“ভারত জয় করেছিল তরুণ আলেকজান্ডার। / একলাই না কি?” — ২০১৯
ভারত জয় করেছিল তরুণ আলেকজান্ডার। / একলাই না কি? |
ক) আলেকজান্ডার কে ছিলেন?
খ) ‘একলাই না কি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
অথবা,
এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন আলোচনা করো।
গ) তাঁর ভারত জয় প্রসঙ্গ কবিতাটিতে কতটা প্রাসঙ্গিক হয়েছে?
ঘ) সম্পূর্ণ উক্তিটিতে কবির যে মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে তার পরিচয় দাও।
ক) আলেকজান্ডার কে ছিলেন?
বের্টোল্ট ব্রেখ্ট-এর লেখা ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এখানে পৃথিবী বিখ্যাত গ্রিক বীর আলেকজান্ডারকে উপলক্ষ করে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
আলেকজান্ডার (ইতিহাসে তৃতীয় আলেকজান্ডার নামে পরিচিত) ছিলেন প্রাচীন গ্রিক রাজ্য ম্যাসিডনের রাজা। ৩৫৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মাত্র বিশ বছর বয়সে তিনি তার পিতা দ্বিতীয় ফিলিপের স্থলাভিষিক্ত হন। ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে তিনি মিশর থেকে উত্তর পশ্চিম ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল এক সাম্রাজ্যের অধিপতি হন। এটা ছিল প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি জীবনের সবগুলো যুদ্ধে অপরাজিত ছিলেন এবং তাকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও সফল সেনানায়ক বিবেচনা করা হয়। ৩২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারত অভিযান অসমাপ্ত রেখে দেশে ফেরার পথে ব্যাবিলনে মারা যান। উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজা পুরুর সঙ্গে তার হিদাস্পিসের যুদ্ধ ভারত ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে।
খ) ‘একলাই না কি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
অথবা,
এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন আলোচনা করো।
‘একলাই না কি’ —এটা একটা প্রশ্ন বোধক বাক্যাংশ। এই প্রশ্নের মাধ্যমে কবি বিশ্ব ইতিহাসের বিবর্তনে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের অবদানের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করেছেন।
তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, দিগ্বিজয়ী ও সমর কুশলী বীর আলেকজান্ডার যে ভারত জয় করেছিলেন, তার কৃতিত্ব শুধু তাঁর নয়, তাঁর সঙ্গে আসা অসংখ্য রণকুশালী বীর সৈনিকেরও। অথচ এই সেনাবাহিনীর সদস্যদের কোন স্বীকৃতি থাকে না তথাকথিত ইতিহাসের পাতায়। কবির তাই মনে হয়েছে, প্রচলিত ইতিহাস সম্রাট বা ক্ষমতাবানদের প্রতি পক্ষপাতিত্তে এবং শ্রমজীবী মানুষের প্রতি উপেক্ষায় অসম্পূর্ণ হয়ে রয়েছে। বোঝাতে চেয়েছেন, এই ইতিহাসের পরিমার্জন ও পরিবর্তন দরকার এবং বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় শ্রমজীবী মানুষের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।
গ) তাঁর ভারত জয় প্রসঙ্গ কবিতাটিতে কতটা প্রাসঙ্গিক হয়েছে?
ভারতবর্ষ ছিল আলেকজান্ডারের বিশাল সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্ত। নিজ রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে যার দূরত্ব প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার। এত বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করা এবং দুই ভূখণ্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চল নিজ রাজ্যভুক্ত করার কাজটা মোটেই সহজ নয়, বরং খুবই দুরূহ। এই দুরূহ কাজ করতে তিনি সফল হয়েছিলেন কেবলমাত্র তাঁর বীর যোদ্ধাদের জীবন বাজি রাখার বিনিময়ে। অথচ ইতিহাসের পাতায় অমরত্ব পেয়েছেন কেবলমাত্র আলেকজান্ডার। কবির মতে, এটা শ্রমজীবী মানুষের প্রতি উপেক্ষা এবং আলেকজান্ডারের প্রতি পক্ষপাতিত্বের শামিল। মূলত শ্রমজীবী মানুষের এই দুরূহ পরিশ্রমের মাত্রা বোঝাতে এবং এ বিষয়ে স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে ভারত জয়ের বিষয়টা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
ঘ) সম্পূর্ণ উক্তিটিতে কবির যে মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে তার পরিচয় দাও।
[এই অংশের উত্তর ‘খ’ এবং ‘গ’ অংশের উত্তরের সমন্বয়ে লিখতে হবে। নিজে লেখার চেষ্টা করো।
অথবা
নিজের অংশটি খাতায় লিখে নাও।]
সম্পূর্ণ উক্তিটির মাধ্যমে কবি মানব সভ্যতার ক্রম বিবর্তনের ইতিহাসে শ্রমজীবী মানুষের যে অতুলনীয় অবদান রয়েছে, তার স্বীকৃতি জানিয়েছেন। তথাকথিত মানব ইতিহাসে যার স্বীকৃতি নেই। নিজ রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। এত বিশাল ও বিস্তৃত ভূখন্ড নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করার কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। মাত্র ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এত বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হওয়া সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র তার সহযোগী বীর যোদ্ধাদের জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ একা আলেকজান্ডার এর পক্ষে এই দুরহো কাজ করা কখনোই সম্ভব হতো না। আর এ কথা মাথায় রেখেই তিনি এক মোক্ষম প্রশ্ন তুলেছেন ‘একলাই না কি?’ বাক্যাংশ ব্যবহারের মাধ্যমে।
এভাবে সমগ্র উক্তিটির মাধ্যমে কবি আসলে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের অবদানের স্বীকৃতি আদায়ের দাবি তুলেছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন