৩) “ক্রন্দনরতা জননীর পাশে / এখন যদি না-থাকি”
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে / এখন যদি না-থাকি |
ক) ‘এখন’ বলতে কোন সময়ের কথা বোঝানো হয়েছে?
খ) সেই সময় জননী ক্রন্দনরতা কেন?
গ) কবি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে চেয়েছেন কেন?
ক) ‘এখন’ বলতে কোন সময়ের কথা বোঝানো হয়েছে?
কবি মৃদুল দাশগুপ্তের লেখা ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ নামক কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
এই কবিতায় তিনি দেখিয়েছেন, রাজনৈতিক হানাহানিতে সমাজে নেমে আসছে গভীর অবক্ষয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের যে মানবিক সম্পর্ক তা মুছে যাচ্ছে। সমাজ হিংসা ও প্রতিহিংসার ভয়ংকর রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। মানুষ ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সম্প্রীতিবোধ-সহ সমস্ত মানবীয় মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে। বর্তমান শতকের প্রথম দশকে শিল্পের জন্য জমি অধিকরণকে কেন্দ্র করে এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এই বাংলায়। কবি মৃদুল দাশগুপ্ত এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সময়কালকে ‘এখন’ বলে উল্লেখ করেছেন
খ) সেই সময় জননী ক্রন্দনরতা কেন?
কবি লক্ষ্য করেন, এই সময়ে, সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে এবং সেই জমিকে এক ফসলী অথবা অনাবাদি জমি হিসেবে চিহ্নিত করে এই অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ফলে কৃষক সমাজ এই অধিগ্রহণের যৌক্তিকতা বিষয়ে আড়াআড়ি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শুরু হয় ব্যপক গণআন্দোলন। এই আন্দোলন ও পাল্টা আন্দোলনে বাংলার রাজনীতির মঞ্চ উত্তাল হয়ে ওঠে। এক পর্বে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে বাংলার ভূমি। লাঞ্ছিত হয় বাংলার সাধারণ মানুষ। কারও ভাই, কারও-বা মেয়ে নিখোঁজ হয়, জঙ্গলে মেলে তাদের ছিন্ন ভিন্ন মৃতদেহ।
এইসব নারকীয় হত্যা যজ্ঞের পটভূমিতে কবি অনুভব করেন বঙ্গ জননী (জন্মভূমি) যেন কিছু মানুষের দ্বারা লাঞ্ছিত ও বিপন্ন হচ্ছেন। কিছু মানুষের এই অমানবিক আস্ফালনে স্বদেশের মাটি মানুষের রক্তে ও কান্নায় নিদারুণভাবে ভিজে যাচ্ছে। এই রক্তাক্ত ও কান্না ভেজা নিদারুণ পরিস্থিতির কারণে, কবির ভাবনায়, জননী জন্মভূমি যন্ত্রণা কাতর হয়ে পড়েন। এটাই জননীর ক্রন্দনের কারণ।
গ) কবি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে চেয়েছেন কেন?
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ন্যায়দণ্ড, (সঞ্চয়িতা)। কবিতা সংখ্যা - ৭০ (নৈবেদ্য )
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই সমাজ ভাবনার সঙ্গে হয় তো বা একাত্মতা বোধ করতেন। তাই তাঁর মতো তিনিও হয়ে উঠেছিলেন একজন সমাজ-সচেতন ও মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী মানুষ। মানুষের কল্যাণ যেমন তাঁকে আহ্লাদিত করে, তেমনি অকল্যাণ তাঁকে ব্যথিত করে। আলোচ্য সময়ে জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমাজের যে নগ্নতা ও অবক্ষয় তিনি দেখেছিলেন, তা কবিকে একাধারে ব্যথিত ও অস্থির করে তুলেছিল। উল্টো দিকে, এই সমাজেরই অসংখ্য মানুষকে দেখেছিলেন নির্বিকার থাকতে। কিন্তু সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ও মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার তাগিদেই তিনি প্রতিবাদী না হয়ে পারেননি। তিনি বুঝেছিলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করাটাও এক ধরণের অন্যায়। আর এই মনোভাবের কারণেই সমাজ সচেতন ও মানবতাবাদী চিন্তক হিসাবে কবি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে চেয়েছিলেন।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন