অলৌকিক’ গল্পে হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানোর ঘটনাটি লেখক প্রথমে বিশ্বাস করেননি কেন? পরে কীভাবে সেই ঘটনা তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠল?
ক) ‘অলৌকিক’ গল্পে হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানোর ঘটনাটি লেখক প্রথমে বিশ্বাস করেননি কেন? — ২০১৮
খ) পরে কীভাবে সেই ঘটনা তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠল? — ২০১৮
‘অলৌকিক’ গল্পে হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানোর ঘটনাটি লেখক প্রথমে বিশ্বাস করেননি কেন? |
ক) অলৌকিক ঘটনা অবিশ্বাসের কারণ :
আলোচ্য প্রশ্নে হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানোর ঘটনাটি কর্তার সিং দুগালের লেখা ‘অলৌকিক’ গল্পের অন্তর্গত। এই গল্পে গুরু নানকের শিষ্য মর্দনার জল তেষ্টা পায়। হাসান আবদালের জঙ্গলের কাছে দরবেশ বলী কান্ধারীর কাছে সে গুরু নানকের পরামর্শে জল চায়। কিন্তু কান্ধারী তা দেয় না। এক সময় গুরু নানক হাত দিয়ে একটা পাথর সরালে জলের ঝর্ণা বেরিয়ে আসে। একই সঙ্গে কান্ধারীর কুপের জল অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কান্ধারী একটা পাথরের চাঁই ছুঁড়ে দেয় গুরু নানকের দিকে। গুরু নানক হাত দিয়ে পাথরের চাঁইটি থামিয়ে দেন।
এই সব ঘটনার মধ্যে হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে মর্দানাকে রক্ষা করার ঘটনাটি লেখকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। কারণ, তাঁর যুক্তিবাদী চিন্তা এই ঘটনার মধ্যে কোন যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক কারণ খুঁজে পাননি।
খ) পরবর্তী সময়ে কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে?
কিন্তু এই ঘটনার কিছুদিন পর, লেখক তথা গল্পকথক তাঁর মায়ের বান্ধবীর কাছ থেকে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনার কথা জানতে পারেন।
একদিন দূরের শহরের ফিরিঙ্গিরা নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর গুলি চালায়। অসংখ্য মানুষ মারা যায়। কিছু মানুষকে তারা বন্দী করে ট্রেনে চাপিয়ে অন্য শহরের কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু এই বন্দীদের খাওয়া ও তৃষ্ণার জলের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে অনাহারে তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ার জোগাড় হয়।
এই খবর পেয়ে পাঞ্জা সাহেবের অধিবাসীরা বন্দী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য জল রুটির ব্যবস্থা করে। কিন্তু ফিরিঙ্গিরা বন্দী ভর্তি ট্রেনকে কোনো স্টেশনে থামার অনুমতি দেয়নি। এলাকার লোকজন ট্রেন থামানোর জন্য স্টেশন মাস্টারের কাছে আবেদন করে। কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি
অবশেষে পাঞ্জা সাহেবের অধিবাসীরা ট্রেন থামিয়ে বন্দিদের জল রুটি দেওয়ার জন্য এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করে। গুরু নানকের দেওয়া ‘জয় নিরঙ্কার’ ধ্বনি তুলে নারী পুরুষ বউ বাচ্চা সকলে মিলে ট্রেনলাইনের উপর শুয়ে পড়ে। প্রচন্ড গতিতে হুইসেল দিতে দিতে আসা ট্রেনের গতি কমে যায়। কিছু মানুষ ট্রেনের চাকায় কাঁটা পড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রেনটি থেমে যায়। এবং সকলকে অবাক করে দিয়ে সে পিছুতে থাকে।
এভাবে কিছু মানুষের জীবন দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার কাহিনী শোনার পর বক্তার (গল্পকথকের) মনে হল, প্রবল ইচ্ছা শক্তির জোরে চলন্ত ট্রেনকে থামানো সম্ভব হলে পাথরের চাঁইকেও থামানোর সম্ভব। এভাবেই গল্পকথকের গুরু নানক সম্পর্কে প্রচলিত গল্পের প্রতি অবিশ্বাস পরিবর্তিত হয়ে বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন