“সে কখনো করে না বঞ্চনা”
ক) বক্তা কে?
খ) ‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে?
গ) কে, কখনো বঞ্চনা করে না?
ঘ) সে ‘বঞ্চনা’ করে না কেন?
ঙ) বঞ্চনা বলতে কবি এখানে কী বুঝিয়েছেন?
চ) কখন, কোন্ অবস্থায় কবির এই উপলব্ধি?
ছ) কবি কীভাবে এই ভাবনায় উপনীত হয়েছেন? ২০১৫, ২০২৩
ক) বক্তা কে? :
উদ্ধৃত অংশটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে। এখানে বক্তা হলেন কবি রবীন্দ্রনাথ যে ঠাকুর নিজেই।
খ) ‘সে’ কে?
জীবন সায়াহ্নে এসে কবি উপলব্ধি করেছেন, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে এক দারুণ ও কঠিন সত্য। ‘সে’ বলতে কবি এই ‘কঠিন সত্যে’র কথা বলেছেন, যা জীবনের জন্য দারুণ মূল্যবান।
গ) কে বঞ্চনা করে না :
এই কঠিন সত্যকে বহন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন। কিন্তু কবি এই সত্যকে সাদরে বরণ করতে চান। কারণ, এই সত্য জীবনের জন্য দারুণ মূল্যবান। কেননা, এই কঠিন সত্য মানুষকে কঠোর বাস্তবের মাটিতে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং জীবনের চরম সত্যকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে। তাই, কবির শেষ জীবনের উপলব্ধি, এই ‘সত্য’ কঠিন হলেও, ‘সে কখনো করে না বঞ্চনা’।
ঘ) বঞ্চনা না করার কারণ :
জীবন সায়াহ্নে এসে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে সত্য উপলব্ধি করেছেন, তা একদিকে যেমন কঠিন, তেমনি দারুণ মূল্যবান। কেননা, দীর্ঘ পার্থিব জীবনের অভিজ্ঞতায় তিনি উপলব্ধি করেছেন, মৃত্যু আসলে ছলনাময়ী। মৃত্যু তার ভয়াল রূপ দেখিয়ে এবং বৃথা আশ্বাসের ডালি সাজিয়ে মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে। কিন্তু বেদনা বিধুর জীবনের কঠিন সত্যকে ভালোবেসে আলিঙ্গন করতে পারলে, কবির ভাবনায়, প্রতারণা বা বঞ্চনা নয়, সে ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ লাভে সাহায্য করে। কারণ, সত্য শাশ্বত এবং সতত আলোর পথের দিশারী।
ঙ) বঞ্চনা কী :
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি হতাশ হয়েছেন সমসাময়িক বিশ্ব মানবের অশান্তি ও যুদ্ধ উন্মাদনা দেখে। উপলব্ধি করেছেন এ জগৎ স্বপ্ন নয়, কঠিন বাস্তব। কবির কথায়,রক্তের অক্ষরে দেখিলামএই রূপের সামনে স্বপ্নলব্ধ মায়াময় ভাবনার জগৎ যে বাস্তব নয়, নিতান্ত ফাঁকি। কবির চোখে এই ফাঁকি আসলে নিজের প্রতি বঞ্চনার সামিল। জীবনের এই বাস্তবতাকে কবি তাই ‘বঞ্চনা’ বলে অভিহিত করেছেন।
আপনার রূপ,
চ) কখন, কোন্ অবস্থায় কবির এই উপলব্ধি?
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মৃত্যু যন্ত্রণায় কবি একেবারে শান্ত হয়ে পড়েছেন। জীবনের রুশ রস স্পর্শ গন্ধ বর্ণের নির্মোক খসে পড়েছে। এই অবস্থায় দীর্ঘ রোগভোগের পর কবি যেন ‘পারের খেয়ায়’ যাওয়ার পথে ‘ভাষাহীন শেষের উৎসবে’ মেতে উঠেছেন। এই পরিস্থিতিতে কবি উপলব্ধি করেছেন জীবনের সার সত্য :সত্য যে কঠিন
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
ছ) ভাবনা বা উপলব্ধি কীভাবে :
রূপে রসে পূর্ণ মায়াবী এই জগত সংসার অনন্ত জীবন সম্ভারে পূর্ণ। এই মায়াবী জগত মানুষকে প্রতিনিয়ত সত্য বিমুখ করে তোলে। কিন্তু দীর্ঘ জীবনের প্রায় শেষ লগ্নে এসে বিষন্ন কবি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের প্রকৃত সত্যকে। উপলব্ধি করেছেন, আঘাতে-বেদনায় রক্তের অক্ষরে অজস্র সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে ঘটে চলেছে জীবনের বিকাশ।
জীবন মানে কবির কাছে ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’। এই দুঃখের তপস্যার উদ্দেশ্য হলো কঠিন সত্যের মূল্য দিয়ে জীবনের সমস্ত দেনা শোধ করে দেয়া। দেনা শোধ করার মধ্য দিয়েই সম্ভব মৃত্যুতে নিজেকে নিশ্চিন্তে সমর্পণ করা।
এভাবে কঠিন সত্যের মূল্য দিতে গিয়েই কবি তাকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছেন। কারণ, তিনি উপলব্ধি করেছেন এই কঠিন সত্যকে ভালবাসলে ‘সে কখনো করে না বঞ্চনা’।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন