“শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে — তার বার্ধক্য নেই কালিনাথ, একাকীত্ব নেই”
— ‘নানা রঙের দিন’ নাটক অবলম্বনে মন্তব্যটি তাৎপর্য লেখো।
অথবা,
“শিল্প কে যে মানুষ ভালোবেসেছে তার বার্ধক্য নেই কালিনাথ, একাকীত্ব নেই”— বলতে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় কি বুঝিয়েছেন আলোচনা করো।
নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক ‘নানা রঙের দিন’ থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেয়া হয়েছে। এই নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়, যিনি প্রথম জীবনে একজন নামকরা অভিনেতা ছিলেন, উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
তিনি জীবন সায়াহ্নে এসে একদিন গভীর রাতে উঠে তাঁর অভিনয় মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে মদে আসক্ত এই অভিনয় পাগল মানুষটি তাঁর অভিনয় জীবনের স্বর্ণযুগের স্মরণীয় স্মৃতি রোমন্থন ও আত্মবিশ্লেষণ করছেন তারই সহ কর্মী প্রম্পটার কলিনাথের কাছে। এই স্মৃতি রোমন্থন ও আত্মবিশ্লেষণ করতে গিয়েই তিনি এই কথাগুলো বলেছেন।
আসলে, বয়সের কারণে বর্তমানে ‘দিলদার’-এর মত গৌণ চরিত্র ছাড়া কোন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ মেলে না। কিন্তু এক সময় ঔরঙ্গজেব, সুজা, বক্তিয়ারের মত উজ্জ্বল চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শকের মন জয় করেছিল। প্রৌঢ়ত্বের দ্বার প্রান্তে এসে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর স্মৃজন ক্ষমতা প্রকাশের দিন শেষ। অন্তত নাট্য দলের কর্মকর্তারা সেটাই মনে করেন।
কিন্তু তাঁর মনে হয়, জীবনের সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা পার হয়ে, তিনি গভীর রাতের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন ঠিক, কিন্তু অভিনয় প্রতিভার কোন ক্ষয় হয়নি। কারণ, তার মতে, প্রতিভা কখনও বয়সের ভারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। তাই শিল্পকে শিল্পী ছেড়ে যেতে পারেন না। তিনিও তা পারেননি। শিল্পকে ভালোবাসার কারণে, ভালোবাসার মানুষ সরে গেলেও তিনি শিল্পকে ছেড়ে যেতে পারেননি। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, শিল্পকে ভালোবেসেই শিল্পী অমরত্ব লাভ করতে পারে। কেননা, শিল্পর কোন বার্ধক্য নেই কোন একাকীত্ব নেই রোগ নেই এমন কি মৃত্যু ভয়ও নেই। আর এই শিল্পকে যে মানুষ ভালোবাসে তারও কোন বার্ধক্য বা মৃত্যু নেই নেই একাকীত্ব।
আলোচ্য উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় এই সত্যই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং আত্মবিশ্লেষণ করেছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন