“এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে।”
অথবা,
কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে একথা বলা হয়েছে?
খ) এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তা কি বোঝাতে চেয়েছেন?
গ) সমগ্র নাট্য কাহিনীর নিরিখে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
ক) কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে একথা বলা হয়েছে?
অথবা,
কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে একথা বলা হয়েছে?
নাট্যকার শম্ভু মিত্রের লেখা ‘বিভাব’ নাটকের শেষ পর্বে দেখা যায় ‘হাসির খোরাক’ খুঁজতে শম্ভু মিত্র ও অমর গাঙ্গুলী পথে নামছেন। কারণ, তাদের ধারণা হয়, চার দেয়াল-এর বাইরে — রাস্তায় কিংবা মাঠে-ঘাটে রয়েছে ‘হাসির খোরাক’। কিন্তু একটু এগোতেই তাঁরা দেখতে পান, অন্য বস্ত্রের দাবিতে এগিয়ে আসছে একটি মিছিল। পুলিশের মানা অগ্রাহ্য করায় পুলিশ সেই মিছিলে গুলি চালায় এবং দু’জন ছেলেমেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এই ঘটনা শম্ভু মিত্রকে প্রবলভাবে আঘাত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, যেখানে অন্ন-বস্ত্রের দাবিতে মানুষ নিহত হয়, সেখানে হাসির খোরাক খুঁজে পাওয়া কঠিন কাজ। মূলত, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখক শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলী ও সামনে বসে থাকা দর্শকদের উদ্দেশ্যে শ্লেষের মোড়কে উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।
খ) এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তা কি বোঝাতে চেয়েছেন?
এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তা শম্ভু মিত্র সাধারণ মানুষ সম্পর্কে আত্মকেন্দ্রিক নাগরিক সমাজের উন্নাসিক মানসিকতাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছেন। যারা জীবনের গভীরতাকে না ছুঁয়ে সস্তা মনোরঞ্জন উপভোগ করতে চায়, অভিনেতা ও নাট্যকার শম্ভু মিত্র, এই মন্তব্যের মাধ্যমে তাদের এই উদাসীন মানসিকতার প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
গ) সমগ্র নাট্য কাহিনীর নিরিখে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
আলোচ্য নাটকের পটভূমি ছিল দেশ বিভাগের ফলে ভিটেমাটি ও স্বজন হারানো উদ্বাস্তু মানুষের ভয়াবহ জীবন যন্ত্রণা। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে বাঙালির জীবন ও সমাজ থেকে হাসি নামক অনুভূতির বিলোপ ঘটে। অথচ দেশের নেতা মন্ত্রীরা তা নিয়ে ব্যঙ্গ করে এবং বাঙালি জাতিকে ‘কাঁদুনে জাত’ বলে বিদ্রুপ করে। এরই প্রতিক্রিয়ায় এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতায় নাট্যকার বেরিয়ে পড়েন হাসির উৎস সন্ধানে। কিন্তু একের পর এক ভালবাসার দৃশ্যে অভিনয় করেও হাসির উদ্রেক করা যাচ্ছিল না।
ঠিক এই পরিস্থিতিতে অভিনেতা শম্ভু মিত্র ও তাঁর সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলী বেরিয়ে পড়েন বাইরের জগতে। তাঁদের ধারণা হয় এই বদ্ধ ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না। ফলে হাসিও পাবেনা। সেই সঙ্গে তাঁদের এই ধারণাও প্রকট হয়ে ওঠে যে, রাস্তায়, মাঠে-ঘাটে, ময়দানে মিলবে সেই কাঙ্ক্ষিত ‘হাসির খোরাক’।
কিন্তু অচিরেই তাঁদের আশা ভঙ্গ হয়। হঠাৎই তাঁরা দেখতে পায় একদল অন্নহীন মানুষ চাল ও কাপড়ের দাবিতে মিছিল করে আসছে। পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে মিছিল এগোতে চাইলে পুলিশ গুলি চালায়। নিরন্ন মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। নাট্যকার শম্ভু মিত্র ও অভিনেতা অমর গাঙ্গুলী ভয়ে পালিয়ে যান। পুলিশ চলে গেলে অমর গাঙ্গুলী লুটিয়ে পড়া মেয়েটির মাথায় স্নেহের হাত রাখে। নাট্যকর শম্ভু মিত্র উপলব্ধি করেন, যারা সাধারণ মানুষের জীবনের গভীরতাকে ছুঁতে চায় না, চায় সস্তা মনোরঞ্জন, তারা একান্তই আত্মকেন্দ্রিক। তাদের জন্য তাচ্ছিল্যই একমাত্র প্রাপ্য অনুভূতি হওয়া উচিত। আর এই আত্মকেন্দ্রিক নাগরিক সমাজের প্রতি তীব্র বিদ্রুপ প্রকাশ করার জন্যই তিনি বলেন, “কী অমর — এবার হাসি পাচ্ছে?”
বস্তুত, সময়কালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে জীবনে ‘হাসির খোরাক’ খোঁজার প্রচেষ্টাকে নাট্যকার শম্ভু মিত্র তীব্র শ্লেষের মোড়কে বিদ্রুপ ও তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেছেন। আর এটাই এই মন্তব্যের তাৎপর্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন