২২) “লক্ষ্মী না আসতে সেধে ভাসান যাচ্ছে”
খ) আসতে না আসতে সে সেধে ভাসান যাচ্ছে কেন?
গ) উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
ক) লক্ষ্মী কে?
প্রখ্যাত কথাকার মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ নামক ছোটগল্পে হতদরিদ্র উৎসব নাইয়া গ্রামের প্রতিবেশী সাধন বাবুর উদ্দেশ্যে এই উক্তিটি করেছেন। এই গল্পে দেখা যাচ্ছে, সতীশ মিস্ত্রি নামে এক কৃষকের ধান ক্ষেতে মড়ক লেগেছে। ফলে ধানগাছে গোছ আসার আগেই সে খড়ে পরিণত হয়েছে। অকালে মরে যাওয়া এই ‘ধান গাছ’কে উৎসব নাইয়া ‘লক্ষ্মী’ বলে অভিহিত করেছেন।
খ) আসতে না আসতে সে সেধে ভাসান যাচ্ছে কেন?
গ্রামীণ লোকসংস্কৃতিতে অন্নকে লক্ষ্মীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর এই অন্ন অর্থাৎ ভাত আসে ধান থেকে। তাই ধানকেও লক্ষ্মীর সঙ্গে তুলনা করার রেওয়াজ রয়েছে। প্রধানত বর্ষায় ধান গাছ লাগানো হয়, আর শীতের শুরুতে ধান পেকে গেলে মাঠ থেকে তুলে আনা হয়। পুরো বাংলা জুড়ে শুরু হয় পৌষ পার্বণ। হিমমাখা কচি ঘাসের পথ ধরেই এই বাংলায় আবির্ভাব ঘটে হেমন্ত লক্ষ্মী বা পৌষ লক্ষীর। তাঁর দিব্য প্রসাদে বিস্তীর্ণ মাঠ ভরে ওঠে সােনালি ফসলে।
কিন্তু সেবার, ধানে গোচ আসার আগেই ধান গাছ থেকে সবুজ রং চলে যেতে থাকে। কার্তিক মাসেই ধান খড় হয়ে যায়। অর্থাৎ পৌষ লক্ষী ঘরে ঢোকার আগেই যেন নিজে নিজেই ফিরে গেছে। আর এ কারণেই উৎসব নাইয়া বলেছে, “লক্ষ্মী না আসতে সেধে ভাসান যাচ্ছে”।
গ) উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
আসলে ভূমিহীন কৃষক উৎসব নাইয়া সতীশ মিস্ত্রির জমিতে কাজ করেই বছরের কয়েক মাস দিন গুজরান করে। সেবছর ধানে গোছ চাষার আগেই সবুজ রং চলে যেতে থাকে। কারণ ধান গাছের মোরগ লাগে। কার্তিক মাসেই ধান খড় হয়ে যায়। এভাবে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎসব ভেঙে পড়ে। কারণ সতীশের জমিতে কাজ করেই তার পরিবারের খাদ্যের যোগান হয়।
তাই জমি নিজের না হলেও ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া উৎসব মেনে নিতে পারেনি। তার মনে হয়, এ যেন ধান্য লক্ষ্মীর ঘরে ঢোকার আগেই বিসর্জন হয়ে গেল।
আর এ কারণেই উৎসব নাইয়া কাঁদতে থাকে। তার এই কান্নার কারণ বুঝতে না পেরে সাধারণ বাবু প্রশ্ন করলে উৎসব তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে তার কান্নার অন্তর্নিহিত কারণ। আসলে উৎসব নাইয়ার এই কান্না তার ব্যক্তিগত সীমা অতিক্রম করে একটি কৃষক সমাজের শ্রেণীগত অবস্থান তুলে ধরেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন