“অভিনেতা মানে একটা চাকর — একটা জোকার, একটা ক্লাউন। লোকেরা সারাদিন খেটেখুটে এলে তাদের আনন্দ দেওয়াই হল নাটক-ওয়ালাদের একমাত্র কর্তব্য” — ২০১৬
অভিনেতা মানে একটা চাকর — একটা জোকার, একটা ক্লাউন |
নাটক : নানা রঙের দিন।
ক) বক্তা কে?
খ) কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন?
খ) বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা করো।
ক) বক্তা কে?
রুশ নাট্যকর অন্তন চেখভের ‘সোয়ান সং’ একাঙ্ক নাটক অবলম্বনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেন ‘নানা রঙের দিন’ নামক একটি নাটক। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়, একজন আটষট্টি বছরের প্রবীণ অভিনেতা। এই প্রবীণ অভিনেতাই এই উদ্ধৃতির বক্তা।
খ) বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন?
বক্তা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তখন অভিনয় জীবনের মধ্য গগনে বিরাজ করছেন। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর নাম, যশ, খ্যাতি। সেই খ্যাতির সাঁকোয় চড়ে একদিন আসে এক প্রেম। একদিন এই প্রেমকে পরিণতি দেওয়ার কথা বললেই বাধে গোল। প্রেমিকা শর্ত দেয়, বিয়ে করতে হলে অভিনয় ছাড়তে হবে। রজনীকান্ত অভিনয়কে প্রাণের চেয়েও ভালোবসেন। তাই ছাড়তে পারেননি। বিয়েটাও তাই হয়নি। প্রেমিকার কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দিন রাত্রে একটি অভিনয় করার সময় তিনি হঠাৎ উপলব্ধি করেন, সমাজে একজন অভিনেতার মূল্য ঠিক কতটা! তাঁর এই উপলব্ধির প্রকাশ করতে গিয়েই তিনি তাঁর সহকারি প্রম্পটার কালীনাথকে উক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন।
গ) বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা করো :
অভিনয়কে ভালোবেসে রজনীকান্ত পেয়েছিলেন নাম, যশ এবং খ্যাতি। কিন্তু প্রেমিকার কাছে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর, তিনি উপলব্ধি করলেন আর এক চরম সত্য। এই সত্যের মূল কথা হল, অভিনয় আর যাই দিক না কেন, সামাজিক মর্যাদা দিতে পারে না। মানুষ অভিনেতাকে ‘ভাড়’ হিসেবে দেখতেই পছন্দ করে, যার একমাত্র কাজ হল মানুষকে আনন্দ দেওয়া।
এই সময় বক্তা উপলব্ধি করেন, “যারা বলেন ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’ — তারা সব গাধা...বাজে কথা বলে।” সার্কাসের জোকার যেমন মানুষকে আনন্দ দেয়, অভিনেতাও তেমনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষের জন্য বিনোদনের যোগান দেওয়ার চেষ্টা করে। বিনিময়ে মানুষ তাদের প্রশংসা করে, সম্মান জানায়। কিন্তু সেই সম্মান মঞ্চের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কারণ, অভিনেতা হচ্ছেন একজন নিছক বিনোদনের প্রতীক, যার সঙ্গে সারা জীবন প্রেম করা চলে, কিন্তু সংসার করা যায় না। সেদিন রাতের এই উপলব্ধির কথাই রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর সহকারী প্রম্পটার কালীনাথকে বুঝিয়েছিলেন। এটাই এই মন্তব্যের তাৎপর্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন