“তাই অনেক ভেবে চিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি।”
খ) কোন প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্যটি করেছেন?
গ) ভেবেচিন্তে কী প্যাঁচ বের করা হয়েছিল?
ঘ) সেই প্যাঁচের বুদ্ধিটা কীভাবে এসেছিল?
ক) বক্তা কে?
বাংলা নাটকের বিশিষ্ট নাট্যকার শম্ভু মিত্র। তাঁর লেখা বিভাগ নাটকে গ্রুপ থিয়েটারের নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। এই সমস্যার কথা বলতে গিয়েই তিনি উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
খ) কোন প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্যটি করেছেন?
নাট্যকার শম্ভু মিত্র বিভাব নাটকে দেখিয়েছেন গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে আছে ‘দুরন্ত অভাব’। দেখিয়েছেন তাদের অভিনয়ের জন্য ভালো মঞ্চ নেই, নেই মঞ্চোসজ্জার উপকারণ বা আলো। শুধু নাটক করার অদম্য ইচ্ছাকে পাথেয় করেই এই গ্রুপ থিয়েটারগুলো চলে। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারের বিমাদৃশ্য আচরণ। পেশাদার থিয়েটারকে ছাড় দিলেও, শম্ভু মিত্রের মতে, সরকার গ্রুপ থিয়েটার এর কাছ থেকে খাজনা আদায় করে। ফলে তারা চূড়ান্ত আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়। এই সংকট থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন নাট্যকার। আর সেই সমস্যা সমাধানের পথের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
গ) ভেবেচিন্তে কী প্যাঁচ বের করা হয়েছিল?
এই সমস্যা সমাধানের জন্য বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠী নিজেদের মতো করে উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। একদিন এই নাট্যগোষ্ঠীর প্রধান শম্ভু মিত্র একটি পুরনো নাটকে এক অভিনব অভিনয় রীতির সন্ধান পান। এই অভিনয় রীতিতে মঞ্চের কোন প্রয়োজন নেই, দরকার নেই মঞ্চ সজ্জার, কিম্বা দরজা-জানলা, টেবিল-বেঞ্চ, সিনসিনারি ইত্যাদির। অভিনয়ের জন্য শুধু দরকার পড়ে একটা প্লাটফর্ম।ঘ) সেই প্যাঁচের বুদ্ধিটা কীভাবে এসেছিল?
এই আর্থিক সংকট জনিত সমস্যা সমাধান ও নতুন রীতি উদ্ভাবনের জন্য বহুরূপী নাট্য-গোষ্ঠীকে চার প্রকার নাট্য রীতি তাদের প্রেরণা জুগিয়ে ছিল।
একদিন এই নাট্যগোষ্ঠীর প্রধান শম্ভু মিত্র একটি পুরনো নাটকে এক অভিনব অভিনয় রীতির সন্ধান পান, যেখানে লেখা আছে, “রাজা রথে আরোহন করার ভঙ্গি করলেন”। কিন্তু কি সেই ভঙ্গি? নাট্যকার ভাবলেন, যা করলে দর্শক ধরে নিত যে, রাজা রথে চড়লেন। অথচ রথ বা ঘোড়া — কোনটারই দরকার হচ্ছে না। এখান থেকেই নাট্যকার খুঁজে পেয়েছিলেন সেই প্যাচ বা অভিনব অভিনয় রীতি, যেখানে মঞ্চের কোন প্রয়োজন নেই, দরকার নেই মঞ্চ সজ্জার, কিম্বা দরজা-জানলা, টেবিল-বেঞ্চ, সিনসিনারি ইত্যাদির। অভিনয়ের জন্য শুধু দরকার পড়ে একটা প্লাটফর্ম।
উড়িষ্যার একটি যাত্রাপালার রাজা তার দূত কে ঘোড়ায় চড়ে দ্রুত খবর আনার নির্দেশ দিলে দুধ দু পায়ের মাঝে লাঠি গলিয়ে এমনভাবে প্রস্থান এবং পরবর্তীতে প্রবেশ করে যাতে দর্শকরা বুঝে নেয় দুধ ঘোড়ায় চড়ে এসেছে।
মারা ঠিক তামাশায় এক অসহায় চাষীর প্রথমে জমিদারের কাছে এবং পরে কাল্পনিক মন্দিরের পুরোহিতের কাছে দুঃখ নিবেদন করা অথবা একই ব্যক্তির দশকের সামনেই সামান্য বেশ বদলে জমিদার অগ্রহীদের অভিনয় শম্ভু মিত্রকে নতুন নাট্যশৈলীর ধারণা দেয়।
এছাড়া জাপানের কাবুকি থিয়েটার সম্বন্ধে রুশ চিত্র পরিচালক আইজেনস্টাইনের লেখা পড়ে জাপানি থিয়েটারের ভঙ্গি সম্পর্কে জেনেছিলেন। সেখান থেকে তিনি জেনেছেন কীভাবে বিভিন্ন আকারের দুর্গদ্বারের মাধ্যমে perspective রচনা কল্পিত যুদ্ধ ও অঙ্গভঙ্গি করে আর্টিস্টিক ও এস্থেটিক মৃত্যুর দৃশ্য রচনা করা হয়েছে।
মূলত এই সমস্ত নতুন আঙ্গিকের নাট্য শৈলীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাংলায় নূন্যতম বাজেটের একটি অভিনব নাট্যশৈলীর জন্ম দিয়েছেন।
-------------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন