“এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে / মাঝে মাঝে শুনি”
খ) ‘এখানে’ বলতে তিনি কোন জায়গার কথা বলেছেন?
গ) এখানে তিনি মাঝে মাঝে কী শুনতে পান?
ঘ) বিষয়টি কবির অসহ্য লাগে কেন?
ক) বক্তা :
উদ্ধৃত অংশটি কবি সমর সেনের লেখা ‘মহুয়ার দেশ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃত অংশটির বক্তা কবি সমর সেন নিজেই।
খ) ‘এখানে’ বলতে কোন্ জায়গা :
নাগরিক কবি সমর সেন নগর জীবনের একঘেয়েমি ও ক্লান্তি কাটাতে শহর থেকে বহুদূরে ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’-এ যেতে চেয়েছিলেন। ‘এখানে’ বলতে কবি এই ‘মেঘ মোদির মহুয়ার দেশে’র কথাই বলেছেন, যেখানে পথের দু'ধারে সারি সারি দেবদারু গাছের রহস্যময় ছায়া, মহুয়া ফুল ও তার গন্ধ কবিকে নগর জীবনের ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করবে বলে তার বিশ্বাস ছিল।
গ) কবি কী শুনতে পান :
কিন্তু কবির এই বিশ্বাস বাস্তবের কঠিন মাটিতে অঙ্কুরিত হতে পারেনি। ফলে তার আশা ভঙ্গ হয়। তিনি লক্ষ্য করেন, রাতের নিবিড় অন্ধকারের আবরণ ভেদ করে কানে আসে মহুয়া বনের কয়লা খনিগুলি থেকে গভীর ও বিকট শব্দ। এই গভীর ও বিকট শব্দই তিনি মাঝে মাঝে শুনতে পান।
ঘ) কবির অসহ্য লাগার কারণ :
কবি সমর সেন অনেক আশা নিয়ে ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’ এ গিয়েছিলেন। নগর জীবনের দূষণ এড়িয়ে একটি সুন্দর ও ক্লান্তিহীন সময় কাটাতে তার এই মহুয়ার দেশে আগমন।
কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন, অরণ্যভূমির সেই মনমুগ্ধকর নির্জনতা, মহুয়া ফুল ও তার গন্ধের সৌন্দর্য, দেবদারু গাছের রহস্যময় ছায়া কিংবা দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস রূপী কল্লোল ধ্বনি - সবকিছুকেই ম্লান করে দিয়েছে যন্ত্র সভ্যতার নির্লজ্জ আস্ফালন। একদিকে মহুয়া বনের ধারে কয়লা খনির বিকট শব্দ, অন্যদিকে কয়লার কালি মাখা ঘুমহীন মানুষের অবসন্ন শরীর ও মন তার শহরে জীবনের ক্লান্তিকে দুঃস্বপ্নের পর্যায়ে নিয়ে যায়।
তাই তাঁর মনে হতে থাকে এই অরণ্যভূমির নিবিড় অন্ধকার ক্লান্তিকর ও অসহ্য।
----------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন