম্বনে নিখিল চরিত্রের বিশ্লেষণ করো। নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ সূচনা : মার্কসবাদী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে নিখিল একজন সহযোগী চরিত্র। সম্পর্কে কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু। কথকের বর্ণনায় সে একজন ‘রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু অলস প্রকৃতির লোক’। বন্ধু বৎসল মানুষ : তবে নিখিল অত্যন্ত বন্ধুবৎসল মানুষ। তাই সে মৃত্যুঞ্জয়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে তার ভাবনায় অসঙ্গতি কোথায়। শুধু তাই নয়, নানাভাবে সে মৃত্যুঞ্জয় ও তার পরিবারের পাশে থাকে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আন্তরিক ও মানবিক : নিখিল আবেগ অনুভূতিহীন মানুষ নয়। নিরন্ন মানুষের অসহায় মৃত্যু এবং কিছু না করতে পারার যন্ত্রণায় যখন মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করে ওঠে, তখন নিখিলের মনটাও খারাপ হয়ে যায়। মানুষের প্রতি আন্তরিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের কারণেই সে প্রতি মাসে তিন জায়গায় নিয়মিত অর্থ সাহায্যও পাঠায়। যুক্তিবাদী চিন্তা: তবে নিখিল অত্যন্ত যুক্তিবাদী। সে জানে, রিলিফ মানে আসলে একজন

    বাংলার ঋতুরঙ্গ বা বাংলা ঋতু বৈচিত্র্য

     বাংলার ঋতুরঙ্গ বা ঋতু বৈচিত্র্য বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। — জীবনানন্দ দাস ভূমিকা : ঋতুবৈচিত্র্যের বর্ণিল উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিপূর্ণ। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই বাংলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর বৈচিত্র্যময় ঋতুরূপ। ভিন্ন ভিন্ন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে পর্যায়ক্রমে ছয়টি ঋতু ঘুরে ফিরে আসে এই বাংলায়। প্রতিটি ঋতুই স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে অপরূপা। বাংলা প্রকৃতির এই অপরূপ রূপে মুগ্ধ হয়ে জীবনানন্দ দাশ একে ‘ রূপসী বাংলা ’ বলে অভিহিত করেছেন। ঋতু বৈচিত্রের কারণ : বাংলাদেশ  কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়াতে তাই নিরক্ষীয় প্রভাব দেখা যায়। এখানেই রয়েছে বাংলার ঋতু বৈচিত্রের মূল চাবিকাঠি।  নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত এখানে হালকা শীত অনুভূত হয়। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল চলে। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। ছয় ঋতুর ‘রূপসী বাংলা’ : বাংলার এই ছটি ঋতু যেন বিনি সুতোয় গাঁথা মালার মতো। এই মেলায় পর পর গাঁথা আছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও ঋতুরাজ বসন্ত। প্রতি দুই মাস অন্তর

    কবিতা : পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন - বের্টোল্ট ব্রেখট

    ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ - বের্টোল্ট ব্রেখট পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন - বের্টোল্ট ব্রেখট বের্টোল্ট ব্রেখ্ট কে বানিয়েছিল সাত দরজাঅলা থি? বইয়ে লেখে রাজার নাম। রাজারা কি পাথর ঘাড়ে করে আনত? আর ব্যাবিলন এতবার গুঁড়ো হল, কে আবার গড়ে তুলল এতবার? সোনা- ঝকঝকে লিমা যারা বানিয়েছিল তারা থাকত কোন বাসায়? চিনের প্রাচীর যখন শেষ হল সেই সন্ধ্যায় কোথায় গেল রাজমিস্ত্রিরা? জয়তোরণে ঠাসা মহনীয় রোম। বানাল কে? কাদের জয় করল সিজার? এত যে শুনি বাইজেনটিয়াম, সেখানে কি সবাই প্রাসাদেই থাকত? এমনকী উপকথার আটলান্টিস, যখন সমুদ্র তাকে খেল ডুবতে ডুবতে সেই রাতে চিৎকার উঠেছিল ক্রীতদাসের জন্য। ভারত জয় করেছিল তরুণ আলেকজান্ডার। একলাই না কি? গলদের নিপাত করেছিল সিজার। নিসেন একটা রাঁধুনি তো ছিল? বিরাট আর্মাডা যখন ডুবল স্পেনের ফিলিপ কেঁদেছিল খুব। আর কেউ কাঁদেনি? সাত বছরের যুদ্ধ জিতেছিল দ্বিতীয় ফ্রেডারিক। কে জিতেছিল? একলা সে? পাতায় পাতায় জয় জয়োৎসবের ভোজ বানাত কারা? দশ-দশ বছরে এক-একজন মহামানব খরচ মেটাত কে? কত সব খবর! কত সব প্রশ্ন! -------xx------ 📔 এই কবিতার প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করো । ভাষান্ত

    ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার

    ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার : ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক ছোটগল্প হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটি কতটা সার্থক হয়েছে আলোচনা করো। ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক 👉 ভূমিকা : ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্ত সহজ সরল, ........ অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। কথাগুলো বলেছিলেন বাংলা ছোটগল্পের সার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিতার ছন্দে বলা এই অংশতেই রয়েছে সার্থক ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যে র যথাযথ বিবরণ। এডগার অ্যালান পো -এর মতে, যে গল্প অর্ধ থেকে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে। ছোটগল্পে জীবনের সামগ্রিক দিকটি উপন্যাসের মতো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত না হয়ে, তার খণ্ডাংশ নিয়ে পরিবেশিত হয়। এজন্য ছোটগল্প যথাসম্ভব বাহুল্যবর্জিত, রসঘন ও নিবিড় হয়ে থাকে। সংগত কারণেই এতে চরিত্রের সংখ্যা হয় খুবই সীমিত। ছোটগল্পের প্রারম্ভ ও প্রাক্কাল সাধারণত এবং খানিকটা নাটকীয়ভাবেই শুরু হয়। 👉   ছোটগল্পের বৈশ

    অমৃতের পুত্র মানুষ

    “অমৃতের পুত্র মানুষ।” অমৃতের পুত্র মানুষ ক) কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এর এই উক্তি? খ) ‘অমৃতের পুত্র’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ) এই মানুষটির (অমৃতের পুত্র) বর্ণনা দাও। ঘ) এই উক্তির মাধ্যমে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন? অথবা , এই উক্তির তাৎপর্য কী? অথবা , এই উক্তির মধ্য দিয়ে লেখকের কোন্ মনোভাব ফুটে উঠেছে? ক) কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এর এই উক্তি? সমাজ সচেতন প্রাবন্ধিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমার বাংলা’ প্রবন্ধ সংকলন থেকে নেওয়া ‘হাত বাড়াও’ রচনা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রবন্ধে কথিত রাজবাড়ীর বাজার থেকে ফরিদপুরে ফেরার জন্য লেখক স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটু দূরে স্টেশনের রাস্তায় মিলিটারি ছাউনির পাশে একটা অদ্ভুত জন্তু দেখতে পান। অদ্ভুত এই জন্তু যেন চার পায়ে ভর দিয়ে এগিয়ে আসছে। আরো একটু এগিয়ে এলে তিনি দেখতে পান রাস্তার ধুলো থেকে সে কী যেন খুঁটে খাচ্ছে। ঠিক মানুষের হাতের মতো তার সামনের থাবা দুটো। আঙুলগুলো বড্ড বেশি সরু। গায়ে এক ফোটা লোম নেই। একটু পরে, সামনাসামনি আসতেই তিনি স্তম্ভিত হয়ে আবিষ্কার করেন —এটা কোন জন্তু নয়, একজন মানুষ। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা এবং স্তম্ভিত হয়ে যাবার

    সহমরণ — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

    সহমরণ — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সহমরণ — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘জিজ্ঞাসি’ছ পড়া কেন গা’? শুনিবে তা’? — শোন তবে মা — দুখের কথা ব’ল্ ব কা’রে বা! ************************* জন্ম আমার হিদুঁর ঘরে, বাপের ঘরে, খুব আদরে, ছিলাম বছর দশ; কুলীন পিতা, কুলের গোলে, ফেলে দিলেন বুড়ার গলে; হ’লাম পরের বশ। আচারে তার আস্ ত হাসি, — ব’লব কি আর পরকাশি, — মিটল সকল সাধ; — হিঁদুর মেয়ে অনেক ক’রে শ্রদ্ধা রাখে স্বামীর ’পরে তা’তেও বিধির বাদ। বুড়াকালের অত্যাচারে,— শয্যাশায়ী ক’রলে তা’রে জেগেই পোহাই রাতি; দিন কাটেত’ কাটে না রাত, মাসের পরে গেল হঠাৎ, — নিবল জীবন বাতি। ********************** কতক দুঃখে, কতক ভয়ে শরীর এল অবশ হ’য়ে ভাঙল সুখের হাট খ’য়ের রাশি ছড়িয়ে পথে, চল্ ল নিয়ে শবের সাথে,— যেথায় শ্মশান ঘাট। গুঁড়িয়ে শাঁখা, সবাই মিলে, চিতায় মোরে বসিয়ে দিলে, বাজ্ ল শতেক শাঁক; লোকের ভিড়ে ভরেছে ঘাট, ধুঁইয়ে উঠে চিতার কাঠ, উঠ্ল গর্জ্জে ঢাক। ******************** রোমে, রোমে, শিরায়, শিরায়, জ্বালা ধরে, —প্রাণ বাহিরায়,— মরি বুঝি ধোঁয়ায় এবার! আচম্বিতে—চিৎকার রোলে— চিতা ভেঙে, পড়িলাম জলে, মাঝি এক নিল নায়ে তার। যত লোক করে ‘মার

    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    প্রবন্ধ রচনা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে একজন মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। শিক্ষাজীবন : মধুসূদন দত্ত শিক্ষা গ্রহণ পর্ব শুরু হয় মায়ের তত্ত্বাবধানে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায়। পরে সাত বছর বয়সে কলকাতা আসেন এবং খিদিরপুর স্কুলে দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।  এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী জীবনে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে।  এই উদ্দেশ্যেই ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি খ্রিস্ট ধর্ম গ্র