“এই তো জীবনের সত্য কালিনাথ।”
এই তো জীবনের সত্য কালিনাথ। নাটক : নানা রঙের দিন |
খ) বক্তা জীবনের কোন্ সত্যের কথা বলতে চেয়েছেন?
অথবা,
জীবনের সত্য কী?
গ) বক্তা কীভাবে এই সত্যে উপনীত হলেন?
অথবা,
জীবনের সত্য কী?
গ) বক্তা কীভাবে এই সত্যে উপনীত হলেন?
ক) উক্তিটি কার?
নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একাঙ্ক নাটক নানা রঙের দিন। এই নাটকের মঞ্চাভিনেতা ও মুখ্য চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
খ) বক্তা জীবনের কোন্ সত্যের কথা বলতে চেয়েছেন?
অথবা,
জীবনের সত্য কী?
বক্তা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। দীর্ঘ ৪৫ বছরের অভিনয় জীবনের মধ্য দিয়েই এই জনপ্রিয়তা তিনি অর্জন করেছেন। এবং অতুলনীয় প্রতিভার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে বলে তাঁর বিশ্বাস। বর্তমানে তাঁর বয়স হয়েছে। তাই মানুষ ভেবেছে তাঁর প্রতিভার অপমৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মোমের আলোয় দর্শকহীন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘সাজাহান’ নাটকের ঔরঙ্গজেবের সেই ভয়ংকর সিনটা সফল ভাবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন, বয়স বাড়লেও তাঁর অভিনয় প্রতিভার মৃত্যু হয়নি। পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাই তিনি বলেছেন, “প্রতিভা যাঁর আছে, বয়েসে তাঁর কী আসে যায়!” নিজের প্রতিভা সম্পর্কে এই সত্যই তিনি উপলব্ধি করেছেন সেদিন গভীর রাতে। আর এটাকেই তিনি ‘জীবনের সত্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
গ) বক্তা কীভাবে এই সত্যে উপনীত হলেন?
বক্তা দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে অভিনয় করে চলেছেন বিভিন্ন নাট্যমঞ্চে। অভিনয়ের সূত্রেই পেয়েছেন যশ ও খ্যাতি। জীবনে এসেছে প্রেম। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্যি, সেই প্রেমকে তিনি ধরে রাখতে পারেননি। কারণ, অভিনয়ের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালোবাসার কাছে কোন নারীর প্রতি তাঁর যে প্রেম, তা হেরে গেছে। কারণ, এই প্রেমের সূত্রেই তিনি বুঝেছিলেন, একজন অভিনেতাকে সমাজ সার্কাসের জোকার হিসেবেই দেখে। রজনীকান্তের প্রেমিকাও তাঁকে সেভাবেই দেখেছে। আর এ কারণেই তাঁর প্রেম হেরে গেছে।
এরপর থেকেই, সত্যি কথা বলতে, তাঁর প্রতিভার অপমৃত্যু শুরু হয়। কোন কিছুতেই ঠিক মতো মন দিতে পারেন না, দেখে শুনে চরিত্র বেছে অভিনয় করার স্বভাবে বদল এসেছে। মানুষ বলতে শুরু করেছে, অভিনেতার অপমৃত্যু হয়েছে। আর এ কারণেই তিনি আস্তে আস্তে হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছেন। নায়কের চরিত্র ছেড়ে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতে বাধ্য হয়েছেন। এক সময় ভেবেছেন সত্যি সত্যিই তাঁর অভিনয় প্রতিভা শেষ হয়ে গেছে। একাকিত্বের প্রগাঢ় অন্ধকারে তিনি প্রতিদিন খুঁজে বেড়িয়েছেন অতীতের সেই গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলির মধুর স্পর্শ।
এভাবে খুঁজতে খুঁজতেই তিনি একসময় পেয়ে যান জীবনের সেই সত্য, যা তাঁকে বুঝিয়ে দেয়, প্রতিভা যাঁর আছে, বয়েসে তাঁর কী আসে যায়!” সহকারী প্রম্পটার কালীনাথের সঙ্গে শাজাহান নাটকের কালজয়ী চরিত্রের বিখ্যাত সব ডায়লগ বলতে বলতে তিনি নতুন করে আবিষ্কার করেন তাঁর এই ‘জীবন সত্য’ বা মৃত্যুহীন প্রতিভার কথা।
-------xx------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন