“জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয়”
ক) কার এই উপলব্ধি?
খ) তিনি কিভাবে জেনেছিলেন ‘এ জগত স্বপ্ন নয়’?
গ) তাঁর এই উপলব্ধির তাৎপর্য লেখ।
অথবা,
‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই ভাবনার তাৎপর্য লেখো।
ক) কবির উপলব্ধি :
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষ লেখা’ কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা, পাঠ্যপুস্তকে ‘রূপনারানের কূলে’ নামে পরিচিত। এই কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতিতে ব্যক্ত উপলব্ধিটি আসলে কবির নিজের।
খ) উপলব্ধি কীভাবে :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে কবি নতুন করে আবিষ্কার করেছেন নিজেকে এবং এই বিশ্বজগতকে। উপলব্ধি করেছেন, এই জগৎ ও জীবন শুধুই স্বপ্নময় নয়, বরং নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তাদের বিকাশ ঘটে চলেছে অনন্তকাল ধরে। তাঁর কথায়,
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
কবির উপলব্ধি হল, এটাই প্রকৃত সত্য এবং তা খুবই কঠিন।
সুতরাং, জীবনের শেষ পর্বে এসে দেশ ও বিদেশের অসংখ্য অর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে পৃথিবী যেভাবে এগোচ্ছে, তা লক্ষ্য করেই কবির এই উপলব্ধি।
গ) এই উপলব্ধির তাৎপর্য :
জগৎ ও জীবন নিয়ে অনন্ত জিজ্ঞাসায় ক্লান্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন-মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ভেবেছেন জীবনভর। প্রাথমিক পর্বে তাঁর মনে হয়েছিল, এই জগত ও জীবন আসলে স্বপ্নময়। প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধে মোহিত হয়ে জন্ম নিয়েছিল তাঁর এই ভাবনা।
কিন্তু জীবনের শেষ পর্বে এসে কবি আবিষ্কার করলেন, জীবনের এক কঠিন সত্যকে। এই সত্য জীবনের যথাযথ তাৎপর্য বুঝতে শেখায়। তাঁর লেখা ‘মানুষের ধর্ম’ প্রবন্ধে রয়েছে সেই সত্যের পথনির্দেশ,
তাই বিরাটকে বলি রুদ্র, তিনি মুক্তির দিকে আকর্ষণ করেন দুঃখের পথে।
অর্থাৎ, কবির ভাবনায়, এ জীবন স্বপ্নের রঙে রঙিন নয়, দুঃখের বা রক্তের অক্ষরে রাঙানো এক বেদনাঘন চিত্রপট। কবি তাই লিখলেন
রক্তের অক্ষরে দেখিলামশুধু আবিষ্কার নয়, কবি অন্তর দিয়ে ভালোবেসে ফেললেন সেই কঠিন সত্যকে। কারণ, তাঁর কথায়,
আপনার রূপ
সে কখনো করে না বঞ্চনা
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগত
স্বপ্ন নয়।
তাই কবির সিদ্ধান্ত, স্বপ্ন বিলাসিতায় নয়, দুঃখের তরঙ্গ মুখরতার মধ্যেই এই জগৎ ও জীবনের সত্যকে খুঁজে পাওয়া যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন