“...... মানব সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে পচা ঐতিহ্য আদর্শবাদের কল্পনা-তাপস বলে।”
ক) কার এমন ভাবনা?
খ) কোন প্রসঙ্গে এমন ভাবনা?
গ) এমন ভাবনার যথার্থতা গল্প অবলম্বনে ব্যাখ্যা কর।
ক) কার এমন ভাবনা :
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটগল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় সম্পর্কে তার বন্ধু নিখিল এই ভাবনা পোষণ করেছে।
খ) কোন প্রসঙ্গে এমন ভাবনা?
নিখিল তার সহকর্মী মৃত্যুঞ্জয়কে অন্য সকলের মতই খুব পছন্দ করে। কখনো কখনো মৃদু অবজ্ঞা করলেও তাকে সে ভালো না বেসে পারে না। কারণ, মৃত্যুঞ্জয় একজন নিরীহ, শান্ত, দরদী, ও ভালো মানুষ। সেই সঙ্গে সরল ও সৎ।
তবে, এগুলো ছাড়াও মৃত্যুঞ্জয়কে ভালোবাসার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, ১) মৃত্যুঞ্জয় মানব সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে পচা ঐতিহ্য আদর্শবাদের(সাম্যবাদের) কল্পনা-তাপস। ২) মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে এমন এক শক্তির উৎস আছে যা ‘অব্যয়কে’ (অপরিবর্তনীয়কে) ‘শব্দরূপ’ (পরিবর্তিত রূপ) দিতে পারে।
বস্তুত, উভয়ের মধ্যে জীবন দর্শন সম্পর্কে ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি নিখিলের এই যে ভালোবাসার, তার কারণ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গেই গল্পের কথক নিখিলের এই ভাবনাটি উপস্থাপন করেছেন।
গ) ভাবনার যথার্থতা বিচার :
এই গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের সামাজিক অবস্থান এবং দুর্ভিক্ষ ও অনাহারি মানুষের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে তার যে কার্যকলাপ তা বিশ্লেষণ করলে এই ভাবনার যথার্থতা বোঝা যায়।
মৃত্যুঞ্জয় চাকরি করে। যা মাইনে পায়, খেয়ে পড়ে চলে যায়। কিন্তু অফিস যাওয়ার পথে মানুষের অনাহারে মৃত্যু দেখে সে ভেঙে পড়ে। একই সমাজ ব্যবস্থায় অবস্থান করেও কেউ নিরন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করছে, আবার কেউ যথেচ্ছ খেয়ে পরে একটি নির্দিষ্ট নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বেঁচে থাকছে। এই আর্থ-সামাজিক বৈষম্যকে মৃত্যুঞ্জয় মেনে নিতে পারেনি। তাই একদিন এই মানুষগুলোর কথা চিন্তা করতে গিয়ে উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ে, চাকরি ও পরিবারকে অবহেলা করে সে ফুটপাতে নিরন্ন মানুষের ভিড়ে মিশে যায়।
এভাবে মৃত্যুঞ্জয় একটি শ্রেণি-হীন সমাজের আদর্শকে তার সমগ্র সত্তায় বহন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিছু হবে না বুঝেও সে নিজেকে সরিয়ে নেয় না নিরাপদ দূরত্বে। এখানেই মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি নিখিলের এই ভাবনার যথার্থতার প্রমাণ দেয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন