“ভাতে হাত ঢুকিয়ে দিতে সে স্বর্গ সুখ পায় ভাতের স্পর্শে।”
অথবা, কে কিভাবে এই অভিজ্ঞতা লাভ করে?
খ) তার এই অনুভূতির কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ) উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য লেখো।
ক) কে কীভাবে এই ভাত জোগাড় করেছিল?
অথবা, কে কীভাবে এই অভিজ্ঞতা লাভ করে?
গল্পের নাম ভাত। লিখেছেন গল্পকার মহাশ্বেতা দেবী। এই গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব নাইয়া। দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার পর সে কলকাতার একটি বনেদী বাড়িতে এসেছে। কাজের বিনিময়ে দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ার আশায়। এই উৎসব শেষ পর্যন্ত যেভাবে খিদের ভাত জোগাড় করেছিল তা ছিল খুবই করুন ও বেদনাদায়ক।
অনাহারে থাকার কারণে উৎসবের শরীর দুর্বল ছিল। তা সত্ত্বেও সে প্রায় আড়াই মন কাঠ কাটে শুধুমাত্র ‘ভাতের হুতাসে’। কিন্তু হঠাৎ বাড়ির বুড়োকর্তা মারা যাওয়ায় তার ভাত খাওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। অশৌচের সংস্কারের বশবর্তী হয়ে বাড়ির মালিক অভূক্ত উৎসবকে ভাত খেতে না দিয়ে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেয়। যুক্তি দেখানো হয়, এই ভাত খেলে অমঙ্গল হবে। তখন উৎসবের ধৈর্যচ্যুতী ঘটে। ভাত পাওয়ার জন্য সে এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করে। নিজে যেচে ভাত ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব নেয়। এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সে ভাতের ডেকচি সহ পালিয়ে আসে রেল স্টেশন। মূলত এভাবেই সে ক্ষুধার ভাত যোগাড় করে।
এরপর ক্ষুধার্ত কামোটের মতো খাবলে খাবলে ডেচকির ভাত খেতে থাকে। এভাবে ভাত খাওয়ার জন্য যখন সে ভাতের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দেয়, তখনই সে যেন স্বর্গ সুখের অনুভূতি পায় কাঙ্খিত এই ভাতের স্পর্শে।
খ) তার এই অনুভূতির কারণ ব্যাখ্যা করো।
ভাতের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে উৎসব যেন স্বর্গ সুখ লাভ করে। আসলে উৎসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সপরিবারে স্বজন হারানোর দুঃখ এবং তারই অনুষঙ্গে দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার ফলে তার ক্ষুধার তীব্রতা ভয়ংকর ভাবে বৃদ্ধি পায়। না খেয়ে থাকার কষ্টের গভীরতা সে উপলব্ধি করতে পারে। উপলব্ধি করতে পারে, কল্পিত স্বর্গসুখের চেয়ে এক মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার সুখানুভূতি। যে অনাহারে থাকতে হয় না, তার এই অনুভূতিও হয় না। উৎসব সারা বছর কখনো আধ-পেটা, কখনো সিকি-পেটা খেয়ে বেঁচে থেকেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার ফলে সে উপলব্ধি করেছে একজন অনাহারি মানুষের কাছে ভাত খাওয়ার সুখ কতটা তৃপ্তিদায়ক। ভুক্তভোগী উৎসবের কাছে তাই এই সুখ কল্পিত স্বর্গ সুখের মতোই দামি। তাই ভাতের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে সে স্বর্গ সুখ অনুভব করে।
গ) উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য লেখো।
‘স্বর্গসুখ’ শব্দটি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মরমী কথাকার মহাশ্বেতা দেবী উৎসবের মত মানুষদের অসহনীয় কষ্ট ও বঞ্চনার মাত্রাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। একজন অনাহারী মানুষ তার সাধ্যাতীত গতর খাটিয়ে ভাত খাওয়ার বৈধ স্বীকৃতি লাভের পরেও কেবলমাত্র সংস্কারের অজুহাতে তার পাওনা মেটানোয় উদাসীন থাকাটা কতটা অমানবিক এবং একজন ক্ষুধার্থ মানুষের ওপর তার কী ভয়ানক প্রভাব পড়ে, তা উৎসবের বাসিনীর ভাত নিয়ে পালানোয বাধা দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই রকম কঠিন পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়া আসা এবং শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ভাতের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ হওয়ার কারণে অনাহারী মানুষের ভেতরে তৈরি হয় এক অসাধরণ তৃপ্তিবোধ যা তার মধ্যে একটি পরাজাগতিক সুখের জন্ম দেয়। মরমী কথাকার এই সুখানুভূতিকে স্বর্গ জয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এবং উৎসবের ভাতে হাত ঢুকিয়ে দেওয়ার তৃপ্তি যথাযথ ভাবে প্রকাশ করেছেন।
-----------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন