“আসল বাদাটা খোঁজ করা হয় না আর”
খ) সে কোন্ বাদার খোঁজ করতে চেয়েছিল?
অথবা, আসল বাদা কোনটি?
গ) কেন তার পক্ষে সেই বাদাটি খোঁজ করা হয়ে উঠল না
অথবা, তা আর উৎসবের খোঁজ করা হয় না কেন?
অথবা, উৎসব ‘আসল বাদা’ খুঁজতে যেতে পারে না কেন?
ঘ) আসল বাদা কোথায় কীভাবে থেকে যায়?
ঙ) উচ্ছবের এই অসমাপ্ত অনুসন্ধানের কারণ ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
ক) উচ্ছব কে?
প্রখ্যাত কথাকার মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব নাইয়া। সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলে তার বসবাস। লেখাপড়া না জানা গ্রামীণ মানুষের উচ্চারণে এই উৎসব নামটাই ‘উচ্ছব’ নামে পরিচিত পেয়েছে। এই উৎসব নাইয়াই আসলে উচ্ছব।
খ) সে কোন্ বাদার খোঁজ করতে চেয়েছিল?
উৎসব নাইয়া ভূমিহীন কৃষক। পরের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই ভাতের অভাব তার কোনদিন মেটেনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তাকে অর্ধ হারে কিংবা অনাহারে থাকতে হয়। অথচ শহরের বড়কর্তার বাড়িতে “ডুলে ডুলে কত রকম চাল থরে থরে সাজানো আছে।” উৎসব এসব দেখে অবাক হয়ে যায়। সে আরো অবাক হয়, যখন সে জানতে পারে, এই সব চালই আসে বাদা অঞ্চল থেকে। সে মনে মনে ভাবে, বাদায় এত চাল আছে? এবং তা বাবুদের কিনতে হয় না? এই ভাবনা উৎসবকে অস্থির করে তোলে। সে খুঁজে বের করতে চায় এই বাদার ঠিকানা, যেখানে থাকলে মানুষের ভাতের অভাব হয় না।
উৎসবের কল্পনায় এই ‘অন্নের অভাব মুক্ত’ বাদাকেই ‘আসল বাদা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
গ) কেন তার পক্ষে সেই বাদাটি খোঁজ করা হয়ে উঠল না
অথবা, তা আর উৎসবের খোঁজ করা হয় না কেন?
অথবা, উৎসব ‘আসল বাদা’ খুঁজতে যেতে পারে না কেন?
আসলে উৎসব নাইয়া দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার কারণে অপুষ্টিতে ভুগছিল। ফলে তার শারীরিক অক্ষমতা একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আড়াই মন কাঠ যে সে কেটেছে, তা কেবল ‘ভাতের হুঁতাসে’। শুধু তাই নয়, অনাহারে থাকতে থাকতে তার মনে হয়, সে যেন আর মানুষ নেই, প্রেত হয়ে গেছে। তার ধারণা, বড় কর্তার বাড়িতে কাজের বিনিময়ে সে যে ভাত পাবে, তা খেয়ে সে আবারও মানুষ হয়ে উঠবে। অর্জন করবে ‘আসল বাদা’ খুঁজে বেড়ানোর মতো শারীরিক সক্ষমতা।
কিন্তু কিন্তু লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত বড়কর্তার মৃত্যু হলে তার সেই কাঙ্ক্ষিত ভাত খেতে পাওয়ার আশা ব্যর্থ হয়। অশৌচ বাড়ির ভাত খেলে গৃহস্থের অকল্যাণ হবে এই ভাবনায় তাকে ভাত খেতে দেওয়া হয় না। পরিবর্তে সে ভাত ফেলে দেওয়ার নিদান দেয় বড় পিসিমা। উৎসব হতাশ হয়ে পড়ে। শেষমেষ সিদ্ধান্ত করে, ফেলে দেওয়ার জন্য ভাতের ডেচকিটা সে বাসিনির কাছ থেকে ফেলে দেয়ার অজুহাতে চেয়ে নেবে এবং ওই ভাত সে নিজে খাবে। বাকি অংশ দেশের বাড়ি ক্যানিংয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছে ভাতে হাত দিয়ে সে স্বর্গ সুখ অনুভব করে। গোগ্রাসে সেই ভাত সে পেট ভরে খেয়েও নেয়। এবং অচিরেই সে হাঁড়িতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
সে ভেবেছিল এই ভাত খেয়ে সে ‘আসল বাদা’ খুঁজে বের করার ক্ষমতা অর্জন করবে এবং অবশ্যই তা খুঁজে বের করবে। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। তাই পরদিন সকাল হতেই কিছু লোক দেকচি চুরির অপরাধে উৎসবকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়। আর একারণেই এ যাত্রায় তার আর ‘আসল বাদার খোঁজ করা হয়নি।
ঘ) ‘আসল বাদা’ কোথায় কীভাবে থেকে যায়?
ডেকচি চুরির অপরাধে পরদিন সকালে তাকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে আসল বাধাটার খোঁজ করা হয় না আর উৎসবের। সে বাদাটা বড় বাড়িতে থেকে যায় অচল হয়ে।
ঙ) উচ্ছবের এই অসমাপ্ত অনুসন্ধানের কারণ ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অসমাপ্ত অনুসন্ধানের কারণ
দীর্ঘদিন অভক্ত থাকা উৎসব নাইয়া ‘আসল বাদার’ খোঁজ পেতে চেয়েছিল। তার ধারণা হয়েছিল, সেই বাদার খোঁজ পেলে তার অনাহারী জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু সেই বাদার অনুসন্ধানের কাজ সে সমাপ্ত করতে পারেনি।
আসলে উৎসব নাইয়া দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার কারণে অপুষ্টিতে ভুগছিল। ফলে তার শারীরিক অক্ষমতা একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তার ধারণা, বড় কর্তার বাড়িতে কাজের বিনিময়ে সে যে ভাত পাবে, তা খেয়ে সে আবারও মানুষ হয়ে উঠবে। অর্জন করবে ‘আসল বাদা’ খুঁজে বেড়ানোর মতো শারীরিক সক্ষমতা।
কিন্তু লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত বড়কর্তার মৃত্যু হলে তার সেই কাঙ্ক্ষিত ভাত খেতে পাওয়ার আশা ব্যর্থ হয়। অশৌচ বাড়ির ভাত খেলে গৃহস্থের অকল্যাণ হবে, এই ভাবনায় তাকে ভাত খেতে দেওয়া হয় না। পরিবর্তে সে ভাত ফেলে দেওয়ার নিদান দেয় বড় পিসিমা। উৎসব হতাশ হয়ে পড়ে।
সে ভেবেছিল এই ভাত খেয়ে সে ‘আসল বাদা’ খুঁজে বের করার ক্ষমতা অর্জন করবে এবং অবশ্যই তা খুঁজে বের করবে। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। তাই পরদিন সকাল হতেই কিছু লোক দেকচি চুরির অপরাধে উৎসবকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়। আর একারণেই এ যাত্রায় তার আর ‘আসল বাদার খোঁজ করা হয়নি
তাৎপর্য বিশ্লেষণ
‘স্বর্গসুখ’ শব্দটি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মরমী কথাকার মহাশ্বেতা দেবী উৎসবের মত মানুষদের অসহনীয় কষ্ট ও বঞ্চনার মাত্রাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। একজন অনাহারী মানুষ তার সাধ্যাতীত গতর খাটিয়ে ভাত খাওয়ার বৈধ স্বীকৃতি লাভের পরেও কেবলমাত্র সংস্কারের অজুহাতে তার পাওনা মেটানোয় উদাসীন থাকাটা কতটা অমানবিক এবং একজন ক্ষুধার্থ মানুষের ওপর তার কী ভয়ানক প্রভাব পড়ে, তা উৎসবের বাসিনীর ভাত নিয়ে পালানোয বাধা দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই রকম কঠিন পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়া আসা এবং শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ভাতের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ হওয়ার কারণে অনাহারী মানুষের ভেতরে তৈরি হয় এক অসাধরণ তৃপ্তিবোধ যা তার মধ্যে একটি পরাজাগতিক সুখের জন্ম দেয়। মরমী কথাকার এই সুখানুভূতিকে স্বর্গ জয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এবং উৎসবের ভাতে হাত ঢুকিয়ে দেওয়ার তৃপ্তি যথাযথ ভাবে প্রকাশ করেছেন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন