“বইয়ে লেখে রাজার নাম। / রাজারা কি পাথর ঘাড়ে করে অনত?” — ২০১৭
বইয়ে লেখে রাজার নাম / রাজারা কি পাথর ঘাড়ে করে আনত? |
খ) কারা পাথর ঘাড়ে করে আনতো? — ২০১৭
গ) তারা কেন পাথর ঘাড়ে করে এনেছিল? — ২০১৭
ঘ) কাদের কথাই বা এই বইয়ে লেখা থাকে এবং কেন?
ঙ) এই বইয়ে কাদের কথা লেখা উচিত এবং কেন?
ক) এখানে কোন্ বইয়ের কথা বলা হয়েছে?
উদ্ধৃত অংশটি কবি বের্টোল্ট ব্রেখ্ট-এর ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে প্রাচীন মিশরের সাত দরজা ওয়ালা থিমস নগরের কথা আছে। এই নগরী দরিদ্র লাঞ্ছিত শ্রমজীবী মানুষের হাড়ভাঙ্গা কায়িক শ্রমের বিনিময়ে গড়ে উঠেছিল। অথচ ইতিহাস তাদের মনে রাখেনি। উদ্ধৃত অংশে এই থিবস নগরী গড়ে ওঠার ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে।
খ) কারা পাথর ঘাড়ে করে আনতো? — ২০১৭
প্রাচীন মিশরের থিবস নগরের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সেখানকার শ্রমজীবী মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ভূমিকাই ছিল প্রধান। কারণ, তারাই পাথর ঘাড়ে করে বয়ে এনে এই নগরী গড়ে তুলেছিলেন।
গ) তারা কেন পাথর ঘাড়ে করে এনেছিল? — ২০১৭
শ্রমই সম্পদের মূল চাবিকাঠি। শ্রমিকের শ্রমেই মূল্যহীন বস্তু সম্পদে পরিণত হয়। অর্থাৎ তা ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায়, ব্যাবিলন থেকে চীনের প্রাচীর, সর্বত্রই রয়েছে শ্রমের বাহাদুরি। প্রাচীন মিশরের শ্রমজীবী মানুষ নিজেদের মেহনত দিয়েই তিলে তিলে গড়ে তুলেছিল সাত তোরণ বিশিষ্ট নগর রাষ্ট্র থিবস। কবি বের্টোল্ট ব্রেখ্ট-এর উচ্চারণে, তাই শ্রমজীবী মানুষের প্রশ্ন,
বইয়ে লেখে রাজার নাম
রাজারা কি পাথর ঘাড়ে করে আনত?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, রাজারা নয়, এইসব যুগান্তকারী ইমারত কিংবা সৌধ তৈরির জন্য শ্রমজীবী মানুষরাই পাথর ঘাড়ে করে এনেছিল। উদ্দেশ্য, মানব সভ্যতাকে তিলে তিলে উন্নত থেকে উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া। মূলত এই উদ্দেশ্যেই মিশরের শ্রমজীবী মানুষ প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রের অনুকরণে থিবস নগর গড়ে তোলার জন্য পাথর ঘাড়ে করে এনেছিল।
ঘ) কাদের কথাই বা এই বইয়ে লেখা থাকে এবং কেন?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মানব সভ্যতার এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে তাদের কথা ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় না। স্থান পায় শ্রমবিমুখ উঁচু তলার মানুষ যারা সুকৌশলে শ্রমজীবী মানুষের শ্রমকে কুক্ষিগত করে এবং নিজের নামে তা পরিচালনা করে।
আর এ কারণেই ইতিহাসের প্রকৃত কারিগর উপেক্ষিত থেকে যায় আর ইতিহাসের পাতায় সাড়ম্বরে উপস্থিত হয় রাজা-বাদশা সহ সমাজের উঁচু তলার উচ্চবিত্ত মানুষেরা। তাদের গৌরব গাথা তাদের নিয়ন্ত্রণে লেখা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকে।
ঙ) এই বইয়ে কাদের কথা লেখা উচিত এবং কেন?
কবি বের্টোল্ট ব্রেখ্ট-এর মতে এই ইতিহাস বইতে লেখা উচিত শ্রমজীবী মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে তৈরি হওয়া সভ্যতার গঠনকাহিনী। লেখা উচিত তাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা। কারণ শ্রমিকের শ্রমই সম্পদের প্রকৃত জন্মদাতা। সভ্যতার ইমারত তাদের কাঁধে ভর করেই মাথা তোলে। শাসকের যাবতীয় বিজয়েরথ তাদের টানেই গড় গড়িয়ে এগোয়ে উচ্চ থেকে উচ্চতর লক্ষ্যে। আর এ কারণেই ইতিহাসের পাতায় শ্রমজীবী মানুষের গৌরব গাথাই লেখা উচিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন