“সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে”
ক) ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ কী?
খ) এই মূল্য কীভাবে লাভ হয়?
গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতায় সত্যকে কোন ‘কঠিন’ আবার কখনো ‘দারুণ’ বলেছেন কেন?
অথবারবীন্দ্রনাথ সত্যকে কখনো ‘কঠিন’ কখনো ‘দারুণ’ বলেছেন - কবিতার নিরিখে কবির এই উপলব্ধির যথার্থতা বিচার কর।
ক) ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থ থেকে নির্বাচিত রূপনারানের কূলে কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেয়া হয়েছে।
জীবনব্যাপী সাধনার মধ্য দিয়ে কবি জেনেছেন, সত্য বড়ই কঠিন ও নির্মম। তাকে পেতে গেলে দুঃখকে ভালোবেসে আলিঙ্গন করতে হয়। দুঃখের সাগর মন্থন করেই সত্যের সখ্যতা লাভ করা যায়। তার জন্য প্রয়োজন হয় ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’। তপস্যা শেষে মেলে ‘অক্ষয শান্তির অধিকার’। কবির ভাবনায় এই ‘অক্ষয় শান্তির অধিকারই’ হল ‘সত্যের দারুন মূল্য’।
খ) ‘সত্যের দারুন মূল্য’ কীভাবে লাভ হয়:
কবি জীবনের নশ্বরতা নিয়ে কখনো কোন বেদনাহত আকুতি প্রকাশ করেননি। বরং তার অনিবার্যতার কথা সাবলীল ভাবে স্বীকার ও উপস্থাপন করেছেন তার বিভিন্ন লেখায়। এই কবিতায়ও আমরা তারই প্রকাশ লক্ষ্য করি। কবি অনন্ত দুঃখের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন। এই দুঃখ জীর্ণ সময়কালেই তিনি কঠোর তপস্যায় আত্মমগ্ন থেকেছেন। ফলে খুঁজে পেয়েছেন এক নবচেতনায় উদ্ভাসিত এক নতুন ভূখণ্ড, যা অক্ষয় শান্তির আবাসভূমি। আজীবন মৃত্যুর তপস্যার মধ্য দিয়ে দুঃখের সাগর মন্থন করে এই নতুন ভূখণ্ডে পৌঁছানো যায় অর্থাৎ ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ লাভ করা যায় বলে কবি উপলব্ধি করেছেন।
গ) সত্যকে ‘কঠিন’ ও ‘দারুণ’ বলার কারণ :
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন জীবনবাদী কবি। তাই সমগ্র জীবনব্যাপী তিনি জীবনের সাধনা করেছেন জীবনশিল্পী রূপে। এই কাজ করতে গিয়েই তিনি লক্ষ্য করেছেন, জগৎ জুড়ে আছে মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদ, রয়েছে জীবন মৃত্যুর আমরণ খেলা (মৃত্যুর ছলনা)। তাই কবির উপলব্ধি,
জানিলাম এ জগত
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
কবি এও উপলব্ধি করেছেন, এই মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদ ও মৃত্যুর ছলনা উপেক্ষা করে পরম সত্যে পৌঁছানো বড়ই কঠিন এবং দুঃসাধ্য কাজ। অথচ পরম সত্যে পৌঁছানোই কবির জীবনের প্রধান লক্ষ্য। আর এ কারণেই ‘সত্য’কে তিনি ‘কঠিন’ রূপে অভিহিত করেছেন।
---------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন