“রূপনারানের কূলে / জেগে উঠিলাম”
ক) বক্তাকে? অথবা, কে জেগে উঠলেন?
খ) তাঁর এই জেগে ওঠার স্বরূপ বা তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
গ) জেগে ওঠার আসল অর্থ কবিতাটির মধ্যে কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও। - ২০১৭
ক) কে জেগে উঠলেন:
উদ্ধৃত অংশটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘শেষ লেখা’ কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে, যা উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে ‘রূপনারানের কূলে’ নামে মুদ্রিত হয়েছে। এই কবিতায় কবি ‘জীবন-মৃত্যুর স্বরূপ’ সম্পর্কে তার শেষ জীবনের যে উপলব্ধি, তা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি এই কথা বলেছেন। অর্থাৎ কবি এখানে নিজে জেগে উঠেছেন।
খ) জেগে ওঠার স্বরূপ বা তাৎপর্য :
জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে কবি উপলব্ধি করেছেন, এই জগত শুধুই স্বপ্নময় নয়, বরং ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জীবনের বিকাশ ঘটাই এই জগতের প্রকৃত সত্য। কবির ভাবনায়, সে সত্য কঠিন। দেশ ও বিদেশের অসংখ্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে পৃথিবী যেভাবে এগোচ্ছে, তা লক্ষ্য করেই কবির এই উপলব্ধি।
কবি সেই সঙ্গে এও উপলব্ধি করেছেন, এই কঠিনকেই ভালবাসতে হবে। কারণ, কবির কথায়,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
তাই কবি এই কঠিনকে ভালোবেসেই নিজেকে চিনেছেন, তার দেওয়া আঘাতে আঘাতে, বেদনায় বেদনায়, । প্রত্যক্ষ করেছেন নিজস্ব স্বরূপ, হৃদয়ের রক্তক্ষরণের বিনিময়ে। তার কথায়,
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ
শুধু তাই নয়, জীবন মানে তাঁর কাছে ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’। কারণ, তাঁর উপলব্ধি, এই দুঃখের তপস্যার মাধ্যমে, বিশ্ব প্রকৃতির কাছে তার যে ঋণ, তা শোধ করা সম্ভব। আর এটা করতে পারলেই মৃত্যুতে নিজেকে নিশ্চিন্তে সমর্পণ করে দেয়া সম্ভব।
এই ভাবনা থেকেই তিনি জেগে উঠেছেন এক নতুন জীবন দর্শন নিয়ে, নতুন জীবন-নদীর কূলে। কবির কথায়,
রূপ-নারানের কূলে
জেগে উঠলাম
গ) জেগে ওঠার আসল অর্থ :
আসলে বিশ্বজগতের বাস্তবতা রুদ্র, রুক্ষ ও নিষ্ঠুর হলেও তা অলঙ্ঘনীয়। এটাই কঠিন সত্য। অর্থাৎ বাস্তব। এই বাস্তব জগতই কবির উপমায় ‘রূপনারানের কুল’। তার কোলে জেগে ওঠার অর্থ হল এই বাস্তব অর্থাৎ কঠিন সত্যকে উপলব্ধি করা। অর্থাৎ জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে, রূপনারানের কূলে জেগে ওঠা আসলে এই কঠিন সত্যকে মেনে নিয়ে তার তীরেই আশ্রয় খোঁজা, নিশ্চিন্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য।
------xx------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন