“গল্পটা মনে পড়লেই হাসি পেত।”
“গল্পটা মনে পড়লেই হাসি পেত”। ভারতীয় গল্প : অলৌকিক |
খ) গল্প মনে পড়লেই হাসি পেত কেন?
গ) এই গল্পের প্রতি বক্তার কীভাবে বিশ্বাস জন্মেছিল?
অথবা,
হাসি কীভাবে চোখের জলে পরিণত হয় তা লেখো।
ক) কোন্ গল্প স্মরণ করে হাসি পেত?
কর্তার সিং রচিত অলৌকিক গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই গল্পে বলি কান্ধারী নামে একজন দরবেশ ছিল। এই দরবেশ গুরু নানককে আঘাত করার জন্য পাহাড়ের উপর থেকে একটি পাথর গড়িয়ে দেন। গুরু নানক তখন অলৌকিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে ওই পাথরে স্পর্শ করার মাধ্যমে পাথরটিকে থামিয়ে দেন। যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখকের কাছে এই ঘটনাটি একটি হাস্যকর গল্প বলে মনে হয়েছিল। পরবর্তীতে এই গল্পটি স্মরণ করলেই তাঁর হাসি পেত।
খ) গল্প মনে পড়লেই হাসি পেত কেন?
সাধারণ বিজ্ঞান বলে, কোন বস্তু উঁচু থেকে গড়িয়ে নিচে আসতে শুরু করলে, বস্তুটির গতিবেগ ক্রমশ বাড়ে। গতি বাড়লেই তার আঘাত করার শক্তি বাড়ে। বলি কান্দারি যখন পাহাড়ের চূড়া থেকে পাথরের চাইটি ছুঁড়ে দেয়, তখন তার গতিবেগ ক্রমশ বাড়ার কথা এবং প্রচন্ড শক্তি উৎপন্ন হওয়ার কথা। এই অবস্থায় গুরু নানক তার হাতের ছোঁয়ায় পাথরটিকে থামিয়ে দিলেন। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই দাবি অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর লাগে। এবং এ কারণেই গল্পের কথাটি মনে পড়লেই গল্পকথক কর্তার সিং দুগগালের হাসি পেত।
গ) এই গল্পের প্রতি বক্তার কীভাবে বিশ্বাস জন্মেছিল?
অথবা,
হাসি কীভাবে চোখের জলে পরিণত হয় তা লেখো।
কিন্তু এই ঘটনার কিছুদিন পর, লেখক তথা গল্পকথক তাঁর মায়ের বান্ধবীর কাছ থেকে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনার কথা জানতে পারেন।
একদিন দূরের শহরের ফিরিঙ্গিরা নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর গুলি চালায়। অসংখ্য মানুষ মারা যায়। কিছু মানুষকে তারা বন্দী করে ট্রেনে চাপিয়ে অন্য শহরের কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু এই বন্দীদের খাওয়া ও তৃষ্ণার জলের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে অনাহারে তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ার জোগাড় হয়।
এই খবর পেয়ে পাঞ্জা সাহেবের অধিবাসীরা বন্দী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য জল রুটির ব্যবস্থা করে। কিন্তু ফিরিঙ্গিরা বন্দী ভর্তি ট্রেনকে কোনো স্টেশনে থামার অনুমতি দেয়নি। এলাকার লোকজন ট্রেন থামানোর জন্য স্টেশন মাস্টারের কাছে আবেদন করে। কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি
অবশেষে পাঞ্জা সাহেবের অধিবাসীরা ট্রেন থামিয়ে বন্দিদের জল রুটি দেওয়ার জন্য এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করে। গুরু নানকের দেওয়া ‘জয় নিরঙ্কার’ ধ্বনি তুলে নারী পুরুষ বউ বাচ্চা সকলে মিলে ট্রেনলাইনের উপর শুয়ে পড়ে। প্রচন্ড গতিতে হুইসেল দিতে দিতে আসা ট্রেনের গতি কমে যায়। কিছু মানুষ ট্রেনের চাকায় কাঁটা পড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রেনটি থেমে যায়। এবং সকলকে অবাক করে দিয়ে সে পিছুতে থাকে।
এভাবে কিছু মানুষের জীবন দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার কাহিনী শোনার পর বক্তার (গল্পকথকের) মনে হল, প্রবল ইচ্ছা শক্তির জোরে চলন্ত ট্রেনকে থামানো সম্ভব হলে পাথরের চাঁইকেও থামানোর সম্ভব। এভাবেই গল্পকথকের গুরু নানক সম্পর্কে প্রচলিত গল্পের প্রতি অবিশ্বাস পরিবর্তিত হয়ে বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়। এবং পাঞ্জা সাহেবের অধিবাসীদের আত্মত্যাগের এই গল্প লেখকের চোখে জল এনে দেয়। এক সময়ের হাসির বিষয় চোখের জলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
---------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন