৫) “নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে / না-ই যদি হয় ক্রোধ”
“নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে / না-ই যদি হয় ক্রোধ” |
ক) কবি কাকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন?
খ) কোন প্রসঙ্গে কবির এই প্রতিক্রিয়া?
অথবা,ক্রোধের কারণ কি?
গ) এ প্রসঙ্গে কবির প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করো।
ক) কবি কাকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন?
উদ্ধৃত অংশটি কবি মৃদুল দাশগুপ্ত রচিত ‘‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’’ কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে। এই কবিতায় কবি ২০০৬-৭ সালে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে যে ‘কৃষি জমি রক্ষা কমিটি’র গণআন্দোলন সংঘটিত হয়, তাতে মৃত্যুবরণ করা মানুষদের ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন।
খ) কোন্ প্রসঙ্গে কবির এই প্রতিক্রিয়া?
অথবা,
ক্রোধের কারণ কি?
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত ছিলেন একজন সমাজ-সচেতন ও মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী মানুষ। মানুষের কল্যাণ তাঁকে যেমন আহ্লাদিত করে, তেমনি অকল্যাণ করে ব্যথিত। আলোচ্য সময়ে জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কবি সমাজের যে নগ্নতা ও অবক্ষয় দেখেছিলেন, তা কবিকে একাধারে ব্যথিত ও অস্থির করে তুলেছিল। তাঁকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল, সন্তানহারা জননীর চোখের জল।
কবি এই পুঞ্জিভূত ক্রোধ প্রকাশ করা এবং অমানবিক ক্রিয়াকর্মের প্রতিবাদে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার তাগিদ থেকেই তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
গ) এ প্রসঙ্গে কবির প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করো।
শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং তার বিপরীতে কৃষি জমি রক্ষার তাগিদে কৃষকের কৃষক আন্দোলন একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশককের দ্বিতীয় অর্ধকে একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কবি লক্ষ্য করেছেন, কৃষি জমি রক্ষার তাগিদে কৃষক সমাজ জীবন বাজি রেখে গণআন্দোলনে ঝঁপিয়ে পড়ছে। আন্দোলনের একটি পর্বে তা সহিংস রূপ লাভ করে। আন্দোলন ও পাল্টা আন্দোলনের নাম করে মানুষের এই মৃত্যুকে তিনি সমর্থন করতে পারেননি। তাই জীবন বিপন্ন হওয়া এই সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠা মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন কবির পক্ষে আবশ্যিক হয়ে পড়ে। তাই নিহত মানুষকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে তিনি লিখেছেন,
নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখেনা-ই যদি হয় ক্রোধকেন ভালোবাসা, কেন-বা সমাজকিসের মূল্যবোধ!
রাজনীতির নামে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়াকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। তারই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি মানুষকে প্রতিবাদী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে নিজের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন। লিখেছেন,
আমি কি তাকাবো আকাশের দিকেবিধির বিচার চেয়ে?
পরের স্তবকেই তিনি লিখছেন, তিনি তা পারবেন না। তাঁর কথায় :
আমি তা পারি না। যা পারি কেবলসে-ই কবিতায় জাগেআমার বিবেক, আমার বারুদবিস্ফোরণের আগে।
অর্থাৎ সমাজ সচেতন ও মানবতাবাদী কবি হিসেবে তিনি এই হিংসাকে সমর্থন করতে পারেন না। আর সে কারণেই তিনি হাতে তুলে নিয়েছেন মসি রূপ অসিকে আশ্রয় করেছেন প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে।
----------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন