“আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব’ নাটক।” — ২০১৫
🔘 অভাবের চিত্র ‘বিভাব’ নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখো।
নাট্যকার শম্ভু মিত্রের লেখা ‘বিভাব’ নাটকে আমরা দেখতে পাই একজন ভদ্রলোক সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্র ঘেঁটে শম্ভু মিত্রের লেখা নাটকের নাম দিয়েছেন ‘বিভাব’। ‘বিভাব’ শব্দের অর্থ হল, মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া শোক, হাস্য, রাগ, রতি, আনন্দ ইত্যাদি নয়টি রসানুভূতির হেতু বা কারণ।
কিন্তু নিজের নাট্য ভাবনা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই নামের বিরোধ খুঁজে পেয়েছিলেন নাট্যকার শম্ভু মিত্র। প্রবল অভাব থেকেই তাদের এই নাটকের জন্ম। তাই, নাট্যকারের মনে হয়েছে, তাদের এই নাটকের নাম ‘বিভব’ নয়, হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’।
একটি নাটকের সুস্থ উপস্থাপনা এবং ভালো প্রযোজনার জন্য দরকার হয় ভালো মঞ্চ, দৃশ্য অনুযায়ী মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যপট, আলোক প্রক্ষেপণের কৃৎকৌশল ইত্যাদি। কিন্তু অর্থনৈতিক দৈন্য নাটক অভিনয়ে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণে, এই নাটক মঞ্চস্থ করার সময় কোন ভাল মঞ্চ ছিল না, ছিলনা আলো বা ঝালর জাতীয় মঞ্চ সজ্জার বিভিন্ন উপকরণ। থাকার মধ্যে ছিল শুধু নাটক করার অদম্য আকাঙ্ক্ষা। এর উপর ছিল সরকারের চূড়ান্ত অসহযোগিতা। যেখানে পেশাদারী মঞ্চকে খাজনা দিতে হয় না, সেখানে গ্রুপ থিয়েটারকে তা দিতে বাধ্য করা হয়। সরকারের এই বিমাতৃসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিকে কটাক্ষ করে নাট্যকার লিখেছেন, “...আমরা তো নাটক নিয়ে ব্যবসা করি না, তাই সরকার আমাদের গলা টিপে খাজনা আদায় করে নেন।”
বস্তুত, বিশ শতকে বাংলা নাট্য আন্দোলনে অভিনয় রীতি এবং নাট্যশৈলীতে যে অভিনবত্ব আসে, তার একটা বড় কারণ হল, নাটক মঞ্চস্থ করার প্রয়োজনীয় অর্থ ও পরিকাঠামোর এই অভাব। এভাবে অভিনয় রীতি ও নাট্যশৈলীর পরিবর্তন সহ, গ্রুপ থিয়েটারের প্রবল অভাবের এই চিত্রই ‘বিভাব’ নাটকে প্রকাশিত হয়েছে।
------------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন