“কিন্তু এমন দুর্যোগে ভগবানও কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোন বোধ করি।”
খ) দুর্যোগের বর্ণনা দাও
গ) বক্তার কেন মনে হয়েছে ভগবান এমন দুর্যোগে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমান?
ক) ‘এমন দুর্যোগ’ বলতে কোন দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে?
গল্পের নাম ভাত। লিখেছেন মরমী কথাকার মহাশ্বেতা দেবী। এই গল্পের প্রধান চরিত্র হল উৎসব নাইয়া। সে মাতলা নদীর পাড়ে বসবাস করে। একদিন শীতের রাতে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। এই ঝড়ে উৎসবের ঘরের মাঝ খুঁটিটি মাতালের মতো আনন্দে টলতে থাকে। মাঝে মাঝে ঘরটা ‘ধনুষ্টংকার রোগীর মতো কেঁপেঝেঁকে’ ওঠে। ‘এমন দুর্যোগ’ বলতে উল্লিখিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার ভয়াল রূপকে বোঝানো হয়েছে।
খ) দুর্যোগের বর্ণনা দাও
প্রাকৃতিক দুর্যোগ গরিব মানুষের জীবনে গভীর সংকট ডেকে আনে। এই দুর্যোগ যত বেশি গভীর হয় সংকটের গভীরতা তত বাড়ে। আলোচ্য গল্পে উৎসব নাইয়া সুন্দরবনের বাধা অঞ্চলে মাতলা নদীর পাড়ে বসবাস করত। একদিন শীতের রাতে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। এই ঝড়ে উৎসবের ঘরের মাঝ খুঁটিটি যেন মাতালের মতো আনন্দে টলতে থাকে। মাঝে মাঝে ঘরটা ‘ধনুষ্টংকার রোগীর মতো কেঁপেঝেঁকে’ ওঠে। উৎসব ঘরের মাঝখানের খুঁটিটি ধরে মাটিতে চেপে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। উৎসবের স্ত্রী ছেলে মেয়েকে সাথে ধরে ঘরের মধ্যে বসে কাঁপতে থাকে। প্রচন্ড শীত এবং ভয়াবহ ঝড়ের কারণে তার এই করুণ অবস্থা। ঝড়ের বেগ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে উৎসব বারবার ভগবানকে ডাকতে থাকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। একসময় মাতলার জল বাতাসের চাবুকে ছটফটিয়ে উঠে আসে উৎসবের ঘরের উপর। জল নামতেই দেখা গেল তার সংসার মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। দুর্যোগের দাপটে স্ত্রী পুত্র কন্যা হারিয়ে উৎসব নাইয়া সর্বহারা হয়ে গেল।
গ) বক্তার কেন মনে হয়েছে ভগবান এমন দুর্যোগে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমান?
মানুষ বিপদে পড়লে সে পাশে কাউকে চায়। প্রাণপণে ডাকাডাকি করে তাকে কাছে পেতে এবং তার সহায়তা পেতে। সেদিন সন্ধ্যায় প্রচন্ড দুর্যোগে যখন প্রত্যেকেই বিপদাপন্ন, তখন কেউ কারো পাশে থাকার মত অবস্থায় ছিল না। একা একাই নিজেকে রক্ষা করার লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল সবাইকে। এমন দিনেই মানুষ একান্তভাবেই নির্ভর করতে বাধ্য হয় ঐশ্বরিক শক্তির উপর। উৎসবের ক্ষেত্রেও তাই হয়। সে এই দারুণ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বারবার ভগবানকে ডাকতে থাকে। কিন্তু একরাশ হতাশা নিয়ে উৎসব উপলব্ধি করে যে তার সেই ডাক যেন ভগবানের কানে পৌঁছেছে না। তাই তার সাহায্য তার কাছে এসে পৌঁছাচ্ছে না। উৎসবের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়, তাহলে কি সত্যিই ভগবান আছে? উৎসবের ভাবনায় জন্ম নেয় এক একরাশ সংশয়। সেই সংশয় বক্তার মনে হয়েছে যে, এমন দুর্যোগের সময় ভগবানও বুঝি কাঁথা মরি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আরে কারণেই বোধহয় তার সাড়া মেলে না।
---------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন