সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পরিবেশ দূষণের কারণ ও তার প্রতিকার

পরিবেশ দূষণের কারণ ও তার প্রতিকার

পরিবেশ দূষণ ঃ

প্রাকৃতিক কারণে অথবা মানুষের কার্যকলাপে উদ্ভূত দূষিত পদার্থ পরিবেশকে বিষময় করে তোলে। পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান, যেমন মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব পরিবর্তন ঘটে যা জীবজগতের উপর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। এটিকে পরিবেশ দূষণ বলে। 

পরিবেশ দূষণের কারণ ঃ

১। জনসংখ্যা বৃদ্ধি : 

ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনজঙ্গল কেটে বসতবাড়ি তৈরি করা হয়। ফলে বৃষ্টিপাত কমে, স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে কলুষিত হয়, অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে অধিক কীটনাশক ও সার ব্যবহার করতে হয়। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।

২। নগরায়ন :

নগরায়নের ফলে কলকারখানা ও গাড়ি বাড়ছে। ফলে কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণের সৃষ্টি করছে। গাড়ির হর্ণ থেকে শব্দ দূষণ হচ্ছে। আবার নদীর পানিতে কলকারখানার আবর্জনা মিশে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।

কাজের আশায়  শহরে এলে বস্তি গড়ে উঠে। এই বস্তিতে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা ও ময়লা-আবর্জনা ফেলার অব্যবস্থা ও সচেতনতার অভাব পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। 

৩। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যা :

সমগ্র বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দুই মেরুর  বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। 

এছাড়া খরা, নদীর প্রবাহ হ্রাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, পানযোগ্য জলের অভাব, মৎস্যসম্পদ ধ্বংস, ফসল উৎপাদন হ্রাস, ভূমিকম্প ইত্যাদি ভয়াবহ দুর্যোগে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

৪। বনজ সম্পদ ধ্বংস :

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নগরায়ণ, শিল্পায়ন, জ্বালানি সংগ্রহ ও কৃষিজমি সম্প্রসারণের ফলে, জ্বালানি, বাড়িঘর, আসবাবপত্র নির্মাণ ইত্যাদি প্রয়োজনে ব্যাপকহারে বনজ সম্পদ উজাড় হচ্ছে। ফলে ভূমিক্ষয় হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

৫। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন

অপরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন, যেমন খাদ্যসামগ্রী তৈরির কারখানার পাশে সার ও কীটনাশক তৈরি কারখানা হলে পানি ও বায়ু দূষণ ঘটে। জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে।

৬। অপরিকল্পিত বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন

শিল্পকারখানা, আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সেগুলো মাটিতে শোষিত হচ্ছে বা পার্শ্ববর্তী জলাধারে গিয়ে পড়ছে, ফলে মাটি ও জল দূষিত হচ্ছে।

৭ । নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট :

নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হওয়ার ফলে বৃষ্টির পানি সরে যেতে পারে না, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, ফলে পরিবেশ দূষিত হয়।

৮। ইটভাটা :

নগরায়নকে কেন্দ্র করে কোনো নিয়মনীতি ছাড়া এদেশে অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইটভাটায় কাঠ ব্যবহারের ফলে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে এবং ইট পোড়ানোর ফলে বায়ুতে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৯। অচল ও অধিক যানবাহন ব্যবহার

অচল ও অধিক যানবাহন ব্যবহারের ফলে অধিক জ্বালানি ব্যবহৃত হলে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ সৃষ্টি হয়।

১০। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার :

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে কৃষি কাজে অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে, ফলে মাটি ও বায়ুদূষণ ঘটছে।

১১। ভূমি ক্ষয়

নগরায়ন, পাহাড় কাটা, জলাশয় থেকে নুড়ি-বালু, পাথর উত্তোলন, বনজ সম্পদ ধ্বংস ইত্যাদি কারণে ভূমিক্ষয় হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে।

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ ঃ

নিচে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের সম্ভাব্য উপায়সমূহ উল্লেখ করা হলো।

১। জোরালো প্রচার :

দেশের আপামর জনসাধারণকে পরিবেশ দূষণের কারণ ও তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সজাগ করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে, যেমন- রেডিও-টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সেমিনারের মাধ্যমে জোরদার প্রচার চালানো। 

২। পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তি :

শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে 'পরিবেশ দূষণ'কে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারিভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

৩। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড :

দেশের প্রতিটি প্রশাসনিক ইউনিটে 'পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গঠন করে সামাজিক সংগঠনসমূহ যাতে প্রতি মাসে অন্তত একটি সেমিনার আয়োজন করে সচেতনতা বারান দরকার।

৪। জমি জরিপ শিল্পের অনুমোদন:

দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রাক্কালে যথাযথ জরিপ ও উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সুপারিশ গ্রহণের বিধান বাধ্যতামূলক করা।

৫। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা :

জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের সর্বত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকার জন্য এদের কার্যকলাপের মূল্যায়ন সাপেক্ষে উৎসাহজনক পুরস্কারের ব্যবস্থা করা।

৬। বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ :

পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার সর্বোত্তম হাতিয়ার হচ্ছে দেশের সর্বত্র প্রচুর গাছপালা লাগানো ও বনভূমির নির্বিচার নিধন রোধে আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ। 

৭। আবাসিক এলাকার বাইরে শিল্প :

নগরীর আবাসিক এলাকার বাইরে শিল্প কারখানা স্থাপন করা গেলে এই সমস্যার অনেকাংশে সমাধান পাওয়া যাবে।

৮) বস্তিবাসীর পুনর্বাসন:

সর্বোপরি বস্তি এলাকার অধিবাসীদেরকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পুনর্বাসন করতে হবে, তা না হলে শহর ও নগরসমূহ দূষণমুক্ত হবে না।

৯। দূষিত পদার্থের নিরপেক্ষকরণ :

বায়ুদূষণ হতে পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে দূষিত পদার্থ নির্গত হওয়ার সময় এতে এমন পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে দিতে হবে যাতে এরা বায়ুকে দূষিত করার পূর্বেই নিরপেক্ষ (neutral) হয়ে যায়।  জাপান এসিড বৃষ্টি প্রতিরোধকল্পে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে সফলতা লাভ করেছে।

১০। ধোঁয়া রোধক যন্ত্র :

সীসামুক্ত পেট্রোল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, মটরযানে নির্গত ধোঁয়া ও বিকট শব্দের জন্য নিরোধক যন্ত্র লাগান দরকার। এভাবে হাইড্রলিক হর্ণের পরিবর্তে শব্দ দূষণরোধে মিউজিক হর্ণ ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।

১১। কৃষিতে জৈবিক পদ্ধতি প্রয়োগ :

পানিকে দূষণের হাত হতে রক্ষা করার জন্য ফসল ক্ষেতে কীটনাশক ও আগাছানাশক ঔষধের ব্যবহার কমিয়ে জৈবিক (Biological) পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

১২। পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার উন্নতি :

দেশের নগরসমূহের পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, পৌর আবর্জনা ও জঞ্জাল স্থানান্তর এবং পরিষ্কারের জন্য আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ, শহর এলাকার নালা-নর্দমার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি কড়াকড়ি আরোপ ও নজরদারীর জন্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা যায়।

ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা ঃ

দূষণমুক্ত পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র সমাজ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিম্নলিখিত করণীয় বিষয়ে পরিবারকে নির্দেশনা দিতে পারে :

ক) ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ :

১. পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা। পরিবারের প্রতিদিনের বর্জ্য বা ময়লা যেন পরিবেশ দূষণ না করে, এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের সচেতন করতে হবে। 
২. প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ
৩. ক্ষতিকর সিনথেটিক বর্জন। যেসব আবর্জনা বিনষ্ট হয় না তা কম ব্যবহার করা। যেমন-প্লাস্টিকের ব্যাগ
৪. নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার
৫. উন্নয়ন ও দূষণমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার। মশা, মাছি, ইঁদুর, তেলাপোকা নিধনে ডি.ডি.টি পাউডার, কয়েল, এ্যারোসোল ইত্যাদির ব্যবহার কমাতে হবে। রাসায়নিক দ্রব্য কম ব্যবহার করা। 
৬. গাছ লাগানো। বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ যেন ঠিক থাকে সেজন্য ছোট বড় গাছপালা রোপণ করতে হবে।
৭. টেলিভিশন ও ক্যাসেট প্লেয়ার জোরে না বাজানো
৮) পরিকল্পিত পরিবার গড়ে তুলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে হবে।
৯) নিজের চাওয়াকে ত্যাগ করে সমাজের কল্যাণকে গুরুত্ব দেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। ধূমপানের অভ্যাস না করা।
১০) পরিবারে গাড়ি থাকলে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে যেন গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত না হয়।
১১) সর্বোপরি দূষণমুক্ত পরিবেশ রক্ষার সুষ্ঠুনীতি ও আইন ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।

সমষ্টিগত উদ্যোগ গ্রহণ :

উপরোক্ত বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ সমষ্টিগতভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে।
এই সব বিষয়ে ১) আলোচনা সভা, ২) পথনাটিকা, ৩) ব্যানার ও পোস্টার লাগানো, ৪) বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার চালানো, নিজ নিজ বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নির্মল বিদ্যালয় প্রকল্পে অংশগ্রহণ ইত্যাদি।

উপসংহার :

সুতরাং  স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ বিষয়ে শিক্ষা ও জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ হল গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের বিশেষ করে ছাত্র সমাজের মধ্যে যথাযথ সচেতনা সৃষ্টি ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। সরকার ও জনগণের মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কার্যক্রম সফল হওয়া সম্ভব।



মন্তব্যসমূহ

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি - সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

প্রবন্ধ রচনা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে একজন মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। শিক্ষাজীবন : মধুসূদন দত্ত শিক্ষা গ্রহণ পর্ব শুরু হয় মায়ের তত্ত্বাবধানে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায়। পরে সাত বছর বয়সে কলকাতা আসেন এবং খিদিরপুর স্কুলে দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।  এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী জীবনে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে।  এই উদ্দেশ্যেই ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি খ্রিস্ট...

কবিতা 'মহুয়ার দেশ' - কবি সমর সেন

কবিতা : মহুয়ার দেশ কবিতা : 'মহুয়ার দেশ কবি : সমর সেন ১ মাঝে মাঝে সন্ধার জলস্রোতে পলাশ সূর্য দেয় এঁকে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ, আর আগুন লাগে জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায়। সেই উজ্জ্বল স্তব্ধতায় ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে শীতের দুঃস্বপ্নের মতো। অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ, সমস্তক্ষণ সেখানে পথের দুধারে ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য, আর দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে। আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল নামুক মহুয়ার গন্ধ।                                             ২                                             এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে                                    ...

প্রবন্ধ : ভগিনী নিবেদিতা

ভগিনী নিবেদিতা ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে ভগিনী নিবেদিতার নাম। পৈত্রিক সূত্রে তিনি ছিলেন স্কচ। আধুনিক ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী ও ধর্মনেতা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভারতবর্ষে আসেন। ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা নেন। ভারতে সমাজ সেবা ও নারী শিক্ষার প্রসারেও নিবেদিতার ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জন্ম ও বংশ পরিচয় : ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল ছিলেন ধর্মযাজক। মায়ের নাম মেরি ইসাবেলা। মাত্র দশ বছর বয়সে মার্গারেটের বাবা মারা যান। তারপর তাঁর দাদামশাই তথা আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী হ্যামিলটন তাঁকে লালনপালন করেন। শিক্ষাজীবন : মার্গারেট লন্ডনের চার্চ বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর হ্যালিফ্যাক্স কলেজে তিনি ও তাঁর বোন মেরি পড়াশোনা করেছিলেন। কর্মজীবন : ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে, সতেরো বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে মার্গারেট শিক্ষিকার পেশা গ্রহণ করেন। দু’বছরের জন্যে কেসউইকের একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ান। এরপরে একে ...

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি । প্রশ্ন ও উত্তর

বাংলা বই - দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চমাধ্যমিক 'বাংলা বই'য়ে👨তোমাকে স্বাগত 💁 তোমার প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরটি পেতে ওপরের মেনু বারের বিষয় মেনুতে ক্লিক করো । গল্পের প্রশ্ন চাইলে ‘ গল্পের  প্রশ্ন’  ট্যাবে , কবিতার প্রশ্ন চাইলে ‘ কবিতার প্রশ্ন’ ট্যাবে ক্লিক করো ।  এভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ের  ট্যাবে  ক্লিক করে প্রশ্নের পাতায় যাও। সেখানে দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রশ্ন ও উত্তর খোঁজ। অথবা নিচের প্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক করো। সকলের জন্য শুভকামনা রইল। বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো। ১)  দ্বাদশ শ্রেণির গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ২)  দ্বাদশ শ্রেণির কবিতা 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৩)  দ্বাদশ শ্রেণির নাটক 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৪)  আন্তরজাতিক কবিতা ও ভারতীয় গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৫)  দ্বাদশ শ্রেণির পূর্নাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ  👉  প্রশ্ন ও উত্তর ৬)  দ্বাদশ শ্রেণির শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৭)  দ্বাদশ শ্রেণির ভাষা বিভাগ 👉   প্রশ্ন ও উত্তর   ৮)  দ্বাদ...

নানা রঙের দিন নাটকের মঞ্চ সজ্জার বিবরণ ও নাটকটির নামকরণের সার্থকতা

‘নানা রঙের দিন’ নাটকের সূচনায় মঞ্চসজ্জার যে বর্ণনা আছে তা নিজের ভাষায় লেখো। নাটকটির নামকরণ কতখানি সার্থক তা আলোচনা করো। — ২০২০ নানা রঙের দিন নাটকের মঞ্চ সজ্জার বিবরণ ও নাটকটির নামকরণের সার্থকতা ভূমিকা : রুশ নাট্যকর অন্তন চেখভের ‘সোয়ান সং’ একাঙ্ক নাটক অবলম্বনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেন ‘নানা রঙের দিন’ নামক একটি নাটক। এই নাটকের শুরুতে নাটকটির অভিনয়ের জন্য একটি মঞ্চ সাজ্যার বিবরণ পাওয়া যায়। মঞ্চ সজ্জার বিবরণ : এই নাটক অভিনয়ের জন্য যে মঞ্চসজ্জার বিবরণ পাওয়া যায় তার পরিসর অত্যন্ত সীমাবদ্ধ ও ক্ষুদ্র। পেশাদারী থিয়েটারের ফাঁকা মঞ্চের পিছনের দিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একটি মাত্র দৃশ্যপট। যেখানে রয়েছে রাতে অভিনীত নাটকের জিনিসপত্র আর যন্ত্রপাতি, মঞ্চের মাঝে রয়েছে একটি উল্টানোর টুল, আর চারিদিকে রাত্রির গাঢ় অন্ধকার। আর রয়েছে একটি মোমবাতি হাতে হাসিমুখে রজনীকান্ত নামক চরিত্রের মঞ্চে উপস্থিতি। নামকরণের সার্থকতা : প্রশ্নের এই অংশের উত্তরের জন্য নিচের প্রশ্নটির উত্তর দেখাও। এবং সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করো। 👁️‍🗨️  ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটির নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো ।

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান্ — অতুল প্রসাদ সেন  ভূমিকা : জাতীয় সংহতি হল একটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি সাধারণ পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা। এর অর্থ হল, আমাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও, আমরা এই সত্যকে স্বীকার করি যে, আমরা সবাই এক। এটি কেবল একটি জাতীয় অনুভূতি নয়, এটা সেই চেতনা যা সমস্ত উপভাষা ও বিশ্বাসের মানুষকে একই প্রচেষ্টায় একত্রিত করে। জাতীয় একীকরণের সংজ্ঞা: ডাঃ এস. রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, national integration cannot be made by bricks and mortar, mould and hammer, but it quietly grows in people’s minds through education.1️⃣ এইচ এ গণি সংজ্ঞায়িত করেছেন, “National integration is a socio-psychological and educational process through which a feeling of unity and harmony develops in the hearts of the people and a sense of common citizenship or feeling of loyalty to the nation is fostered among them”2️⃣ এককথায়, জাতীয় সংহতির ধারণার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্...

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার : ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক ছোটগল্প হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটি কতটা সার্থক হয়েছে আলোচনা করো। ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক 👉 ভূমিকা : ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্ত সহজ সরল, ........ অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। কথাগুলো বলেছিলেন বাংলা ছোটগল্পের সার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিতার ছন্দে বলা এই অংশতেই রয়েছে সার্থক ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যে র যথাযথ বিবরণ। এডগার অ্যালান পো -এর মতে, যে গল্প অর্ধ থেকে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে। ছোটগল্পে জীবনের সামগ্রিক দিকটি উপন্যাসের মতো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত না হয়ে, তার খণ্ডাংশ নিয়ে পরিবেশিত হয়। এজন্য ছোটগল্প যথাসম্ভব বাহুল্যবর্জিত, রসঘন ও নিবিড় হয়ে থাকে। সংগত কারণেই এতে চরিত্রের সংখ্যা হয় খুবই সীমিত। ছোটগল্পের প্রারম্ভ ও প্রাক্কাল সাধারণত এবং খানিকটা নাটকীয়ভাবেই শুরু হয়। 👉   ছোটগল্পের বৈশ...

নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ

নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ  নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্প অবলম্বনে নিখিল চরিত্রের বিশ্লেষণ করো। নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ সূচনা : মার্কসবাদী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে নিখিল একজন সহযোগী চরিত্র। সম্পর্কে কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু। কথকের বর্ণনায় সে একজন ‘রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু অলস প্রকৃতির লোক’। বন্ধু বৎসল মানুষ : তবে নিখিল অত্যন্ত বন্ধুবৎসল মানুষ। তাই সে মৃত্যুঞ্জয়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে তার ভাবনায় অসঙ্গতি কোথায়। শুধু তাই নয়, নানাভাবে সে মৃত্যুঞ্জয় ও তার পরিবারের পাশে থাকে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আন্তরিক ও মানবিক : নিখিল আবেগ অনুভূতিহীন মানুষ নয়। নিরন্ন মানুষের অসহায় মৃত্যু এবং কিছু না করতে পারার যন্ত্রণায় যখন মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করে ওঠে, তখন নিখিলের মনটাও খারাপ হয়ে যায়। মানুষের প্রতি আন্তরিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের কারণেই সে প্রতি মাসে তিন জায়গায় নিয়মিত অর্থ সাহায্যও পাঠায়। যুক্তিবাদী চিন্তা: তবে নিখিল অত্যন্ত যুক্তিবাদী। সে জানে, রিলিফ মানে আসলে একজন...

মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ

মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় এর চরিত্র আলোচনা কর মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ 👉 ভূমিকা : সমাজ সচেতন কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ছোটগল্প ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’। ১৯৪৩ সালের ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তিনি রচনা করেছেন এই গল্প। গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দিয়ে এঁকেছেন একের পর এক দৃশ্যপট। এই দৃশ্যপটগুলো বিশ্লেষণ করলেই ধরা পড়ে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ। 👉  মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র 👉 মানব দরদী মন : শহর কলকাতায় অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎই একদিন মৃত্যুঞ্জয় ‘অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য’ প্রত্যক্ষ করে। মানুষের এই মৃত্যুবরণ তার দরদি মনের গভীরে তৈরি করে অপূরণীয় ক্ষত। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। 👉 পরোপকারী ইচ্ছা শক্তি : এদিকে, কীভাবে এই মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা যাবে, সেই ভাবনায় তার হৃদয়মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে, খাওয়া-ঘুম ছুটে যায়। সিদ্ধান্ত নেয়, নিজের সর্বস্ব দিয়ে এই মৃত্যুর বিরুদ্ধে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। 👉 আবেগপ্রবণ : মৃত্যুঞ্জয়ের মন...

রচনা : মৃণাল সেন

প্রবন্ধ রচনা : মৃণাল সেন ভূমিকা : মৃণাল সেন ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে এক বন্ধনীতে উচ্চারিত হতো তার নামও। জন্ম ও শিক্ষাজীবন :  মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম । এখানেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। এর পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাথমিক কর্ম :  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি সাংবাদিকতা, ওষুধ বিপণনকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন। চল্লিশের দশকে মৃণাল সেন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসেবেও কাজ শুরু করেন। রাজনৈতিক দর্শন :  আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী মৃণাল সেন দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসেবে ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য হন। ছবি পরিচালনা : বাংলা, ওড়ইয়আ, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র পরিচালনা করে তিনি বহুভাষিক চিত্র পরিচালক হিসেবে খ্যাতি...