“বাদার ভাত খেলে তবে তো সে আসল বাদাটার খোঁজ পেয়ে যাবে একদিন।” — ২০১৬
ক) ‘বাদা’ কাকে বলে?
খ) এখানে কোন্ বাদার কথা বলা হয়েছে?
গ) ‘আসল বাদা’ বলতে কোন্ বাদার কথা বলা হয়েছে?
ঘ) উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এরকম মনে হওয়ার কারণ কী?
ক) ‘বাদা’ কাকে বলে?
‘বাদা’ শব্দের অর্থ হল বিস্তীর্ণ জলাভূমি। সাধারণ ভাবে দক্ষিণবঙ্গের অকর্ষিত ও জঙ্গলপূর্ণ অঞ্চলকে বাদা নামে অভিহিত করা হয়। কেউ কেউ সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকেও বাদা নামে অভিহিত করেন।খ) এখানে কোন্ বাদার কথা বলা হয়েছে?
প্রখ্যাত কথাকার মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই গল্পে ‘বাদা’ বলতে দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জলাভূমিকে বোঝানো হয়েছে, যা ধান চাষের জন্য বিখ্যাত।
গ) ‘আসল বাদা’ বলতে কোন্ বাদার কথা বলা হয়েছে?
উৎসব নাইয়া ভূমিহীন কৃষক। পরের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই ভাতের অভাব তার কোনদিন মেটেনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তাকে অর্ধ হারে কিংবা অনাহারে থাকতে হয়। অথচ শহরের বড়কর্তার বাড়িতে “ডুলে ডুলে কত রকম চাল থরে থরে সাজানো আছে।” উৎসব এসব দেখে অবাক হয়ে যায়। সে আরো অবাক হয়, যখন সে জানতে পারে, এই সব চালই আসে বাদা অঞ্চল থেকে। সে মনে মনে ভাবে, বাদায় এত চাল আছে? এবং তা বাবুদের কিনতে হয় না? এই ভাবনা উৎসবকে অস্থির করে তোলে। সে খুঁজে বের করতে চায় সেই বাদার ঠিকানা, যেখানে থাকলে মানুষের ভাতের অভাব হয় না।
উৎসবের কল্পনায় এই ‘অন্নের অভাব মুক্ত’ বাদাকেই ‘আসল বাদা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
ঘ) উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এরকম মনে হওয়ার কারণ কী?
আসলে উৎসব নাইয়া দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার কারণে অপুষ্টিতে ভুগছে। ফলে তার শারীরিক অক্ষমতা একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আড়াই মন কাঠ যে সে কেটেছে, তা কেবল ‘ভাতের হুঁতাসে’। শুধু তাই নয়, অনাহারে থাকতে থাকতে সে যেন আর মানুষ নেই, প্রেত হয়ে গেছে। তার ধারণা, বড় কর্তার বাড়িতে কাজের বিনিময়ে সে যে ভাত পাবে, তা খেয়ে সে আবারও মানুষ হয়ে উঠবে। অর্জন করবে ‘আসল বাদা’ খুঁজে বেড়ানোর মতো শারীরিক সক্ষমতা। এই ভাবনা থেকেই তার মনে এমন ভাবনা গড়ে উঠেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন