“আমি তা পারি না। যা পারি কেবল” - ২০১৮, ২০২২
খ) তিনি কী পারেন না?
গ) তিনি কেন তা পারেন না?
অথবা,
তার এই বক্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।
ঘ) না পারার বেদনা তাঁকে কীভাবে আলোড়িত করেছে কবিতা অবলম্বনে লেখো।
ঙ) তিনি কী পারেন?
অথবা,
বক্তা কীভাবে তাঁর কর্তব্য পালন করতে চান?
ক) আমি কে?
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। লিখেছেন কবি মৃদুল দাশগুপ্ত। এই কবিতায় ‘আমি’ বলতে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত নিজেকেই বুঝিয়েছেন।
খ) তিনি কী পারেন না?
কবি বাংলার কৃষককে বঙ্গজননীর সন্তান হিসেবে দেখেছেন। কৃষিজমি আন্দোলনের সূত্র ধরে কৃষি জমি রক্ষার্থে যখন কৃষক পরিবারের সন্তান নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বলি হয়েছেন, তখন কবির কাছে তা ‘বঙ্গজননীর সন্তান হত্যা’ হিসাবেই বিবেচিত হয়েছে। এই হত্যা তার কাছে জঘন্য এবং অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেছেন, তার সহ-নাগরিকদের বড় অংশই এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিদারুণভাবে নিস্পৃহ থাকছেন। প্রতিবাদ না জানিয়ে তারা যেন বিধাতার কাছে বিচারের ভার ছেড়ে দিয়ে নিজের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন।
প্রতিবাদ না জানিয়ে এবং বিধির কাছে বিচার চাওয়ার মত অযৌক্তিক ভাবনার দ্বারা পরিচালিত হয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতাকে তিনি অস্বীকার করতে পারেন না।
গ) তিনি কেন তা পারেন না?
অথবা,
তাঁর এই বক্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।
সমাজ সচেতন ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন কবির কাছে প্রতিবাদ না করে এভাবে বিধাতার ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিস্পৃহ থাকাটা অন্যায়। কারণ, কবি বিশ্বাস করেন কবি গুরুর ‘ন্যায়দন্ড’ কবিতার সেই ভাবনাকে, যেখানে তিনি বলছেন,অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহেঅর্থাৎ প্রতিবাদ না করার মত অন্যায় এবং বিধির কাছে বিচার চাওয়ার মত অযৌক্তিক ও স্বার্থপর ভাবনার দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানুষ হিসাবে তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতাকে তিনি অস্বীকার করতে পারেন না।
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে’।
ঘ) না পারার বেদনা তাঁকে কীভাবে আলোড়িত করেছে কবিতা অবলম্বনে লেখো।
প্রত্যেক শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ জানে, তার বেড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে এই সমাজের সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষিজীবী মানুষের অপরিসীম অবদান। তাই তাদের প্রতি রয়েছে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা। কবি মৃদুল দাশগুপ্ত সেই দায়বদ্ধতার কথা ভুলে যেতে পারেননি। তাই কবিতার শুরুতেই ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ থেকে অন্যান্য সহ-নাগরিকদের হিংসা কবলিত মানুষের পাশে না থাকার বিষয়টিকে প্রশ্ন-চিহ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন :কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়ামানবিক মূল্যবোধ শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের আর এক সত্তা যা তাকে ভালোবাসতে শেখায়, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু অসহায় মানুষের মৃত্যু দেখেও অনেক মানুষ পাশ কাটিয়ে চলে যেতে দ্বিধা করেনা। মানবিক মূল্যবোধের এই অবক্ষয় কবিকে অস্থির করে তোলে। তাই এই অবক্ষয়কে সামনে রেখে তিনি প্রশ্ন বিদ্ধ করেন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না চাওয়া মানুষদের।
কেন তবে আঁকাআঁকি?
কেন ভালোবাসা, কেন-বা সমাজমানবিক মূল্যবোধের অধিকারী একজন মানুষ, তাই মানুষের উপর হয়ে চলা নির্মম অত্যাচারকে মেনে নিতে পারে না। কারণ, এই মূল্যবোধের ভিতরেই থাকে এক প্রতিবাদী সত্তা। কবি মৃদুল দাশগুপ্ত সেই সত্তার শুধু অধিকারীই নয়, সেই সত্তার প্রচার এবং প্রসারেও তাঁকে সচেষ্ট থাকতে দেখি। আর এ কারণেই নাগরিক সমাজের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন নিখোঁজ মেয়েটির পক্ষে বিচার দাবি করে। তিনি লিখেছেন,
কিসের মূল্যবোধ!
আমি কি তাকাব আকাশের দিকে
বিধির বিচার চেয়ে?
বাস্তববাদী কবি জানেন, এই চাওয়ার আসারতার কথা। তিনি জানেন, প্রতিবাদই এই অন্যায়ের একমাত্র প্রতিবিধান। তাই মানুষকে প্রতিবাদী করে তুলতে হাতে তুলে নিয়েছেন ‘রক্ত লেখা’র দায়িত্ব। বিবেককে কলম এবং কবিতাকে বারুদের চেহারায় দেখতে চেয়েছেন তিনি। আর এই উদ্দেশ্যেই লিখেছেন এই কবিতা, যাতে আপামর মানুষের বিবেক জেগে ওঠে এবং প্রতিবাদে পথে নামে অন্যায় ও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে।
ঙ) তিনি কী পারেন?
অথবা,
বক্তা কীভাবে তাঁর কর্তব্য পালন করতে চান?
কবি জানেন, প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে যুক্তিবাদী ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সচেতন নাগরিক করে তোলে। এই সচেতন নাগরিকরাই যুগ যুগ ধরে সংকট মুক্তির পথ দেখিয়ে আসছে। কবি তাই দাবি করেন, বর্তমান সময়ের এই সংকট বা সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি দিতে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আর একারণেই কবি মৃদুল দাশগুপ্ত একজন সংবেদনশীল সাহিত্যশিল্পী হিসাবে নিজেকে এগিয়ে দিতে চেয়েছেন পরিবর্তনের কান্ডারী রূপে। তিনি জানেন, শিক্ষিত ও সচেতন শিল্পী মানুষের কলমের আঁচড়ে জন্ম নেয় বিপ্লবের রণধ্বনি। তাই তিনি কলম হাতে তুলে নিয়েছেন, কবিতার কাব্যিক উপস্থাপনায় শব্দ-শক্তিকে বারুদ শক্তিতে রূপ দেওয়ার জন্য। তাঁর বিশ্বাস এই শব্দ-বারুদ একদিন বিস্ফোরণ ঘটাবে এবং দুর্বৃত্তদের পিছু হটতে বাধ্য করবে। কবির সংবেদশীল সত্তা এটাই করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন এবং এটা করাই তাঁর কর্তব্য বলে তিনি মনে করেন।
-----------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন