“অমৃতের পুত্র মানুষ।”
অমৃতের পুত্র মানুষ |
খ) ‘অমৃতের পুত্র’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ) এই মানুষটির (অমৃতের পুত্র) বর্ণনা দাও।
ঘ) এই উক্তির মাধ্যমে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ) এই মানুষটির (অমৃতের পুত্র) বর্ণনা দাও।
ঘ) এই উক্তির মাধ্যমে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
অথবা,
এই উক্তির তাৎপর্য কী?
অথবা,
এই উক্তির মধ্য দিয়ে লেখকের কোন্ মনোভাব ফুটে উঠেছে?
ক) কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এর এই উক্তি?
সমাজ সচেতন প্রাবন্ধিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমার বাংলা’ প্রবন্ধ সংকলন থেকে নেওয়া ‘হাত বাড়াও’ রচনা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গ্রহণ করা হয়েছে।
এই প্রবন্ধে কথিত রাজবাড়ীর বাজার থেকে ফরিদপুরে ফেরার জন্য লেখক স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটু দূরে স্টেশনের রাস্তায় মিলিটারি ছাউনির পাশে একটা অদ্ভুত জন্তু দেখতে পান। অদ্ভুত এই জন্তু যেন চার পায়ে ভর দিয়ে এগিয়ে আসছে। আরো একটু এগিয়ে এলে তিনি দেখতে পান রাস্তার ধুলো থেকে সে কী যেন খুঁটে খাচ্ছে। ঠিক মানুষের হাতের মতো তার সামনের থাবা দুটো। আঙুলগুলো বড্ড বেশি সরু। গায়ে এক ফোটা লোম নেই। একটু পরে, সামনাসামনি আসতেই তিনি স্তম্ভিত হয়ে আবিষ্কার করেন —এটা কোন জন্তু নয়, একজন মানুষ।
এই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা এবং স্তম্ভিত হয়ে যাবার বিষয়টি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লেখক এই উক্তিটি করেছেন।
খ) ‘অমৃতের পুত্র’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
অমৃত হল ‘এমন পানীয়, যা পান করলে জীবের মৃত্যু হয় না’। এমনই মৃত্যুহীন প্রাণ বলতে বোঝানো হয় একমাত্র প্রজাপতি ব্রহ্মাকে। ভারতীয় পুরাণ শাস্ত্রমতে, এই মৃত্যুহীন ব্রহ্মা থেকেই মানুষের আবির্ভাব। তাই ‘অমৃতের পুত্র’ বলতে লেখক প্রজাপতি ব্রহ্মার উত্তর পুরুষ হিসেবে মানুষকেই বুঝিয়েছেন। সেই সঙ্গে স্তম্ভিত হয়ে ভেবেছেন, মৃত্যুহীন সত্তার এহেন সন্তান আজ ভয়ংকর অমানবীয় জীবন যাপন করছে কেন?
গ) এই মানুষটির (অমৃতের পুত্র) বর্ণনা দাও।
এই মানুষটি আসলে একটি ১২-১৩ বছরের উলঙ্গ কিশোর, যার অনাহারে থাকতে থাকতে মাজা পড়ে গেছে। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছে। হাঁটতে পারে না, তাই জন্তুর মতো চার হাত-পায়ে চলে। প্রথমে তাকে দেখে কোন জন্তু বলে মনে হয়েছিল লেখকের। কিন্তু চেনা কোনো জন্তুর সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাননি। পাতলা কুয়াশার মধ্যেও জ্বলজ্বল করছিল তার চোখ দুটো। লেখকের বর্ণনায়,
একা থাকলে ভয়ে মূর্ছা যেতাম। কেননা সেই চোখের দৃষ্টিতে এমন এক মায়া ছিল, যা বুকের রক্ত হিম করে দেয়।
তার আঙুলগুলো অসম্ভব সরু। দেখতে গায়ে লোমহীন কোনো অচেনা জন্তুর মতো। রাস্তার ধুলো থেকে সে মাটিতে পড়ে থাকা চাল আর ছোলা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। অবশেষে সামনাসামনি আসতেই তিনি স্তম্ভিত হয়ে আবিষ্কার করেন —এটা কোন জন্তু নয়; সে আসলে অমৃতের পুত্র মানুষ।
ঘ) এই উক্তির মাধ্যমে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
অথবা,
এই উক্তির তাৎপর্য কী?
অথবা,
এই উক্তির মধ্য দিয়ে লেখকের কোন্ মনোভাব ফুটে উঠেছে?
১২-১৩ বছরের এই অসহায় নিরন্ন উলঙ্গ ছেলেকে ‘অমৃতের পুত্র’ বলে লেখক আসলে আমাদের ধনবৈষম্যে ভরা সমাজের প্রতি কটাক্ষ করেছেন। অমৃতের পুত্র অর্থাৎ একই ব্রহ্মার সন্তান হয়েও কেউ বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে অতিমানবীয় জীবন যাপন করছে, কেউ আবার অমানবীয় জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার অসম্ভব ও অসম লড়াই চালাচ্ছে। স্তম্ভিত হয়ে লেখক তাই যেন প্রশ্ন তুলেছেন, এ কোন্ অমৃত, যা পান করে এমন অসহায় কিশোরের পৃথিবীতে আগমন!
আসলে লেখক এই উক্তির মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন এই আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের অবসান হোক। সমস্ত মানুষ মানুষের মর্যাদায় অমৃতের সন্তানের মতই বাঁচুক। এই কিশোরের জ্বলন্ত চোখে তিনি সেই আকুতিই দেখেছেন। দেখেছেন, এই অমানবিক পরিস্থিতির পিছনে যাদের হাত রয়েছে, সে চায়, তাদের শাস্তি হোক। যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের ঘনায়মান অন্ধকারেও তাই তার চোখ দুটো যেন পাহারা দিয়ে চলেছে এই সব খুনিদের এবং চেষ্টা করছে মাটি থেকে হাত দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে দু পায়ে দাঁড়াবার। মানুষ তার পাশে দাঁড়াক, হাত বাড়াক তার দিকে। এটাই লেখকের এই উক্তির তাৎপর্য।
----------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন