“মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল”
ক) মৃত্যুঞ্জয় কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল?
খ) শেষ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয়ের কি পরিণতি লক্ষ্য করা গেল?
ভূমিকা :
মানবতাবাদী কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ ছোটগল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেয়া হয়েছে। এই গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার পথে কলকাতা শহরের ফুটপাতে অনাহারে মানুষের মৃত্যু দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ক) মৃত্যুঞ্জয়ের অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ :
মনের সংবেদনশীলতা :
মৃত্যুঞ্জয় মানবদরদী ও সংবেদনশীল মনের মানুষ। মানুষের দুঃখ তাকে কষ্ট দেয়, আনন্দ করে উল্লসিত। সে ছিল ‘মানব সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে পচা ঐতিহ্য আদর্শবাদের কল্পনা-তাপস’।
মানসিক বেদনাবোধ :
এহেন মৃত্যুঞ্জয় এই মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে, এই দুর্ভিক্ষের দিনে সবকিছু জেনেশুনেও চারবেলা পেট ভরে খাওয়াটা এক ধরণের ক্ষমাহীন অপরাধ। এই অপরাধবোধের কারণেই মৃত্যুঞ্জয় দারুন মানসিক বেদনাবোধের শিকার হয়। এই বেদনার প্রতিক্রিয়ায় শেষ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
খ) মৃত্যুঞ্জয়ের শেষ পরিণতি :
রিলিফের কাজ :
এই মনবেদনা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে সে রিলিফের কাজে আত্মনিয়োগ করে। মাইনের পুরো টাকাটাই রিলিফ ফান্ডে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সংসারে দেখা দেয় অনটন। মৃত্যুঞ্জয়ের সেদিকে হুঁশ নেই। ফুটপাতে দেখা অনাহারে মৃত্যুর ঘটনার পর সংসারের ক্ষুদ্র কর্তব্যের গণ্ডিতে মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে আর বেঁধে রাখতে পারে না।
কাজে অমনোযোগ:
ক্রমে সে অফিসের কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। শহরের আদি অন্তহীন ফুটপাতে, বিভিন্ন লঙ্গরখানায় ঘুরে অন্নপ্রার্থী মানুষের ভিড়ে মিশে সে বুঝে নিতে চায়, ‘কোথা থেকে কিভাবে কেমন করে সব ওলট পালট হয়ে গেল’।
অন্নহীন মানুষের দলে আশ্রয় :
কিন্তু সবকিছু বুঝেও যখন কিছুই করতে পারা গেল না, মৃত্যুঞ্জয় তখন হতাশায় ভেঙে পড়ে। একসময় অন্নহীন মানুষের দলে খুঁজে পাওয়া যায় অন্য এক মৃত্যুঞ্জয়কে। দাড়ি মুখ, খালি গা, ছেঁড়া ন্যাকড়া পড়া সেই মৃত্যুঞ্জয় এখন নোঙ্গরখানায় অন্যদের সঙ্গে খিচুড়ির জন্য কাড়াকাড়ি আর মারামারি করে - ‘গা থেকে এইচি। খেতে পাইনি বাবা। আমায় খেতে দাও।’
উপসংহার :
আসলে একসময় সমাজ পরিবেশের অসহনীয় চাপ তার স্নায়ুতন্ত্রের শক্তি ও সহনশীলতাকে ছাপিয়ে যায়। ফলে গল্পের পরিণতিতে মৃত্যুঞ্জয়ের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে এবং অন্নহীন মানুষের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
========xx========
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন