“গভীর, বিশাল শব্দ,”
ক) শব্দটি কীসের?
খ) শব্দকে এখানে ‘গভীর’ ও ‘বিশাল’ বলা হয়েছে কেন?
গ) কবির চেতনায় এই শব্দ কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে?
ক) কীসের শব্দ :
নাগরিক কবি সমর সেন নগর জীবনের একঘেয়েমি ও ক্লান্তি কাটাতে শহর থেকে বহুদূরে ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’-এ গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন, রাতের নিবিড় অন্ধকারের আবরণ ভেদ করে কানে আসছে এক গভীর ও বিকট শব্দ। এই গভীর ও বিশাল শব্দ আসলে মহুয়া বনের ধারে কয়লা খনিগুলি থেকে আসা শব্দ, যা তিনি মাঝে মাঝে শুনতে পাচ্ছিলে।
খ) ‘গভীর’ ও ‘বিশাল’ বলার কারণ :
‘গভীর’ শব্দের অর্থ হল অতি নিম্ন, দুর্গম বা গম্ভীর। ‘ এই কবিতায় মহুয়া বনের ধারে যে কয়লা খনিগুলো আছে তার গভীরতা ও দূর্গমতাকে নির্দেশ করছে। কারণ, মাটির অনেক গভীরে গিয়ে এই কয়লা সংগ্রহ করতে হয়।
অন্য দিকে বিশাল’ শব্দের অর্থ বৃহৎ। কয়লা খনির গভীরে খনি শ্রমিকদের কয়লা ভাঙা ও তা উত্তোলনের সময় যে বিকট শব্দ হয় তা মহুয়া বনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শোনা যায়। এই বিকট শব্দ ও তার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুনতে পাবার বিষয়টিকে প্রকাশ করার জন্য ‘শব্দ’কে ‘বিশাল’ বিশেষণে বিশেষিত করা হয়ছে।
গ) কবির চেতনায় শব্দের প্রভাব :
কবি সমর সেন মহুয়ার দেশ কবিতায় প্রগতির কাছে প্রকৃতির অসহায় আত্মসমর্পণকে ব্যক্ত করেছেন। শহুরে জীবনের একঘেয়েমি, বিষন্নতা ও অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে তিনি মহুয়ার দেশে যেতে চেয়েছিলেন। পেতে চেয়েছিলেন সেখানকার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া। উপভোগ করতে চেয়েছিলেন নির্জন প্রকৃতির উদার সান্নিধ্য।
মাঝে মাঝে শুনিকবির চেতনায় তাই জেগে ওঠে কঠিন এক দুঃস্বপ্ন। সেখানকার এই কয়লা খনিগুলো মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন তো করেইনি, উল্টে আরও অনিশ্চিতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে । কারণ, কবির ভাষায় :
মহুয়া বনের ধারে কয়লার খনির
গভীর, বিশাল শব্দ,
অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি ধুলোর কলঙ্ক
ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়
কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।
সুতরাং কয়লা খনির এই গভীর ও বিশাল শব্দে নিদারুণভাবে কবির স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। চেতনায় জেগে উঠেছে বিষন্নতা ও দুঃস্বপ্নে ভরা এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ছবি।
-----------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন