ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয় / কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।” - ২০১৫
ক) এখানে ‘তাদের’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? - ২০১৫
খ) তাদের ঘুমহীন চোখে ‘ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন’ হানা দেয় কেন? - ২০১৫
অথবা,তাদের চোখ ঘুমহীন কেন?
গ) ‘কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ঘ) মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
ক) ‘তাদের’ বলতে কাদের কথা :
কবি সমর সেন প্রণীত ‘কয়েকটি কবিতা’ নামাঙ্কিত কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ নামক কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। এখানে ‘তাদের’ বলতে কয়লার খনিতে কর্মরত, জীবন-যন্ত্রণায় কাতর ও অবসাদগ্রস্থ ‘ঘুমহীন’ অরণ্য ভূমির আদিবাসী সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে।
খ) ‘ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন’ হানা দেয়ার কারণ :
অষ্টাদশ শতকে ঘটে যাওয়া ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লবের সূত্র ধরে ছড়িয়ে পড়া নগরায়ন ও তার দোসর দূষণ, যেমন নাগরিক জীবনকে ক্লান্ত করে তোলে, তেমনি প্রকৃতির অনাবিল পবিত্রতাকেও সে গ্রাস করে ফেলে। সেই আগ্রাসনের শিকার হয় মহুয়ার দেশের শ্রমজীবী মানুষগুলোও। নিজেদের অরণ্য ভূমির মালিকানা হারিয়ে কয়লা খনির শ্রমিকের জীবন যাপন তারা একপ্রকার বাধ্য হয়। আর এ কারণেই প্রতিদিন ঘুমহীন চোখে ‘ধুলোর কলঙ্ক’ গায়ে তারা নামতে বাধ্য হয় কয়লা খনির গভীর খাতে।
কিন্তু বিনিময়ে তাদের মেলেনি উপযুক্ত মজুরি বা জীবনের নিরাপত্তার কোনো গ্যারান্টি। ফলে প্রতিদিনের এই বঞ্চনা ও নিরাপত্তাহীনতার চাপে তাদের শরীর ও মন ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। কবির কথায়,
ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়
কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।
গ) ‘কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন’ বলতে কী বোঝায় :
‘কীসের’ শব্দটি অনিশ্চয়তা বাচক কোনো অর্থের ইঙ্গিত দেয়। কবি যে ‘ক্লান্ত দুঃস্বপ্নে’র কথা এই কবিতায় তুলে ধরেছেন, তা হয়তো এমন কোনো অনিশ্চিত জীবন সংগ্রামের বার্তা নিয়ে আসে, যেখান থেকে মুক্তি কীভাবে আসবে, তা তাঁর নিশ্চিত ভাবে জানা ছিল না। অথচ প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতিরই অংশ হওয়ায়, তাদের তো এমন জীবন প্রাপ্য ছিল না। তাই জমি-হারা এবং সুবিধাবঞ্চিত এই সমস্ত মানুষের জন্য সীমাহীন ক্লান্তি ও দুঃস্বপ্ন ভরা অন্যায্য ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জীবনের যে সম্ভাব্য ছবি তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, তাকেই ‘কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন’ বলে অভিহিত করেছেন।
ঘ) মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট :
কবি সমর সেন মহুয়ার দেশকে দেখেছেন প্রকৃতির এক অনিন্দ্য সুন্দর ও মন ভালো করা জায়গা। কবির রোমান্টিক ভাবনায় দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য ঘেরা ছায়া নিবিড় বনাঞ্চল, যেখানে রয়েছে নগরজীবনের ক্লান্তি হরণকারী মহুয়া ফুল ও তার গন্ধ। এই মহুয়া ফুল ও তার গন্ধ এবং দেবদারুর দীঘল ছায়ার টানে সেখানে গিয়ে দেখেন তার রোমান্টিক ভাবনার গোড়ায় গলদ রয়েছে।
কারণ, প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা জনজাতি আজ মাতৃহারা সন্তানের মতো অসহায় জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। শত সহস্র বছরের অরণ্যের অধিকার হারিয়ে তারা এখন পুঁজিপতি শ্রেণির কয়লা খনির ‘ধুলোর কলঙ্ক’ মাখা শ্রমিকের পরিণত হয়েছে। জীবনের চারপাশে নেমে এসেছে সীমাহীন বঞ্চনা ও নিরাপত্তাহীনতার অলংঘনীয় বেড়ী। ফলে ঘুমহীন রাত্রি যাপনে বাধ্য হওয়া শরীরে দেখা দেয় ক্লান্তি ও অবসাদ যা কবির বর্ণনায় ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন হিসাবে বর্ণীত হয়েছে।
মহুয়ার দেশ ও তার আঁচলে বেড়ে ওঠা মানুষের এই করুণ পরিণতির কাব্যিক উপস্থাপনা প্রসঙ্গেই কবি উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
-----------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন