সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

    “বিজ্ঞানই সভ্যতার উন্নতির মাপকাঠি। বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানেই সমাজের অগ্রগতি।”–আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়

    ভূমিকা :

    সভ্যতার আদি লগ্নে মানুষ ছিল অরণ্যচারী ও গুহাবাসী। কালক্রমে তার বুদ্ধির বিকাশ ঘটলো। বুদ্ধি জন্ম দিল চেতনার। এই চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হলো মানবসমাজ। ফলে মানুষ ক্রমে দুরন্ত নদীকে বশ করলো, হার মানালো দুস্তর সমুদ্র ও অনন্ত মহাকাশকে। গড়ে উঠলো মানব সভ্যতার সুরম্য ইমারত। এই গঠনকার্যে যার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান রয়েছে, তা হল বিজ্ঞান ও মানুষের বিজ্ঞান চেতনা।

    বিজ্ঞান কী

    বিজ্ঞান হলো বিশেষ জ্ঞান বা বিমূর্ত জ্ঞান, বিভিন্ন প্রযুক্তির মধ্যে যার বাস্তব রূপায়ণ ঘটে। উন্নত সভ্যতার মূল চাবিকাঠিই হল বিজ্ঞান।

    বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :

    যে দিন থেকে মানুষ আগুনের ব্যবহার শিখেছে, চাকা আবিষ্কার করেছে, সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। শিল্পবিপ্লবের সময়কালে বাষ্পশক্তির আবিষ্কার এই জয়যাত্রাকে করেছে তরান্বিত। এরপর আবিষ্কার হল বিদ্যুৎশক্তি। বিজ্ঞানলক্ষ্মীর সর্বশেষ দুটি শক্তিবর হল পারমাণবিক শক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এই সব মহার্ঘ্যদানে বলীয়ান হয়ে মানুষ গড়ে তুলেছে নতুন সভ্যতা।

    দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের দান :

    দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। প্রভাতের প্রত্যুষলগ্ন থেকে নিশীথে শয্যাগ্রহন পর্যন্ত আমাদের জীবনে ছায়াসঙ্গী এই বিজ্ঞান। প্রভাতে অ্যালার্ম ঘড়ির কলরবে শুরু হয় আমাদের সকাল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সংবাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় সংবাদপত্র, বেতারে এবং দূরদর্শনের মধ্যেমে। চলভাষে প্রিয়জনের সাথে সেরে নেওয়া হয় প্রয়োজনীয় কথাবার্তা। টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ইত্যাদির উপস্থিতিতে গৃহকোণ আজ পরিণত হয়েছে ছোটো ছোটো বিজ্ঞান-গৃহে।

    কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

    কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান যথেষ্ট। ভূমিকর্ষণ থেকে বীজ বপন, জলসেচ, ফসল তোলা, ঝাড়াই-মাড়াই, সংরক্ষণ ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই লেগেছে বিজ্ঞানের জিয়নকাঠির ছোঁয়া। বিজ্ঞানের অকৃপণ দানেই ঊষর মরু হয়ে উঠেছে শস্য প্রসবিনী।

    শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

    শিল্পে বিপ্লব এনেছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান চালিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির দানবীয় শক্তিতে গতি এসেছে কাজে। কলকারখানা, ফ্যাক্টরি, শিল্পসংস্থা প্রভৃতি শিল্পক্ষেত্রে আজ বিজ্ঞান তার ডালি নিয়ে হাজির হয়েছে।

    চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

    বিজ্ঞান চিকিৎসাজগতে এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন।বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিষেধক, ওষুধপত্র ও টিকা আবিষ্কারের ফলে মৃত্যুহার বহুলাংশে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। এক্স-রে, ইসিজি, হৃৎপিণ্ড পরিবর্তন, ব্রেন অপারেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান রয়েছে। কম্পিউটার নামক গণকযন্ত্র ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবিষ্কার চিকিৎসাক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

    শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

    শিক্ষা সংক্রান্ত অধিকাংশ জিনিসই বিজ্ঞানের কৃপাধন্য। বই, খাতা, কলম, বোর্ড সবই বিজ্ঞানের দান । আজকালকার

    শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থান করে নিয়েছে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির নানা উপকরণ। কাঠের ব্লাকবোর্ডের জায়গা নিয়েছে ডিজিটাল বোর্ড।

    যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান :

    যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান এনেছে দুরন্ত গতি। দূরকে করেছে নিকট। মানুষ আজ পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে অসীম আকাশে পাড়ি দিচ্ছে বিজ্ঞানের কল্যাণে। ফাইভ-জি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ড্রাইভার বিহীন এবং নিরাপদ পথ চলার হাত-ছানি দিচ্ছে মানুষকে।

    অবসর বিনোদনে বিজ্ঞান :

    মানুষের কর্মজীবনে ক্লান্তি দূরীকরণে অবসর বিনোদনের জন্য বিজ্ঞান দিয়েছে টিভি, সিনেমা, কম্পিউটার, মোবাইল আরো অনেক কিছু।

    প্রযুক্তিবিদ্যায় বিজ্ঞান :

    দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও বিপ্লব এসেছে। ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ প্রভৃতি সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে পৃথিবী গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেট ও মুঠোফোনের এক ছোঁয়ায় তামাম দুনিয়া চলে এসেছে মুঠোয়।

    বিজ্ঞানের কুফল :

    তবে প্রদীপের তলায় যেমন অন্ধকার থাকে, ঠিক তেমনি বিজ্ঞানেরও এক হাতে রয়েছে অমৃত ও অপর হাতে বিষভাণ্ড। বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানের অগ্রগতি। বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান মানুষ আজ মারণাত্মক অস্ত্র নিয়ে রণোন্মত্ত। ড্রোন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মনুষ্য বিহীন বিমান দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নির্বিচার ধ্বংস-যজ্ঞ চালাচ্ছে মানুষ অবলীলায়।

    উপসংহার :

    বস্তুত, মানুষের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হলেই বিজ্ঞান হয়ে উঠবে প্রগতির হাতিয়ার আর অগ্রগতির বাহন। সুতরাং, বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের শুভবুদ্ধির মেলবন্ধনেই পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে কল্পলোকের স্বর্গ-উদ্যান। তাই অকল্যাণকর কাজে নয়, মানুষের মঙ্গলসাধনে ব্যবহার করতে হবে বিজ্ঞান ও তার প্রযুক্তিকে।

    --------xx---------

    মন্তব্যসমূহ

    বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি - সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর

    ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ

    ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান্ — অতুল প্রসাদ সেন  ভূমিকা : জাতীয় সংহতি হল একটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি সাধারণ পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা। এর অর্থ হল, আমাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও, আমরা এই সত্যকে স্বীকার করি যে, আমরা সবাই এক। এটি কেবল একটি জাতীয় অনুভূতি নয়, এটা সেই চেতনা যা সমস্ত উপভাষা ও বিশ্বাসের মানুষকে একই প্রচেষ্টায় একত্রিত করে। জাতীয় একীকরণের সংজ্ঞা: ডাঃ এস. রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, national integration cannot be made by bricks and mortar, mould and hammer, but it quietly grows in people’s minds through education.1️⃣ এইচ এ গণি সংজ্ঞায়িত করেছেন, “National integration is a socio-psychological and educational process through which a feeling of unity and harmony develops in the hearts of the people and a sense of common citizenship or feeling of loyalty to the nation is fostered among them”2️⃣ এককথায়, জাতীয় সংহতির ধারণার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্...

    বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি । প্রশ্ন ও উত্তর

    বাংলা বই - দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চমাধ্যমিক 'বাংলা বই'য়ে👨তোমাকে স্বাগত 💁 তোমার প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরটি পেতে ওপরের মেনু বারের বিষয় মেনুতে ক্লিক করো । গল্পের প্রশ্ন চাইলে ‘ গল্পের  প্রশ্ন’  ট্যাবে , কবিতার প্রশ্ন চাইলে ‘ কবিতার প্রশ্ন’ ট্যাবে ক্লিক করো ।  এভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ের  ট্যাবে  ক্লিক করে প্রশ্নের পাতায় যাও। সেখানে দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রশ্ন ও উত্তর খোঁজ। অথবা নিচের প্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক করো। সকলের জন্য শুভকামনা রইল। বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো। ১)  দ্বাদশ শ্রেণির গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ২)  দ্বাদশ শ্রেণির কবিতা 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৩)  দ্বাদশ শ্রেণির নাটক 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৪)  আন্তরজাতিক কবিতা ও ভারতীয় গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৫)  দ্বাদশ শ্রেণির পূর্নাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ  👉  প্রশ্ন ও উত্তর ৬)  দ্বাদশ শ্রেণির শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৭)  দ্বাদশ শ্রেণির ভাষা বিভাগ 👉   প্রশ্ন ও উত্তর   ৮)  দ্বাদ...

    বাংলার ঋতুরঙ্গ বা বাংলা ঋতু বৈচিত্র্য

     বাংলার ঋতুরঙ্গ বা ঋতু বৈচিত্র্য বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। — জীবনানন্দ দাস ভূমিকা : ঋতুবৈচিত্র্যের বর্ণিল উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিপূর্ণ। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই বাংলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর বৈচিত্র্যময় ঋতুরূপ। ভিন্ন ভিন্ন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে পর্যায়ক্রমে ছয়টি ঋতু ঘুরে ফিরে আসে এই বাংলায়। প্রতিটি ঋতুই স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে অপরূপা। বাংলা প্রকৃতির এই অপরূপ রূপে মুগ্ধ হয়ে জীবনানন্দ দাশ একে ‘ রূপসী বাংলা ’ বলে অভিহিত করেছেন। ঋতু বৈচিত্রের কারণ : বাংলাদেশ  কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়াতে তাই নিরক্ষীয় প্রভাব দেখা যায়। এখানেই রয়েছে বাংলার ঋতু বৈচিত্রের মূল চাবিকাঠি।  নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত এখানে হালকা শীত অনুভূত হয়। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল চলে। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। ছয় ঋতুর ‘রূপসী বাংলা’ : বাংলার এই ছটি ঋতু যেন বিনি সুতোয় গাঁথা মালার মতো। এই মেলায় পর পর গাঁথা আছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও ঋতুরাজ বসন্ত। প্রতি ...

    নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ

    নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ  নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্প অবলম্বনে নিখিল চরিত্রের বিশ্লেষণ করো। নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ সূচনা : মার্কসবাদী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে নিখিল একজন সহযোগী চরিত্র। সম্পর্কে কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু। কথকের বর্ণনায় সে একজন ‘রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু অলস প্রকৃতির লোক’। বন্ধু বৎসল মানুষ : তবে নিখিল অত্যন্ত বন্ধুবৎসল মানুষ। তাই সে মৃত্যুঞ্জয়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে তার ভাবনায় অসঙ্গতি কোথায়। শুধু তাই নয়, নানাভাবে সে মৃত্যুঞ্জয় ও তার পরিবারের পাশে থাকে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আন্তরিক ও মানবিক : নিখিল আবেগ অনুভূতিহীন মানুষ নয়। নিরন্ন মানুষের অসহায় মৃত্যু এবং কিছু না করতে পারার যন্ত্রণায় যখন মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করে ওঠে, তখন নিখিলের মনটাও খারাপ হয়ে যায়। মানুষের প্রতি আন্তরিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের কারণেই সে প্রতি মাসে তিন জায়গায় নিয়মিত অর্থ সাহায্যও পাঠায়। যুক্তিবাদী চিন্তা: তবে নিখিল অত্যন্ত যুক্তিবাদী। সে জানে, রিলিফ মানে আসলে একজন...

    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    প্রবন্ধ রচনা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে একজন মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। শিক্ষাজীবন : মধুসূদন দত্ত শিক্ষা গ্রহণ পর্ব শুরু হয় মায়ের তত্ত্বাবধানে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায়। পরে সাত বছর বয়সে কলকাতা আসেন এবং খিদিরপুর স্কুলে দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।  এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী জীবনে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে।  এই উদ্দেশ্যেই ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি খ্রিস্ট...

    ভিক্ষা দেওয়ার মতো অস্বাভাবিক পাপ যদি আজও পুণ্য হয়ে থাকে...

     “ভিক্ষা দেওয়ার মতো অস্বাভাবিক পাপ যদি আজও পুণ্য হয়ে থাকে, জীবনধারণের অন্নে মানুষের দাবি জন্মাবে কীসে?” ক) কে ভাবছে একথা? অথবা, বক্তাকে? খ) তার এরূপ (‘ভিক্ষা দেওয়া’কে অস্বাভাবিক পাপ) ভাবার কারণ কী? গ) এ প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। ক) বক্তা : উদ্ধৃত অংশটি মানবদরদী কথাকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্প থেকে নেয়া হয়েছে। এই গল্পের বাস্তববাদী চরিত্র নিখিলের ভাবনায় উদ্ধৃত ভাবনাটি প্রকাশিত হয়েছে। খ) এরূপ ভাবার কারণ : নিখিল বাস্তববাদী মানুষ। যুক্তিবোধ তার চিন্তা-চেতনাকে প্রতিনিয়ত শাণিত করে তোলে। তাই কিছু করার আগে সে যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে এবং তথ্য দিয়ে যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার এই যুক্তিবাদী চিন্তা-চেতনাই তাকে ‘রিলিফ’ দেওয়ার বিষয়টিকে অযৌক্তিক প্রতিপন্ন করে। কারণ, এই ‘রিলিফ’ তার কাছে ভিক্ষা দেওয়ার সমতুল্য। প্রকৃতপক্ষে, ‘মধুর আধ্যাত্বিক নীতি’র মোড়কে ভিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে জীবনধারণের অন্নে মানুষের যে জন্মগত দাবি, তাকে কৌশলে অস্বীকার করা হয়। এই কারণে নিখিলের ভাবনায়, ‘সেটা অস্বাভাবিক পাপ’ এবং ‘অনিয়ম’। তাই তার এমন ভাবনা। গ) ...

    ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার

    ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার : ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক ছোটগল্প হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটি কতটা সার্থক হয়েছে আলোচনা করো। ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক 👉 ভূমিকা : ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্ত সহজ সরল, ........ অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। কথাগুলো বলেছিলেন বাংলা ছোটগল্পের সার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিতার ছন্দে বলা এই অংশতেই রয়েছে সার্থক ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যে র যথাযথ বিবরণ। এডগার অ্যালান পো -এর মতে, যে গল্প অর্ধ থেকে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে। ছোটগল্পে জীবনের সামগ্রিক দিকটি উপন্যাসের মতো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত না হয়ে, তার খণ্ডাংশ নিয়ে পরিবেশিত হয়। এজন্য ছোটগল্প যথাসম্ভব বাহুল্যবর্জিত, রসঘন ও নিবিড় হয়ে থাকে। সংগত কারণেই এতে চরিত্রের সংখ্যা হয় খুবই সীমিত। ছোটগল্পের প্রারম্ভ ও প্রাক্কাল সাধারণত এবং খানিকটা নাটকীয়ভাবেই শুরু হয়। 👉   ছোটগল্পের বৈশ...

    রচনা : মৃণাল সেন

    প্রবন্ধ রচনা : মৃণাল সেন ভূমিকা : মৃণাল সেন ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে এক বন্ধনীতে উচ্চারিত হতো তার নামও। জন্ম ও শিক্ষাজীবন :  মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম । এখানেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। এর পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাথমিক কর্ম :  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি সাংবাদিকতা, ওষুধ বিপণনকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন। চল্লিশের দশকে মৃণাল সেন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসেবেও কাজ শুরু করেন। রাজনৈতিক দর্শন :  আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী মৃণাল সেন দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসেবে ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য হন। ছবি পরিচালনা : বাংলা, ওড়ইয়আ, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র পরিচালনা করে তিনি বহুভাষিক চিত্র পরিচালক হিসেবে খ্যাতি...

    মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ

    মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় এর চরিত্র আলোচনা কর মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ 👉 ভূমিকা : সমাজ সচেতন কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ছোটগল্প ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’। ১৯৪৩ সালের ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তিনি রচনা করেছেন এই গল্প। গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দিয়ে এঁকেছেন একের পর এক দৃশ্যপট। এই দৃশ্যপটগুলো বিশ্লেষণ করলেই ধরা পড়ে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ। 👉  মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র 👉 মানব দরদী মন : শহর কলকাতায় অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎই একদিন মৃত্যুঞ্জয় ‘অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য’ প্রত্যক্ষ করে। মানুষের এই মৃত্যুবরণ তার দরদি মনের গভীরে তৈরি করে অপূরণীয় ক্ষত। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। 👉 পরোপকারী ইচ্ছা শক্তি : এদিকে, কীভাবে এই মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা যাবে, সেই ভাবনায় তার হৃদয়মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে, খাওয়া-ঘুম ছুটে যায়। সিদ্ধান্ত নেয়, নিজের সর্বস্ব দিয়ে এই মৃত্যুর বিরুদ্ধে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। 👉 আবেগপ্রবণ : মৃত্যুঞ্জয়ের মন...

    কবিতা : ‘আমি দেখি’ : শক্তি চট্টোপাধ্যায়

     কবিতা : ‘আমি দেখি’ কবিতা : ‘আমি দেখি’ : শক্তি চট্টোপাধ্যায় কবি : শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘Aami Dekhi’ - a Poetry, written by Sakti Chattopadhyay  গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও আমার দরকার শুধু গাছ দেখা গাছ দেখে যাওয়া গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার আরবদের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার বহুদিন জঙ্গলে কাটেনি দিন বহুদিন জঙ্গলে যাইনি বহুদিন শহরেই আছি শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায় সবুজের অনটন ঘটে...                               তাই বলি, গাছ তুলে আনো                               বাগানে বসাও আমি দেখি                               চোখ তো সবুজ চায়!                               দেহ চায় সবুজ বাগান                             ...