“তাদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন সাহেব অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে অনেক কথা লিখেছিলেন।” — ২০১৭, ২০২৩
ক) আইজেনস্টাইন সাহেব কে?
খ) তিনি কাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন?
গ) সেই অভিনয় দেখে তিনি কী লিখেছিলেন?
ক) আইজেনস্টাইন সাহেব কে?
নাট্যকার শম্ভু মিত্রের লেখা ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে উল্লিখিত আইজেনস্টাইন হলেন একজন প্রখ্যাত রাশিয়ান চিত্রপরিচালক। তার পুরো নাম সের্গেই নিখাইলোভিচ আইজেনস্টাইন।
খ) তিনি কাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন?
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে জাপানের নৃত্যনির্ভর, ঐতিহ্যশালী কাবুকি থিয়েটার তার কলাকুশলীদের নিয়ে অভিনয় করেছিলেন। রাশিয়ান চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইন আগ্রহ সহকারে এই নাটক দেখেছিলেন এবং তাঁদের এই অভিনব নাট্যরীতি ও তার কলাকুশলীদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন।
গ) সেই অভিনয় দেখে তিনি কী লিখেছিলেন?
রাশিয়ান চিত্রপরিচালক ও চিত্র সমালোচক আইজেনস্টাইন জাপানের কাবুকি থিয়েটারের অভিনয় দেখেছেন। দেখার পর তার সমালোচনায় লিখেছেন, তাদের নাটকে দেহ ও মুখভঙ্গির বহুল ব্যবহার রয়েছে। এবং তিনি তা দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। যে যে বিষয়গুলো তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে তার বিস্তৃত বিবরণও দিয়েছেন তাঁর লেখায়।
যেমন, তিনি লিখছেন, মঞ্চে একজন নাইট ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন এবং কতদূর চলে এলেন তা বোঝাতে তিনি স্টেজের পিছন দিক থেকে গম্ভীরভাবে এগোতে থাকেন। নাইটের পিছনে একটা মস্ত বড় দুর্গদ্বার তৈরি করে দাঁড়িয়ে গেলেন দুজন শিফটার। নাইট যত দূরে চলে যাচ্ছেন, দুর্গদ্বারটা ক্রমশ তত ছোট করে দেখাচ্ছেন শিফটাররা। এভাবে বড় থেকে ক্রমশ ছোট উপকরণ ব্যবহার করে ‘নাইট’ কত দূরে এসে পড়েছেন সেটা বোঝানো হল।
এছাড়া তিনি লিখেছেন, কীভাবে দু’জন যোদ্ধা কাল্পনিক খাপ থেকে কাল্পনিক তলোয়ার বের করে তুমুল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন — তার বিবরণ। লিখেছেন, যুদ্ধের একটা পর্বে একজন যোদ্ধা কীভাবে মারা যাচ্ছেন। এই মৃত্যু দৃশ্য দেখানো হলো এভাবে — একবার তার হাতটা নড়ে উঠল, তারপর একটা পা তিরতির করে কেঁপে উঠল, চোখটা দুবার ঘুরল, মাথাটা দুবার নড়ে উঠলো এবং সবশেষে তার জিভটা বেরিয়ে গেল। অর্থাৎ একজন যোদ্ধার মৃত্যু হল। আবার পরক্ষণেই দেখা গেল, মৃত যোদ্ধার সদ্য বিধবা স্ত্রী ঢুকে প্রবল কান্নাকাটি শুরু করল। এরপর মৃত যোদ্ধাটা সন্তর্পনে সেখান থেকে চলে গেল। আইজেনস্টাইন লিখছেন, এতে দর্শকেরা কিছুই মনে করলেন না। কারণ তাদের কাছে এই মুহূর্তে স্ত্রীর দুঃখটাই প্রধান।
এভাবে কোন উপকরণ-এর সাহায্যে ছাড়াই কেবল অঙ্গভঙ্গিসর্বস্ব অভিনয়ের মাধ্যমে নাটকের দৃশ্য কীভাবে বাস্তবসম্মত, বিশ্বাসযোগ্য এবং শিল্পসম্মত করে তোলা যায়, আইজেনস্টাইন সে-কথাই লিখেছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন