“এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না।”
খ) বক্তার এমন উপলব্ধির কারণ কী? অথবা, কখন কোন পরিস্থিতিতে বক্তার কেন এমন মনে হয়েছিল কেন?
গ) জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন?
ঘ) শেষে তার কিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
ঘ) শেষে তার কিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
ঙ) বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো।
ক) বক্তা কে?
প্রখ্যাত নাট্যকার শম্ভু মিত্রের লেখা বিভাব নাটক থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। এই নাটকে উদ্ধৃত অংশের বক্তা হলেন নাট্যকার শম্ভু মিত্র নিজেই।
খ) বক্তার এমন উপলব্ধির কারণ কী? অথবা, কখন কোন্ পরিস্থিতিতে বক্তার কেন এমন মনে হয়েছিল?
‘বিভাব’ নাটকের নাট্য দলের সম্পাদকের নির্দেশ ছিল বক্স অফিসের চাহিদা অনুযায়ী একটি হাসির নাটক মঞ্চস্থ করতে হবে, যা নাকি ভীষণ জনপ্রিয় হবে। সেই হাসির নাটকের উপকরণ খুঁজতে শম্ভু মিত্র এসে পৌঁছান তার সহ অভিনেতা অমর গাঙ্গুলীর বাড়িতে। প্রথমেই শম্ভু মিত্র কল্পিত বসার ভঙ্গির মাধ্যমে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টা করেন। কিন্তু অমর গাঙ্গুলি ও বৌদি তৃপ্তি মিত্র জানিয়ে দেন, এতে হাসার মতো কোন উপকরণ, যেমন ‘হিউম্যান ইন্টারেস্ট’ বা ‘পপুলার অ্যাপিল’ নেই।
এরপর তৃপ্তি মিত্রের উদ্যোগে দর্শকদের চাহিদার কথা ভেবে প্রথমে ‘লভ সিন’ এবং তারপর ‘প্রগ্রেসিভ লভ সিন’ - এর দৃশ্য অভিনীত হয়। কিন্তু এতেও সার্থক হাসি তৈরি হলো না। এই সময় হঠাৎই শম্ভু মিত্রের উপলব্ধি হয়, ‘হাসির খোরাক’ পেতে হলে ঘরের বাইরে সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের মাঝেই তার সন্ধান করতে হবে। সেখানেই পাওয়া যাবে ‘পপুলার জিনিসের খোরাক’।
মূলত, এই কারণে এবং উল্লেখিত পরিস্থিতিতে বক্তা শম্ভু মিত্রের উপরোক্ত উপলব্ধি হয়েছিল।
গ) জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন?
শম্ভু মিত্র এবং অমর গাঙ্গুলী হাসির খোরাক খুঁজতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জীবনের সন্ধান করতে বেরিয়ে পড়েন। বিশেষ নাট্য ভঙ্গির মাধ্যমে তারা তাদের সামনে একটি ব্যস্ত রাস্তার দৃশ্য উপস্থাপন করেন। এই দৃশ্যপটে দেখা গেল শম্ভু মিত্র এবং অমর গাঙ্গুলী পথ হাঁটছেন। পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছ কল্পিত মোটর, বাস, হাত-রিক্সা, ট্রাম ইত্যাদি। অমর গাঙ্গুলী যেন বাস চাপা পড়ছিলেন এবং শম্ভু মিত্র তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে বাস চালককে ধমক দিচ্ছেন — এমন দৃশ্যও উপস্থিত করলেন। এরপর তারা রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একসময় রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি হলেন। দেখতে পেলেন অন্ন ও বস্ত্রের দাবিতে একটা মিছিল এগিয়ে আসছে। হঠাৎ একদল পুলিশ এসে তাদের এগোতে নিষেধ করছে। এই পরিস্থিতিতে শম্ভু মিত্র এবং অমর গাঙ্গুলী ভয়ে আত্মগোপন করে। ঘরের বাইরে বেরিয়ে এভাবেই তাঁরা জীবনকে উপলব্ধি করার প্রাণপণ চেষ্টা করলেন।
ঘ) শেষে তাঁর কীরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
আড়াল থেকে তাঁরা প্রত্যক্ষ করেন জীবনের রূঢ় বাস্তবতাকে। তাঁরা প্রত্যক্ষ করেন যে, মিছিলকারীরা পুলিশের নির্দেশ অগ্রাহ্য করছে। তার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ গুলি চালায়। দুইজন ছেলেমেয়ে গুলি খেয়ে মাটিতে লুকিয়ে পড়ে। পুলিশ মার্চ করতে করতে চলে গেলে অমর ছুটে এসে আহত মেয়েটির মাথায় হাত দেন। মঞ্চ লাল আলোয় ভরে যায়।
এই ঘটনাকে সামনে রেখে শম্ভু মিত্র উপলব্ধি করেন, মন্বন্তর, দ্বিধা বিভক্ত বাঙালির উদ্বাস্তু জীবন, ভয়াবহ খাদ্য সংকটে বাঙালি জীবন জর্জরিত। উপলব্ধি করেন, এই পরিস্থিতিতে সারা বাংলা জুড়ে আর কোথাও কোন হাসির উপাদান অবশিষ্ট নেই। আর একারণেই শম্ভু মিত্র তার হাসির নাটকের সন্ধান শেষ করেন এই শ্লেষার্থক মন্তব্য দিয়ে, “এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে?” জীবনের নির্মম অভিজ্ঞতা এবং সস্তা জনপ্রিয়তার খোঁজে নাটকের প্রযোজনা করার চেষ্টাকে এভাবেই তীব্র শ্লেষে বিদ্ধ করেন নাট্যকার।
ঙ) বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো।
আসলে নাট্যকার শম্ভু মিত্র নাটককে চার দেওয়ালের গণ্ডি থেকে বের করে বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে চান। তার মতে, সেখানেই ‘হাসির খোরাক’ কিংবা ‘পপুলার জিনিসের খোরাক’ পাওয়া যায়। এখানে মূলত জীবনের গভীরতাকে খোঁজার বদলে তার লঘু ব্যঞ্জনা বা ‘খোরাক’কে খোঁজার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলা নাটকের সস্তা জনপ্রিয়তা খোঁজার যে চেষ্টা সেদিকেও নাট্যকারের শ্লেষ নিক্ষেপিত হয়েছে। তার মতে,
কিছু গভীর কথা যদি গভীরভাবে বলবার থাকে তার, তবেই সে শিল্পী, ... কেবল যদি মনোহরণ করাটাই উদ্দেশ্য হয় তার, তাহলে সে ভাঁড় মাত্র।
এই সস্তা জনপ্রিয়তা খোঁজার প্রবণতাকে নাট্যকার শম্ভু মিত্র তার ‘বিভাব’ নাটকে পরোক্ষ শ্লেষের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আর এটাই উদ্ধৃত মন্তব্যের তাৎপর্য।-
---------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন