১২) বাসিনী এনেছে। বাদায় থাকে, অথচ ভাতের আহিংকে এতখানি।”
খ) বাসিনী কাকে এনেছে?
গ) ‘আহিংকে’ শব্দের প্রকৃত অর্থ কী?
ঘ) কার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে?
ঙ) তার ভাতের ‘আহিংকে’ এতখানি কেন?
চ) ভাতের প্রতি তার কিরূপ আহিংকের প্রকাশ ঘটেছে?
ক) বাসিনী কে?
প্রখ্যাত কথাকার মহাশ্বেতা দেবী রচিত ভাত গল্পের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বাসিনী। সে সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা। পরিচারিকার কাজের সূত্রে সে কলকাতায় এসেছে। এবং একটি বনেদি বড়লোক বাড়িতে কাজে নিযুক্ত হয়েছে, ওই বাড়ির বড় পিসিমার তত্ত্বাবধানে।
খ) বাসিনী কাকে এনেছে?
এই গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব নাইয়া বাসিনীর গ্রাম সম্পর্কে দাদা। উৎসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ঘর সংসার হারিয়ে অনাহারে জীবন যাপন করছে। এই উৎসবকেই বাসিনী কাজের বিনিময়ে অন্নসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই বড়লোক বাড়িতে এনেছে।
গ) ‘আহিংকে’ শব্দের প্রকৃত অর্থ কী?
‘আহিংকে’ শব্দটি সুন্দরবন অঞ্চলের বাদাবন এলাকার মানুষ ব্যবহার করে, যার অর্থ লোভী বা লুব্ধ। শব্দটির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা। এই গল্পে আকাঙ্ক্ষা অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
ঘ) কার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে?
ভাত গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব নাইয়া। সুন্দরবনের বাদাবন অঞ্চলে তার বসবাস। সে কলকাতায় এসেছে কাজের বিনিময়ে কিছু ভাত খেতে পাওয়ার আশায়। এখানে ‘কার সম্পর্কে’ বলতে এই উৎসব নাইয়ার কথা বলা হয়েছে।
ঙ) তার ভাতের ‘আহিংকে’ এতখানি কেন?
উৎসব নাইয়া সুন্দরবন এলাকার বাদাবন অঞ্চলে বসবাস করে। এই অঞ্চল ধান উৎপাদনে দক্ষিণবঙ্গে খ্যাতি লাভ করেছে। প্রায় সমগ্র দক্ষিণবঙ্গের ভাতের যোগান দেয় এই বাদা অঞ্চল। অথচ, সেখানকার বাসিন্দা হয়েও ভাতের জন্য তার যে আকাঙ্ক্ষা বা লোভ তা দেখে বড় বাড়ির বড় বউ অবাক হয়ে গেছে।
প্রকৃতপক্ষে, উৎসব একজন ভূমিহীন কৃষক। তাই প্রচুর ধান উৎপাদিত হলেও তার ওপর কোন অধিকার উৎসবের থাকে না। উৎপাদিত ধানের সবই চলে যায় সতীশ মিস্ত্রির মত জমি মালিকের ধানের গোলায়। তাই সারা বছর তাকে আধ-পেটা, সিকি-পেটা বা উপোস করে কাটাতে হয়।
আলোচ্য সময় সমগ্র বাদাবন অঞ্চল ঝড় বৃষ্টির কারণে এবং মাতলা নদীর প্রচন্ড বন্যায় উৎসব ভিটেমাটি সহ সমগ্র পরিবার হারিয়ে ফেলে। ফলে পাগল প্রায় হয়ে পরিজনকে ফিরে পাওয়ার আশায় ভাঙ্গা ঘরের সামনে বসে থাকত। সরকারি লঙ্গরখানার খিচুড়ি তাই তার ভাগ্যে জোটেনি। যখন তার সম্বিত ফেরে তখন খিচুড়ি দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সেই থেকে সে ভয়ংকর ভাতের ক্ষুধা নিয়ে বেঁচে আছে। পেটে ভাত না থাকায় সে যেন মনুষ্যত্ব হারিয়ে প্রায় প্রেত হয়ে গেছে। একসময় তার উপলব্ধি হয়, দুটো ভাত খেতে পেলে সে আবার হয়ত মানুষ হয়ে উঠবে। আর এ কারণেই ভাতের উপর তার এতখানি আহিংকে (আকাঙ্ক্ষা বা লোভ)।
চ) ভাতের প্রতি তার কিরূপ আহিংকের প্রকাশ ঘটেছে?
[এই প্রশ্নের উত্তরটি ‘ঙ’ দাগের উত্তরের প্রায় অনুরূপ। নিজে না লিখতে পারলে নিচের অংশটি লেখ]
উৎসব একজন ভূমিহীন কৃষক। তাই সুন্দরবনের বাদাবন অঞ্চলে প্রচুর ধান উৎপাদিত হলেও তার ওপর কোন অধিকার উৎসবের থাকে না। উৎপাদিত ধানের সবই চলে যায় সতীশ মিস্ত্রির মত জমি-মালিকের ধানের গোলায়। তাই সারা বছর তাকে আধ-পেটা, সিকি-পেটা বা উপোস করে কাটাতে হয়।
আলোচ্য সময় সমগ্র বাদাবন অঞ্চল জুড়ে ঝড় বৃষ্টির কারণে এবং মাতলা নদীর প্রচন্ড বন্যায় উৎসব ভিটেমাটি সহ সমগ্র পরিবার হারিয়ে ফেলে। ফলে পাগল প্রায় হয়ে পরিজনকে ফিরে পাওয়ার আশায় সে ভাঙ্গা ঘরের সামনে বসে থাকত। সরকারি লঙ্গরখানার খিচুড়ি তাই তার ভাগ্যে জোটেনি। যখন তার সম্বিত ফেরে, তখন খিচুড়ি দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সেই থেকে সে ভয়ংকর ভাতের ক্ষুধা নিয়ে বেঁচে আছে। পেটে ভাত না থাকায়, এক সময় সে প্রায় মনুষ্যত্ব হারিয়ে যেন প্রেত হয়ে যায়। এখন সে উপলব্ধি করে, দুটো ভাত খেতে পেলে হয় তো আবার মানুষ হয়ে উঠবে।
তাই ভাতের প্রতি উৎসবের গভীর ‘আহিংক’ জন্মায়। এই আহিংক বা আকাঙ্ক্ষা এতটাই গভীর ছিল যে, সরকার ঘর করতে খরচ দেবে শুনেও সে বাদাবন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসে; শুধুমাত্র দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ার আশায়।
--------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন