“আমাদের দিন ফুরিয়েছে!”
আমাদের দিন ফুরিয়েছে! - নাটক : নানা রঙের দিন |
খ) বক্তার এই উপলব্ধির কারণ ব্যাখ্যা করো।
ক) কে, কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন?
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাঙ্ক নাটক ‘নানা রঙের দিন’। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। অভিনয় জীবনের স্বর্ণযুগ পেরিয়ে জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
শিল্পের প্রতি ভালবাসা এবং প্রতিভার জোরে একাকীত্বকে উপেক্ষা করার সাহস নিয়ে তিনি সবকিছু ছেড়ে অভিনয়ে জগতকে বেছে নিয়েছিলেন ভালোবাসার একমাত্র ক্ষেত্র হিসেবে। কিন্তু আজ নায়কের চরিত্র থেকে তিনি বাদ পড়েছেন। অভিনয় করতে বাধ্য হচ্ছেন ‘দিলদার’ নামক একটি পার্শ্বচরিত্রে। ফলে তাঁর মধ্যে তৈরি হয়েছে এক নেতিবাচক অনুভূতি, যা তাঁর মনে তীব্র হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই হতাশার কথা প্রকাশ প্রসঙ্গেই রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর প্রম্পটার কালিনাথ সেনকে এই মন্তব্যটি করেন।
খ) বক্তার এই উপলব্ধির কারণ ব্যাখ্যা করো :
মধ্যরাতের দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহের অন্ধকার মঞ্চে একটি মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর অতীত অভিনয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলোর কথা রোমন্থন করছেন। অভিনয়কে ভালোবেসেই তিনি তাঁর চাকরি ছেড়েছেন, ছেড়েছেন একমাত্র প্রেমিকাকেও। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন, অভিনয়ই তার বেঁচে থাকার একমাত্র এবং পবিত্র অবলম্বন হবে। তাই, অভিনয়কে ‘একটি পবিত্র শিল্প’ ভেবে জীবনের মূল্যবান সময়গুলোকে তিনি এই শিল্পের জন্যই উৎসর্গ করেছেন। এক সময় অসাধারণ প্রতিভার জোরে তিনি ‘বক্তিয়ার’ ও ‘ঔরঙ্গজেব’র মত চরিত্রকে অনায়াসে ফুটিয়ে তুলেছিলেন নাট্যমঞ্চে। মুগ্ধ করেছিলেন আপামর দর্শক সাধারণকে।
কিন্তু আজ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, তাঁর গলার সেই কাজ নষ্ট হয়েছে। নায়কের পরিবর্তে ‘দিলদার’-এর মতো অপ্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে হচ্ছে। তাঁর আশঙ্কা, আর কয়েক বছর পর, দিলদারের চরিত্রেও তাঁকে আর মানাবে না। তবুও, তিনি মনের সান্তনা খুঁজেছেন — “শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে — তার বার্ধক্য নেই কালিনাথ” — এমন দার্শনিক সুলভ অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যমে। সেই সঙ্গে সময়ের এই নিষ্ঠুর সত্যও তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, ‘জীবনের পাত্র শূন্যতায় রিক্ত’ হাওয়াকে আটকানো যাবে না কোনভাবেই। এবং এই উপলব্ধির কারণেই তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
------------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন