“...এটা অন্য রকমের লভ সিন; প্রোগ্রেসিভ লভ সিন।”
ক) বক্তা কে?খ) ‘অন্য রকমের লভ সিন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ) ‘লভ সিন’টির বিবরণ দাও।
ঘ) কেন দৃশ্যটিকে ‘প্রগ্রেসিভ’ বলা হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
ক) বক্তা কে?
উদ্ধৃত অংশটি প্রখ্যাত নাট্যকার শম্ভু মিত্রের লেখা ‘বিভাব’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা হলেন, এই নাটকের অন্যতম চরিত্র তৃপ্তি মিত্র ওরফে বৌদি।
খ) ‘অন্য রকমের লভ সিন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
নাট্যকার তথা অভিনেতা শম্ভু মিত্র এই নাটকে (বিভাব) বহুরূপী নাট্য দলের সম্পাদকের চাহিদা অনুযায়ী হাসির নাটক তৈরিতে মনোযোগ দেন। তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় একটি ‘লভ সিন’ তৈরির চেষ্টাও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হাস্যরস সৃষ্টি করতে পারেনি। তাই, এই নাটকের নায়িকা তৃপ্তি মিত্র, আরও একবার চেষ্টা করে দেখার প্রস্তাব দেন। তাঁর প্রস্তাবিত এই নতুন ধরণের ‘লভ সিন’কে ‘প্রগ্রেসিভ লভ সিন’ বলা হয়েছে। এখানে ‘অন্যরকম লভ সিন’ বলতে এই ‘প্রগ্রেসিভ লভ সিন’-এর কথাই বোঝানো হয়েছে।
গ) ‘লভ সিন’টির বিবরণ দাও।
এই নাটকের নায়িকা তৃপ্তি মিত্র নির্দেশিত এই দৃশ্যে নায়ক নায়িকার চরিত্রে অংশ নেন যথাক্রমে শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্র। পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকায় দেখা যায় অমর গাঙ্গুলিকে। নাটকের এই দৃশ্যে হঠাৎই কল্পিত জানালা দিয়ে নায়িকা তৃপ্তি মিত্র, নায়ক শম্ভু মিত্রকে পালিয়ে যেতে বলেন। কারণ, এই নাটকে সে একজন আত্মগোপনকারী রাজনৈতিক দলের নেতা। কিন্তু এই ভূমিকায় অভিনয় করতে তীব্র আপত্তি জানায় শম্ভু মিত্র। কারণ, তাঁর মতে, বিষয়টি দর্শক সত্যি বলে ভেবে ফেললে, তাঁর জীবনে বিপত্তি নেমে আসবে। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্রব না থাকলে তো নাটকটি প্রগ্রেসিভ বলে গণ্য হবে না — শেষ পর্যন্ত তৃপ্তি মিত্রের এই যুক্তিতে, শম্ভু মিত্র ও অমর গাঙ্গুলী, এই দৃশ্যে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান।
শুরু হয় ‘প্রগ্রেসিভ লাভ সিন’। শুরুতেই পুলিশের ভয়ে শম্ভু মিত্র জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালাতে যান। যাওয়ার আগে বার্নার্ড শ-এর ‘ক্যান্ডিডা’ নাটকের এবং তুলসী লাহিড়ীর ‘পথিক’ নাটকের দুজন নায়কের দুটি আবেগঘন উক্তি উচ্চারণ করেন। কিন্তু পালাতে গিয়ে পুলিশরূপী অমরের কাছে তিনি ধরা পড়ে যান।
উল্লেখ্য, এই নাট্য পরিকল্পনাতেও কারো মনে হাসির উদ্রেক হয়নি। তাই এই প্লটটিও শেষ পর্যন্ত বাতিল বলে গণ্য হয়।
ঘ) কেন দৃশ্যটিকে ‘প্রগ্রেসিভ’ বলা হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
বাঙালি জাতি রাজনীতি প্রিয় এবং প্রগ্রেসিভ বা প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন। তবে বাঙালির এই প্রগতিশীলতার রূপ বেশ বিচিত্র ধর্মী। তারা প্রেমের গল্পের নেপথ্যেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট খুঁজে বেড়ান। এবং তা না থাকলে, তাকে প্রগতিশীল আখ্যা দিতে চান না। এই তথাকথিত প্রগতিশীল বাঙালির কাছ থেকে জনপ্রিয়তা আদায় করার লক্ষ্যেই দৃশ্যটিকে ‘প্রগ্রেসিভ’ বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, এই নাট্য দৃশ্যটিকে বিদ্রুপার্থে ‘প্রগ্রেসিভ লভ সিন’ বলা হয়েছে। কারণ, প্রগতিশীল মানেই কোন বিশেষ মত বা আদর্শকে ধারণ করতেই হবে — একথা শম্ভু মিত্র মানতেন না।
---------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন