“অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি ধুলোর কলঙ্ক” - ২০২০
ক) এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে?
খ) তারা অবসন্ন কেন?
গ) ‘ধুলোর কলঙ্ক’ বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন?
ঘ) এ প্রসঙ্গে কবির ভাবনার পরিচয় দাও।
ক) কাদের কথা :
বিশ শতকের তিরিশের দশকের কবি সমর সেন প্রণীত ‘কয়েকটি কবিতা’ নামাঙ্কিত কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ নামক কবিতা থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। এখানে কয়লার খনিতে কর্মরত, জীবন যন্ত্রণায় কাতর ও অবসাদগ্রস্থ মানুষদের কথা বলা হয়েছে।
খ) তাদের অবসন্ন হওয়ার কারণ :
কবি সমর সেনের ভাবনায়, মহুয়ার দেশ হলো এমন এক জগৎ যেখানে নাগরিক সভ্যতার দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার রসদ রয়েছে।
কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, পুঁজিবাদের আগ্রাসন অরণ্য ভূমির নির্জনতাকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। জমিহারা মানুষগুলো কয়লা খনির দুর্গম গভীরে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিনিময়ে পাচ্ছে না ভালো-থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মজুরি। প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা এই মানুষগুলো আধুনিক সভ্যতার কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে। সারা শরীরে ‘ধুলোর কলঙ্ক’ মাখা এই মানুষগুলো তাই অবসন্ন হয়ে পড়েছে।
গ) ধুলোর কলঙ্ক কী :
মহুয়ার দেশ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন, সারারাত না ঘুমিয়ে কয়লা খনির শ্রমিকরা কাজ করেন। খনির ভিতরে অভিশ্রাম কয়লা ভাঙার ফলে তাদের পোশাক ও শরীর কয়লার ধুলোয় কালিমালিপ্ত হয়ে পড়ে, মন হয়ে পড়ে অবসাদগ্রস্ত। ‘ধুলোর কলঙ্ক’ বলতে কবি খনি শ্রমিকদের এই ধূলিমলিন দেহ, তার পোশাক ও মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্থ অবস্থাকে বুঝিয়েছেন।
ঘ) এ প্রসঙ্গে কবির ভাবনা :
কবির ভাবনায়, মহুয়ার দেশ হলো এমন এক জগৎ যেখানে নাগরিক সভ্যতার দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার রসদ রয়েছে। রয়েছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ, পথের দু'ধারে দেবদারু বনের রহস্যময়তা, রাত্রের নির্জনতা, আলোড়িত করা সমুদ্রের গর্জন, যা কবিকে মুগ্ধ করে। নাগরিক কবি তাই ছুটে যান সেখানে।
কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন, ক্লান্তিহীন একমাত্রিক পরিতৃপ্তি ছাড়াও মহুয়ার দেশে ছড়িয়ে পড়েছে পুঁজিবাদের আগ্রাসন। সেকারনেই নিবিড় অন্ধকারে তিনি শুনতে পান :
মহুয়া বনের ধারে কয়লার খনির
গভীর, বিশাল শব্দ
শিশির ভেজা নির্মল সকালে দেখা যায়, অবসন্ন মানুষগুলোর শরীরে লেগে আছে ধুলোর কলঙ্ক। মহুয়ার দেশের প্রকৃতি লগ্ন মানুষগুলি আধুনিক সভ্যতার কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। পুঁজিবাদী সভ্যতার আধিপত্যে জীবনের যাবতীয় স্বপ্ন তারা হারিয়ে ফেলেছে। আর এ কারণেই,
ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়
কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন
এভাবে সারারাত পরিশ্রম করেও বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করতে না পারার যন্ত্রণায় মহুয়ার দেশের মানুষগুলো ক্রমশ অবসন্ন হয়ে পড়ছে বলে কবির ভাবনায় ধরা পড়ে।
-----------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন