“দাঁতগুলো বের করে সে কামটের মতই হিংস্র ভঙ্গি করে।”
খ) কে, কার প্রতি, কখন এ রূপ আচরণ করেছিল?
গ) তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করো
গ) তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করো
ক) ‘কামট’ কী?
উদ্ধৃত অংশটি প্রখ্যাত কথাকার মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ভাত গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই গল্পে বর্ণিত ‘কামট’ বা ‘কামোট’ হল একধরণের সামুদ্রিক মাছ বিশেষ। এরা বঙ্গোপসাগর থেকে কখনও কখনও সুন্দরবনের বাদাবন অঞ্চলের নদী-খাঁড়িগুলোতে উঠে আসে। এদের দাঁতগুলো খুবই ধারালো এবং স্বভাবে হিংস্র প্রকৃতির। সাধারণ মানুষের কাছে হাঙ্গর হিসেবেও এদের পরিচিতি রয়েছে।
খ) কে, কার প্রতি, কখন এরূপ আচরণ করেছিল?
ভাত গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব নাইয়া তার গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর প্রতি এরূপ আচরণ করেছিল।
দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকার পর উৎসব কলকাতায় আসে কাজের বদলে দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ার আশায়। বাসিনীর সাহায্যে তার মনিবের বাসায় কাজও জোটে। আড়াই মন কাঠ কাটার পর সে এই ভেবে খুশি হয়েছিল যে, এবার তার খিদে মিটবে। কিন্তু যজ্ঞির শুরুতেই বাড়ির বুড়োকর্তা মারা গেলে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সমস্ত রান্না খাবার ফেলে দেয়ার নির্দেশ আসে বড় পিসিমার কাছ থেকে। সেই কথামতো বাসেনি খাবার ফেলতে এলে উৎসব মোটা চালের ভাতের ডেস্কিটি চেয়ে নিয়ে পালাতে শুরু করে। শাস্ত্রমতে, এই ভাত খাওয়া যায় না বলে বাসেনি তাকে বাধা দেয়। আর তখনই উৎসব বাসিনীর প্রতি এরূপ আচরণ করে।
গ) তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করো।
উৎসব নাইয়া ভূমিহীন কৃষক। তাই জমি মালিকের কাছে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে সে পরিবারের ভাতের সংস্থান করে। কিন্তু মনিব সতীশ বাবুর জমির ধান নষ্ট হলে সে ও তার পরিবার কখনো আধ-পেটা, কখনও সিকি-পেটা, আবার কখনও উপোস করে দিন কাটাতে থাকে। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন মাতলা নদীর বন্যা তার পরিবার ও ভিটেমাটি কেড়ে নেয়। শুরু হয় তার অভুক্ত থাকার নতুন পর্ব। প্রথমদিকে সে দিনরাত ভাঙা ঘরের পাশে বসে থেকে বউ ছেলে মেয়ের ফিরে আসার অপেক্ষা করে। তাই সরকারের লঙ্গরখানার খিচুড়ি খাওয়ার সুযোগ হয়নি। দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকায়, সে যেন পাগল প্রায় হয়ে ওঠে। অনাহারি উৎসব যেন প্রেত হয়ে যায়। সে উপলব্ধি করে, দুটো পেট ভরে ভাত খেতে পেলেই, সে আবার মানুষ হয়ে উঠবে। আর এই আশা নিয়েই, সে কলকাতায় আসে, বাসেনীর মনিবের বাসায় কাজ করার উদ্দেশ্যে।
কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায় বুড়ো কর্তার মৃত্যু হলে, সে বুঝতে পারে, এ যাত্রায়ও তার ভাত খাওয়া হবে না। কারণ, শাস্ত্র মতে, অশৌচের ভাত খেলে অমঙ্গল হয়। এই ভাবনায় বাসিনী যখন উৎসবকে ভাত খেতে নিষেধ করে এবং ভাতগুলো ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, তখনই উৎসব ধৈর্য হারায়। অনাহারি উৎসবের বারবার ক্ষুধা নিবৃত্তির সুযোগ ঘটলেও প্রত্যেক বারই কোন না কোন কারণে সে ব্যর্থ হয়। ফলে ভাত খেতে না পাওয়ার অভিমান বাড়তে থাকে।একসময় তা ক্ষোভে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত হিংস্র রূপ নেয়। আর একারণেই উৎসব হিংস্র কমোটের মত দাঁত বের করে বিদ্রুপের স্বরে বাসিনীকে বলে, “খেতে নি? তুমিও ঝেয়ে বামুন হয়েছো?”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন