“মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া শ্লথ, নিস্তেজ নয়”
ক) উদ্ধৃত অংশটির বক্তা কে?
খ) কার সম্পর্কে কোন প্রসঙ্গে বক্তা এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন?
গ) তার এই অভিব্যক্তির যথার্থতা নির্ণয় কর?
ক) উদ্ধৃতাংশের বক্তা :
কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেয়া হয়েছে। এই উদ্ধৃতিটির বক্তা হচ্ছেন এই গল্পের কথাকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বক্তব্যটির মূলভাব এই গল্পের সহযোগী চরিত্র নিখিলের ভাবনা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।
খ) বক্তব্যের প্রসঙ্গ :
এই গল্পে নিখিল তার সহকর্মী তথা কাছের বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানসিক শক্তির বহরকে তুলে ধরার লক্ষ্যে এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।
গ) অভিব্যক্তির যথার্থতা বিচার :
মৃত্যুঞ্জয় মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী মানুষ। মাস মাইনে নিয়ে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করায় তার কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। কিন্তু জীবনের শুরু থেকেই তার জীবন দর্শনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল মানব সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন এক আদর্শবাদের ভাবনা। এই ভাবনা সাম্যবাদী সমাজের ভাবনা। নিখিলের মতে, যা আজকের সমাজের কাছে ‘পচা ঐতিহ্য ও আদর্শবাদ’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় এই আদর্শবাদেরই কল্পনা-তাপস। সে দেখতে চায় শ্রেণী বৈষম্যহীন, শোষণ মুক্ত একটি সমাজ।
নিখিল বোঝে, এই সমাজ গড়ে তোলা খুব সহজ কাজ নয়, আকাশকুসুম কল্পনা। তাই সে হতাশ হয়, পিছিয়ে আসে। ফলে মৃত্যুঞ্জয়ের মতো সে এই মতাদর্শের ‘কল্পনা-তাপস’ হয়ে উঠতে পারে না। এই দুর্বলতার কারণেই নিখিল মাঝে মাঝে মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে কাবু হয়ে যায়।
কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় সীমাহীন মানসিক শক্তির অধিকারী। সে ভাঙে কিন্তু মচকায় না। নিখিলের ভাবনায়, তার মধ্যে এমন এক শক্তির উৎস রয়েছে, যা ‘অব্যয়কে শব্দরূপ’ দিতে পারে।
এই শক্তিকে অবলম্বন করেই মৃত্যুঞ্জয় মন্বন্তর জনিত অনাহারের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রাখে। নিজের পরিবারকে ভুলে নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে, এবং তাদের দুঃখে একাত্ম হতে মাস মাইনের সমগ্রটাই রিলিফ ফান্ডে দিয়ে দেয়। শহরের ফুটপাতে, লঙ্গরখানায়, ডাস্টবিনের ধারে অনাহারি মানুষের সঙ্গে মিশে যায়।
শেষ পর্যন্ত সে বোঝে, তার লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব। কিন্তু দৃঢ়চিত্ত মৃত্যুঞ্জয় আর ফিরে আসার কথা ভাবতে পারেনা। একসময় ধুতির বদলে ছেঁড়া ন্যাকড়া পরে, এক মুখ দাড়ি নিয়ে, সে অনাহারী মানুষের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
আপাতদৃষ্টিতে মৃত্যুঞ্জয়ের এই পরিণতি ও অবস্থান অবিবেচনার ফসল মনে হলেও তার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানসিক শক্তির সাক্ষ্য বহন করে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে মৃত্যুঞ্জয় সম্পর্কে নিখিলের অভিব্যক্তি ‘মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া শ্লথ, নিস্তেজ নয়’ যথাযথ বলে বিবেচিত হয়।
--------xx------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন