একাঙ্ক নাটক হিসেবে ‘নানা রঙের দিন’ কতখানি সার্থক আলোচনা করো — ২০১৭
একাঙ্ক নাটক হিসেবে ‘ নানা রঙের দিন ’ কতখানি সার্থক |
নাটকের বিভিন্ন আঙ্গিক আছে। একাঙ্ক নাটক তাদেরই একটি। একটিমাত্র অংক বা স্বর্গ বা পরিচ্ছেদ নিয়ে তৈরি দ্রুত সংঘটিত হওয়া নাটককেই একাঙ্ক নাটক বলে। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘নানা রঙের দিন’ — এমনই একটি একাঙ্ক নাটক।
একাঙ্ক নাটকের বৈশিষ্ট্য :
একান্ত নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর একমুখিতা। অর্থাৎ
১) এই নাটকে একটি মাত্র দৃশ্য থাকে,
২) একই মঞ্চের ক্ষুদ্র পরিসরে তা সীমাবদ্ধ থাকে এবং মঞ্চসজ্জায় বাহুল্য থাকেনা।
৩) স্থান, কাল ও পাত্রের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প চরিত্রের উপস্থিতি থাকে। এবং
৪) নাটকের ঘটনাবলী তার আকস্মিকতা নিয়ে তার শীর্ষবিন্দু বা ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে যায়।
১) একটি মাত্র দৃশ্যপট :
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচ্য নাটকটির সমগ্র অংশ জুড়ে রেখেছেন একটি মাত্র চরিত্রের এক রাতের কয়েক ঘন্টার স্মৃতিচারণ। এই চরিত্রের নাম রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। একটিমাত্র দৃশ্যেই তার জীবনের উত্থান ও সমাপ্তির ঘটনাবহুল চালচিত্র তুলে ধরেছেন।
২) মঞ্চের ক্ষুদ্র পরিসর :
এই নাটক অভিনয়ের জন্য যে মঞ্চসজ্জার বিবরণ পাওয়া যায় তার পরিসর অত্যন্ত সীমাবদ্ধ ও ক্ষুদ্র। পেশাদারী থিয়েটারের ফাঁকা মঞ্চের পিছনের দিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একটি মাত্র দৃশ্যপট। যেখানে রয়েছে রাতে অভিনীত নাটকের জিনিসপত্র আর যন্ত্রপাতি, মঞ্চের মাঝে রয়েছে একটি উল্টানোর টুল, আর চারিদিকে রাত্রির গাঢ় অন্ধকার। আর রয়েছে একটি মোমবাতি হাতে হাসিমুখে রজনীকান্ত নামক চরিত্রের মঞ্চে উপস্থিতি।
৩) স্বল্প চরিত্রের উপস্থিতি :
প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত ছাড়া মাত্র একজন সহ অভিনেতা রয়েছেন এই নাটকে। তার নাম কালীনাথ। একাঙ্ক নাটকের চাহিদার কারণে তার ভূমিকাও এখানে অত্যন্ত গৌণ। মাত্র দুটি চরিত্রের সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটকটি এগিয়েছে। এর মধ্যে রজনীকান্ত চরিত্রটির দীর্ঘ সংলাপই প্রধান এবং সেটাই শেষ পর্যন্ত পাঠক বা দর্শককে টেনে ধরে রেখেছে।
৪) আকস্মিকভাবে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছানো :
পূর্ণাঙ্গ নাটকের মতো এখানে কোন ঘটনার ঘনঘটা নেই। সমগ্র নাটক জুড়ে রয়েছে একদা মঞ্চের ডাকসাইটে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনিই একাই তুলে ধরেছেন তার আলোক উজ্জ্বল জীবনের নানান ঘাত প্রতিঘাত। অভিনয়কে ভালবেসে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দেয়া, একমাত্র প্রেমিকাকে হারানো এবং শেষ বয়সে এসে সামাজিক মর্যাদা না পেয়ে নিতান্তঃ নিঃসঙ্গ জীবনের সম্মুখীন হওয়া — এই ছিল নাটকের মূল উপজীব্য। এই নাটকের রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নিজের অতীত জীবনের গৌরবের কথা স্মরণ করতে করতে একসময় একের পর এক পুরনো নাটকের নানান চরিত্রের সংলাপ উচ্চারণ করতে থাকেন। এক সময় উপলব্ধি করেন, যে মানুষ শিল্পকে ভালোবেসেছে তার বার্ধক্য নেই, একাকীত্ব নেই, নেই মৃত্যু ভয়ও। সেই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত হয়ে যান, কালের নিয়মে তারও দিন ফুরিয়ে এসেছে। এভাবে অতীত ও বর্তমানের দ্বান্দ্বিক টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে তিনি আকস্মিকভাবেই পৌঁছে যান ঘটনার ক্লাইম্যাক্স-এ। শেষ হয় নাটক।
সার্থকতা বিচার :
সুতরাং এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, নাট্যকারের বর্ণনা, চরিত্রচিত্রণ দক্ষতা ও একমুখিনতা নাটকটিকে বিশিষ্টতা দান করেছে। সঙ্গে সংক্ষিপ্ততা এই নাটকটিকে একাঙ্ক নাটক হিসেবে সার্থক করে তুলেছে।
-------xx------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন