সহমরণ — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
সহমরণ — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত |
শুনিবে তা’? — শোন তবে মা —
দুখের কথা ব’ল্ ব কা’রে বা!
*************************
জন্ম আমার হিদুঁর ঘরে,
বাপের ঘরে, খুব আদরে,
ছিলাম বছর দশ;
কুলীন পিতা, কুলের গোলে,
ফেলে দিলেন বুড়ার গলে;
হ’লাম পরের বশ।
আচারে তার আস্ ত হাসি,
— ব’লব কি আর পরকাশি, —
মিটল সকল সাধ; —
হিঁদুর মেয়ে অনেক ক’রে
শ্রদ্ধা রাখে স্বামীর ’পরে
তা’তেও বিধির বাদ।
বুড়াকালের অত্যাচারে,—
শয্যাশায়ী ক’রলে তা’রে
জেগেই পোহাই রাতি;
দিন কাটেত’ কাটে না রাত,
মাসের পরে গেল হঠাৎ, —
নিবল জীবন বাতি।
**********************
কতক দুঃখে, কতক ভয়ে
শরীর এল অবশ হ’য়ে
ভাঙল সুখের হাট
খ’য়ের রাশি ছড়িয়ে পথে,
চল্ ল নিয়ে শবের সাথে,—
যেথায় শ্মশান ঘাট।
গুঁড়িয়ে শাঁখা, সবাই মিলে,
চিতায় মোরে বসিয়ে দিলে,
বাজ্ ল শতেক শাঁক;
লোকের ভিড়ে ভরেছে ঘাট,
ধুঁইয়ে উঠে চিতার কাঠ,
উঠ্ল গর্জ্জে ঢাক।
********************
রোমে, রোমে, শিরায়, শিরায়,
জ্বালা ধরে, —প্রাণ বাহিরায়,—
মরি বুঝি ধোঁয়ায় এবার!
আচম্বিতে—চিৎকার রোলে—
চিতা ভেঙে, পড়িলাম জলে,
মাঝি এক নিল নায়ে তার।
যত লোক করে ‘মার মার’,
আমার ত’ সংজ্ঞা নাই আর;
যবে ফিরে মেলিনু নয়ান,
দেখি, এক কুটিরের মাঝে
সেই মাঝি—আছে বসে কাছে—
যে মরে জীবন দেছে দান।
কয়দিন গেল শুধু কাঁদি’;
শেষে তারে করিলাম ‘সাদি’,
ভুলিলাম ক্রমে যত ক্লেশ;
আগুনে গিয়েছে জ্ব’লে রূপ,
তবু ভালবাসে পোড়া মুখ,
সুখে-দুখে দিন কাটে বেশ।
***********************
খেয়া দেয় মরদ জোয়ান,
আছে আর’ দেড় বিঘা ধান;
আমি নিজে মিশি বেঁচি মা,—
শুনিলেত’ পোড়া কেন গা’!’
বাপের ঘরে, খুব আদরে,
ছিলাম বছর দশ;
কুলীন পিতা, কুলের গোলে,
ফেলে দিলেন বুড়ার গলে;
হ’লাম পরের বশ।
আচারে তার আস্ ত হাসি,
— ব’লব কি আর পরকাশি, —
মিটল সকল সাধ; —
হিঁদুর মেয়ে অনেক ক’রে
শ্রদ্ধা রাখে স্বামীর ’পরে
তা’তেও বিধির বাদ।
বুড়াকালের অত্যাচারে,—
শয্যাশায়ী ক’রলে তা’রে
জেগেই পোহাই রাতি;
দিন কাটেত’ কাটে না রাত,
মাসের পরে গেল হঠাৎ, —
নিবল জীবন বাতি।
**********************
কতক দুঃখে, কতক ভয়ে
শরীর এল অবশ হ’য়ে
ভাঙল সুখের হাট
খ’য়ের রাশি ছড়িয়ে পথে,
চল্ ল নিয়ে শবের সাথে,—
যেথায় শ্মশান ঘাট।
গুঁড়িয়ে শাঁখা, সবাই মিলে,
চিতায় মোরে বসিয়ে দিলে,
বাজ্ ল শতেক শাঁক;
লোকের ভিড়ে ভরেছে ঘাট,
ধুঁইয়ে উঠে চিতার কাঠ,
উঠ্ল গর্জ্জে ঢাক।
********************
রোমে, রোমে, শিরায়, শিরায়,
জ্বালা ধরে, —প্রাণ বাহিরায়,—
মরি বুঝি ধোঁয়ায় এবার!
আচম্বিতে—চিৎকার রোলে—
চিতা ভেঙে, পড়িলাম জলে,
মাঝি এক নিল নায়ে তার।
যত লোক করে ‘মার মার’,
আমার ত’ সংজ্ঞা নাই আর;
যবে ফিরে মেলিনু নয়ান,
দেখি, এক কুটিরের মাঝে
সেই মাঝি—আছে বসে কাছে—
যে মরে জীবন দেছে দান।
কয়দিন গেল শুধু কাঁদি’;
শেষে তারে করিলাম ‘সাদি’,
ভুলিলাম ক্রমে যত ক্লেশ;
আগুনে গিয়েছে জ্ব’লে রূপ,
তবু ভালবাসে পোড়া মুখ,
সুখে-দুখে দিন কাটে বেশ।
***********************
খেয়া দেয় মরদ জোয়ান,
আছে আর’ দেড় বিঘা ধান;
আমি নিজে মিশি বেঁচি মা,—
শুনিলেত’ পোড়া কেন গা’!’
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন