“সেই সন্ধেয় অনেকদিন বাদে সে পেট ভরে খেয়েছিল।”
খ) কোন্ সন্ধ্যেয় সে পেট ভরে খেয়েছিল?
গ) সেই দিনটায় কী ঘটেছিল?
ক) ‘সে’ কে?
উদ্ধৃত অংশটি মরমী কোথাকার মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘সে’ বলতে এই গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব নাই আর কথা বলা হয়েছে, যে মাতলা নদীর বন্যায় সর্বস্বান্ত হয়ে কলকাতা এসেছে কাজের বিনিময়ে দুবেলা পেট ভরে ভাত খাওয়ার আশায়।
খ) কোন্ সন্ধ্যেয় সে পেট ভরে খেয়েছিল?
এই গল্পের উৎসব ভূমিহীন কৃষক। তার ওপর থাকে সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলে। সেখানকার এক ফসলি জমিতে একবারই ধান হয়। সেবার উৎসবের মনিব সতীশ মিস্ত্রির ধানে মড়ক লাগে। ফলে সেখানে কাজ করার সুযোগ হারায়। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে তার। এক দিনে, সন্ধ্যাবেলয় উৎসব সহ গ্রামের অন্যান্যরা হিঞ্চে সেদ্ধ ও গুগলি সেদ্ধ নুন আর লঙ্কা পোড়া দিয়ে পেট ভরে খেয়েছিল। এই সন্ধ্যার পর পরই রাতের বেলা প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। এবং উৎসব নাইয়া পরিবার পরিজন হারিয়ে একা হয়ে যায়। ‘সেই সন্ধ্যায়’ বলতে এই সন্ধ্যার কথাই বলা হয়েছে।
গ) সেই দিনটায় কী ঘটেছিল?
সেদিন সন্ধ্যায় ভাত খেতে খেতে উৎসবের স্ত্রী প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস পেয়েছিল। সেজন্যই সে বলেছিল, “দেবতার গতিক ভালো নয়কো।” এবং সত্যি সত্যিই উৎসবের স্ত্রীর বা চন্নুনীর মায়ের আশঙ্কা সত্যি হয়ে যায়। রাত বাড়তেই শুরু হয়ে যায় প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি।
এই ঝড়ে উৎসবের ঘরের মাঝ খুঁটিটি যেন মাতালের মতো আনন্দে টলতে থাকে। মাঝে মাঝে ঘরটা ‘ধনুষ্টংকার রোগীর মতো কেঁপেঝেঁকে’ ওঠে। উৎসব ঘরের মাঝখানের খুঁটিটি ধরে মাটিতে চেপে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। উৎসবের স্ত্রী ছেলে মেয়েকে সাথে ধরে ঘরের মধ্যে বসে কাঁপতে থাকে। প্রচন্ড শীত এবং ভয়াবহ ঝড়ের কারণে তার এই করুণ অবস্থা। ঝড়ের বেগ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে উৎসব বারবার ভগবানকে ডাকতে থাকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। একসময় মাতলার জল বাতাসের চাবুকে ছটফটিয়ে উঠে আসে উৎসবের ঘরের উপর। জল নামতেই দেখা গেল তার সংসার মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। দুর্যোগের দাপটে স্ত্রী পুত্র কন্যা হারিয়ে উৎসব নাইয়া সর্বহারা হয়ে যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন