“অলস সূর্য দেয় এঁকে”
ক) উদ্ধৃত অংশটি কোন কবির কোন কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে?
খ) কবি এখানে সূর্যকে ‘অলস’ বলেছেন কেন?
গ) এ প্রসঙ্গে কবি যে নৈসর্গিক চিত্র এঁকেছেন তার বর্ণনা দাও।
ক) কোন কবির কোন কবিতা :
উদ্ধৃত অংশটি নাগরিক কবি সমর সেনের লেখা ‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
খ) সূর্যকে ‘অলস’ বলার কারণ :
সূর্য হল সৌরমণ্ডলের সমস্ত শক্তির আধার। এই কবিতায়ও সে প্রাণশক্তির প্রতীক। সারাদিনের প্রচন্ড সূর্য কিরণ বিতরণ করে পৃথিবীর জীব মন্ডলকে সে প্রাণবন্ত করে তোলে। দিনশেষে সে যেন নিজেই ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় সে নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে জেগে ওঠার জন্য ফিরে যেতে চায় গভীর ঘুমের দেশে। কবির কল্পনায়, তাই সে এখন শ্রম-ক্লান্ত এক ‘অলস সূর্য’।
গ) ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় নৈসর্গিক চিত্র :
প্রকৃতি প্রেমিক ও নাগরিক কবি সমর সেন প্রকৃতির প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ উপলব্ধি করেছেন এই কবিতায়। ভালোবেসেছেন তার অপরূপ সৌন্দর্যকে। সেই ভালোবাসার টানেই তার কলমের আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন এক নৈসর্গিক চিত্রপট।
অলস সূর্য দেয় এঁকে
গলিত সোনার মত উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ
গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করলে মনে হয় যেন জলের গভীর অন্ধকারে কে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আর জলস্রোতের ধূসর ফেনায় তা উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ হয়ে ফুটে উঠেছে।
ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসেনগর জীবনের এই দুঃস্বপ্নের পাশাপাশি তিনি পরম যত্নে ফুটিয়ে তুলেছেন ‘মেঘ-মদির মহুয়া’র দেশের এক অপরূপ রূপ। যেখানে পথের দু'ধারে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ দেবদারু তার সুশীতল ছায়া বুকে নিয়ে। অপার রহস্যে ঘেরা সেই নৈসর্গিক দৃশ্য কবিকে শুধু মুগ্ধ করে না, তাকে টেনে নিয়ে যায় সীমাহীন স্বপ্ন পূরণের নিশ্চিত আশ্বাস দিয়ে। সেই আশ্বাসে বুক বেঁধে কবি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন :
শীতের দুঃস্বপ্নের মত।
আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল
নামুক মহুয়ার গন্ধ।
যদিও কবির আশা পূর্ন হয়নি। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে কবিকে ফিরে যেতে হয় তার অতীত জীবনবৃত্তে। কারণ, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা অরণ্য জীবনে তাঁর সেই মহুয়ার দেশকে শিল্পায়নের নাম করে কালিমালিপ্ত করে তুলেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন