‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে দুর্ভিক্ষজনিত অনাহার ও অনাহারে মৃত্যু সম্বন্ধে ভাবনা
‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে দুর্ভিক্ষজনিত (মন্বন্তরজনিত) অনাহার ও অনাহারে মৃত্যু সম্বন্ধে ভাবনাগুলো লিপিবদ্ধ করো।
👉 ভূমিকা :
১৩৫০ বঙ্গাব্দের মন্বন্তরের পটভূমিতে মার্কসবাদী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’।
👉 মৃত্যুঞ্জয়ের ভাবনা :
অফিসে যাওয়ার পথে হঠাৎই অনাহারে মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে এই গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সে। কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনা নিরন্ন মানুষের এভাবে মৃত্যুকে।
মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা :
সে খোঁজার চেষ্টা করে এই মৃত্যুর কারণ কী, দায় কার, এবং করণীয় বা কী? বুঝতে চায় ক্ষুধার যন্ত্রণা ও মৃত্যু যন্ত্রণার মধ্যে কোনটা বেশি ভয়ংকর?
মৃত্যু সম্পর্কে তার উপলব্ধি :
মন্বন্তর ও মৃত্যু সম্পর্কিত এইসব চিন্তায় মৃত্যুঞ্জয় দ্রুত ভেঙে পড়তে থাকে। খাওয়া ঘুম বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে উপলব্ধি করে, এই মৃত্যুর জন্য সে নিজেও অনেকটা দায়ী।
মৃত্যু প্রতিরোধে সিদ্ধান্ত :
নিজের নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, তার মাইনের সমস্ত টাকাটাই রিলিফ ফান্ডে দিয়ে দেবে। কারণ, যে কোন মূল্যে সে এই মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে চায়।
👉 নিখিলের ভাবনা :
নিখিলও এই মৃত্যু দেখে বিচলিত হয়। কিন্তু ভেঙে পড়ে না।
মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান :
তার কাছে এ মৃত্যু মনুষ্য সৃষ্ট। এবং কোন একক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় তাকে এড়ানো যাবে না। তাই একে সামনে রেখে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া, নিখিলের কথায়, দশজনকে খুন করার চেয়েও বড় পাপ।
মৃত্যু প্রতিরোধে প্রচেষ্টা :
তবে এ মৃত্যুকে নিখিলও মেনে নিতে পারে না। তাই বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকুই সে খায়। বাকিটা রিলিফ ফান্ডে দিয়ে দেয়।
প্রচেষ্টা ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা :
কিন্তু নিখিলের মতে, অনাহার ও মৃত্যুকে রিলিফ দিয়ে আটকানো যায় না। রিলিফকে ভিক্ষার সঙ্গে তুলনা করে একে এক ধরণের ‘অস্বাভাবিক পাপ’ বলে দাবি করে সে। কারণ, তার মতে, জীবনধারণের অন্নে মানুষের যে দাবি, তা এতে ন্যায্যতা পায় না। মধুর আধ্যাত্বিক নীতির মোড়কে রিলিফের নামে যা করা হয়, নিখিলের ব্যাখ্যায়, ‘সেটা হয় অনিয়ম’।
প্রতিরোধের প্রকৃত পথ :
নিখিল উপলব্ধি করে, একমাত্র ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ই পারে অনাহার ও মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে। এই স্বার্থপরতা যদি নিরন্ন মানুষগুলোকে শেখানো যেত, তবে অন্ন থাকতে এই বাংলায় কেউ না খেয়ে মরত না। তা সে অন্ন হাজার মাইল দূরেই থাক, আর একত্রিশটা তালা লাগানো গুদামেই থাক’।
👉 উপসংহার :
এভাবে গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় ও বন্ধু নিখিলের সাংঘর্ষিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মন্বন্তরজনিত অনাহার এবং অনাহারে মৃত্যু সম্পর্কিত ভাবনা প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে।
-------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন