‘নানা রঙের দিন’ নাটকটির নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো। —২০১৫
‘নানা রঙের দিন’ নাটকটির নামকরণের তাৎপর্য |
ভূমিকা :
নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘নানা রঙের দিন’ একটি ‘একাঙ্ক নাটকে’র অনিন্দ্য সুন্দর উদাহরণ। এই নাটকের কাহিনী এগিয়েছে একজন জীবন সায়ন্নে আসা অভিনেতার সাফল্যে ভরা অতীত রঙ্গিন জীবন ও বর্তমান নিঃসঙ্গ জীবনের বেদনা বিধুর স্মৃতিচারণাকে কেন্দ্র করে।ভাব-সেতু নির্মাণ :
সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ, নামকরণের মাধ্যমে পাঠক ও পাঠ্যের মধ্যে একটি ভাবসেতু নির্মিত হয়, যাকে অবলম্বন করে পাঠক গল্প বা নাটকের গহীনে প্রবেশের প্রেরণা পায়।
নামকরণের পদ্ধতি :
গল্প, কবিতা কিম্বা নাটক, সমস্ত সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই নামকরণ মূলত তিনভাবে হয়ে থাকে। এগুলো হল, বিষয়কেন্দ্রিক, চরিত্রকেন্দ্রিক অথবা ব্যঞ্জনাধর্মী। নানা রঙের দিন একাঙ্ক নাটকটি নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যঞ্জনাধর্মী বিষয়টিই ব্যবহৃত হয়েছে।
বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ :
এই নাটকের প্রধান চরিত্র অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় দিলদারের পোশাক পরে শূন্য প্রেক্ষাগৃহে মধ্যরাতে কিছুটা নেশার ঘোরে অতীত স্মৃতিচারণায় মগ্ন হয়েছেন। তার অভিনয় জীবনের স্বর্ণযুগ চলে গেছে। আজ সে নিঃসঙ্গ এবং অনাদৃত। এই নিঃসঙ্গ ও অনাদৃত জীবন থেকে তিনি বের হতে চাইছেন, কিন্তু পারছেন না। তাই মঞ্চের উপরে ফেলে আসা জীবনের স্বর্ণ-উজ্জ্বল সময়কে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি। কখনো ‘রিজিয়া’ নাটকের ‘বক্তিয়ার’, কখনো ‘সাজাহান’ নাটকের ‘ঔরঙ্গজেব’ হয়ে অতীতের সাফল্যকে ছুঁয়ে যেতে চাইছেন।
এভাবেই স্মৃতি হাতড়ে ফিরে যান অতীত জীবনের একমাত্র প্রেমকে পাওয়া ও তাকে হারানোর অন্ধ গলিতে। সেখানে তিনি দেখতে পান জীবনের ব্যর্থতার এক করুণ ছবি। যে থিয়েটারকে ভালোবেসে তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়েছেন, ছেড়েছেন একমাত্র প্রেমকেও, সেই থিয়েটারই তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে — ‘দেহপট সনে নট সকলি হারায়।’ তিনি বুঝে যান থিয়েটারওয়ালারা শুধু আনন্দই দিতে পারে আর মানুষ তাদের সহচর্য উপভোগ করতে পারে মাত্র। কিন্তু সেখানে অভিনেতার জন্য কোন সামাজিক মর্যাদা বরাদ্দ থাকে না।
এই অভিজ্ঞতাই তাকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেয় যে, ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’ যারা এ কথা বলে তারা মিথ্যুক অথবা গাধা। তবে তিনি এ কথা বিশ্বাস করেন, যে মানুষ শিল্পকে ভালোবেসেছে তার বার্ধক্য নেই, একাকীত্ব নেই, নেই মৃত্যু ভয়ও। সেই সঙ্গে তিনি এই বাস্তবতাকেও স্বীকার করে নেন যে সময় আজীবন একরকম থাকে না। তাই দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে জীবন সায়াহ্নে এসে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় মেনে নেন এবং বলেন, “আমাদের দিন ফুরিয়েছে।”
সার্থকতা বিচার :
এভাবে এই নাটকে একজন অভিনেতার ব্যক্তিজীবন ও অভিনয় জীবনের বহুমাত্রিকতা অসম্ভব সুন্দর ব্যঞ্জনায় প্রকাশ পেয়েছে। আর সেই নিরিখেই এই নাটকের নাম ‘নানা রঙের দিন’ সার্থক হয়ে উঠেছে।
----------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন