“ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে আসে শীতের দুঃস্বপ্নের মতো।”
ক) ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
খ) তা কীভাবে কেন ঘুরে ফিরে ঘরে আসে?
অথবাপঙক্তিটির তাৎপর্য লেখো।
গ) ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মত’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ক) ধোয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস :
নাগরিক কবি সমর সেনের ‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
এই কবিতায় কবি নগর পরিবেশে অস্তগামী সূর্যের স্বর্ণালী আলোয় সান্ধ্যকালীন সৌন্দর্যের যে চিত্রকল্প তুলে ধরেছেন তা আসলে ক্ষণস্থায়ী। কারণ, অল্পক্ষণের মধ্যেই এই সৌন্দর্যকে ঢেকে দেয় যন্ত্র সভ্যতার বিষবাষ্প। শিল্প কারখানা থেকে বেরিয়ে আসা এই বিষবাষ্প শীতের শিশিরের সঙ্গে মিশে ভয়ংকর ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে। এই ধোঁয়াশাকেই এই কবিতায় ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। কবির কল্পনায় তা ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতো’ মনে হয়।
খ) কীভাবে এবং কেন ঘুরে ফিরে ঘরে আসে :
যন্ত্র সভ্যতার এই বিষবাষ্প নাগরিক জীবনকে ঘিরে ধরে থাকে সর্বক্ষণ। সাময়িক বিরতির পর তা ঘুরেফিরে তা পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে। আসলে পুঁজিবাদী সমাজে মুনাফাই মূল কথা। পরিবেশ ও আম নাগরিকের জীবন যন্ত্রণা সেখানে মূল্যহীন। তাই শিল্প কারখানার বিষবাষ্পকে নিয়ন্ত্রণ করার দায় কেউ নেয় না। এ কারণেই, কবির ভাষায় :
ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে
শীতের দুঃস্বপ্নের মতো।
গ) ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতো :
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লব পুঁজিবাদী সমাজের কাছে মুনাফা লোটার হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ফলে শিল্প উন্নয়নের দানবীয় চেহারা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীময়। শিল্পের হাত ধরে দুর্বার গতিতে বেড়ে ওঠে নগরায়ন। ফলে শিল্প কারখানার ধুলো ও ধোঁয়ায় নগরের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে যায়। শীতকালে এই দূষণ ভয়ানক চেহারা নেয়। এই বিষাক্ত ধুলো ও ধোঁয়া শীতের শিশিরকে আশ্রয় করে ধোঁয়াশায় রূপ নেয় এবং তাতেই ভরে যায় চতুর্দিক। কবির কথায়,
ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে
শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়া সেই ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাসে’ কবির যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। শহর জীবনকে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। নাগরিক কবি সমর সেন এই পরিবেশকেই ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতো’ বলে অভিহিত করেছেন।
-------------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন